দেশজুড়ে

রওশন এরশাদের ‘সুন্দর মহলে’ রেস্তোরাঁ নির্মাণের চেষ্টা, ভাঙচুর

রওশন এরশাদের ‘সুন্দর মহলে’ রেস্তোরাঁ নির্মাণের চেষ্টা, ভাঙচুর

ময়মনসিংহে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের স্ত্রী রওশন এরশাদের বাড়ি ‘সুন্দর মহলে’ ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। সেখানে ‘কুটুমবাড়ি রেস্টুরেন্ট’ নামে একটি রেস্তোরাঁ নির্মাণের প্রতিবাদের এ ভাঙচুর চালানো হয়।

Advertisement

বৃহস্পতিবার (১৫ মে) বিকেল ৩টার দিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীসহ ক্ষুব্ধ জনতা ভাঙচুর চালায়।

এতে নেতৃত্ব দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ময়মনসিংহ মহানগর শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক ওয়ালিউল্লাহ ওলি, ছাত্রনেতা জি কে ওমর, আব্দুল আলীমসহ সংগঠনের নেতাকর্মীরা।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ময়মনসিংহ মহানগর শাখার ফুয়াদ খান জাগো নিউজকে বলেন, ভাঙচুরের সময় আমি নগরীর জয়নুল আবেদীন উদ্যানে একটি কর্মসূচিতে ছিলাম। তবে আমাদের কিছু নেতাকর্মী ও জনতা ক্ষুব্ধ হয়ে ভাঙচুর চালিয়েছে। কারণ জাতীয় পার্টি বিগত সময়ে দালালি করেছে। ফলে সব শ্রেণি-পেশার মানুষ তাদের প্রতি ক্ষিপ্ত।

Advertisement

বক্তব্য জানতে কুটুমবাড়ি রেস্টুরেন্টের মালিক বজলুর রহমান মিন্টুর মোবাইল নম্বরে একাধিকবার যোগাযোগ করেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। জাগো নিউজের পরিচয় দিয়ে তার নম্বরে ক্ষুদে বার্তা পাঠালেও সারা মেলেনি।

‘সুন্দর মহলে’র কেয়ারটেকার মোখলেছুর রহমান বলেন, হঠাৎ করে লোকজন গেটের ভেতর প্রবেশ করে। পরে নতুন নির্মাণ করা ইটের দেওয়াল ভেঙে ফেলা হয়। আসবাবপত্রও ভাঙচুর করা হয়েছে।

এর আগে চলতি বছরের ২০ মার্চ ‘রওশন এরশাদের সুন্দর মহল হবে রেস্তোরাঁ’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ করে জাগো নিউজ।

এতে উল্লেখ করা হয়, ‘সুন্দর মহল’ নামের ভবনটি রওশনের ভাইয়ের কাছ থেকে বজলুর রহমান মিন্টু নামের একজন ভাড়া নেন। তার ‘কুটুমবাড়ি রেস্টুরেন্ট’ নামের তিনটি রেস্তোরাঁ রয়েছে। একটির অবস্থান ঢাকায়, একটি ময়মনসিংহ সদরের দাপুনিয়ায় ও ফুলবাড়িয়া উপজেলার পৌর শহরে। সুন্দর মহলে এটি তার চতুর্থ শাখা। ভবনের সবকিছু পরিষ্কার করিয়েছেন বজলুর রহমান মিন্টু। এখানে কেয়ারটেকার হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন মোখলেছুর রহমান। তিনিই ভবনটির সবকিছু দেখভাল করেন।

Advertisement

এরপরই এটি নজরে আসে মানুষের। সবমহলে শুরু হয় আলোচনা। এরপর ২৩ এপ্রিল দুপুরে ময়মনসিংহ শহরের ফায়ার সার্ভিস রোডে অবস্থিত ভবনটির সামনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার ব্যানারে মানববন্ধন করা হয়। পরে তারা জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি দেন।

এসময় রেস্তোরাঁ করতে না দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়ে সুন্দর মহলকে ‘দালাল মহল’ করার দাবি জানান ছাত্র-জনতা।

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, ফ্যাসিস্টদের ‘সহচর’ রওশন এরশাদের সুন্দর মহলকে বাণিজ্যিক ভবন হিসেবে ব্যবহার করতে দেওয়া হবে না। তারা এ ভবনটিকে রেস্টুরেন্টের কাছে ভাড়া দিয়েছে। জাতীয় পার্টির নেতারা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে আওয়ামী লীগ সরকারকে ‘গণহত্যায়’ পুরোপুরি সমর্থন দিয়েছে। এখন তারা নিজেদের বাঁচাতে সুশীলের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। এই সুশীলতার আড়ালে তারা আওয়ামী লীগকেই পুনর্বাসন করতে চায়।

দেশের রাজনৈতিক ইতিহাস ও ঐতিহ্যের অন্যতম সাক্ষী এই ভবন। ভবনটি নগরীর ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে অবস্থিত সুতিয়াখালি গ্রামে অবস্থিত। এটি প্রয়াত রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের স্ত্রী বেগম রওশনের।

সুন্দর মহলের সঙ্গে ছিল জাতীয় পার্টির রাজনৈতিক কার্যালয়। পরে কার্যালয়টির অস্তিত্ব হারিয়ে যায়। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার দেশত্যাগের পর সুন্দর মহল ‘দালাল মহল’ আখ্যা দিয়ে হামলা ও ভাঙচুর চালায় বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা।

এরপর ৩১ অক্টোবর রাতে নগরীর টাউন হল মোড় থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে রওশন এরশাদের বাসভবন সুন্দর মহল ও জাতীয় পার্টির কার্যালয় ঘেরাও করে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। একই সঙ্গে সুন্দর মহলের সামনের সড়কে টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেন তারা। এসময় সুন্দর মহলকে ‘জাতীয় দালাল মহল’ আখ্যা দিয়ে জাতীয় পার্টির বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্লোগান দেওয়া হয়।

এছাড়া তারা ময়মনসিংহে জাতীয় পার্টির সব কার্যক্রম প্রতিহত করার ঘোষণা দেন। সুন্দর মহল লেখাটি এখনো থাকলেও সঙ্গে ‘দালাল মহল’ লিখে সাইনবোর্ড টানিয়ে রাখে ছাত্র-জনতা।

কামরুজ্জামান মিন্টু/জেডএইচ/জিকেএস