মতামত

ঢাকা আমার ঢাকা

ঢাকা আমার ঢাকা

ঢাকার ইতিহাস প্রায় চারশ বছরের। মোগল আমল ছাড়াও চারবার এই শহর রাজধানীর মর্যাদা লাভ করে। সেই সময় ঢাকা ছিল এক নয়নাভিরাম নগরী। নাগরিক অনেক সুযোগ সুবিধাই অবারিত ছিল। বুড়িগঙ্গার তীরে বেড়ে ওঠা ঢাকা নগরী এখন স্বাধীন বাংলাদেশের রাজধানী। একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের রাজধানীর মর্যাদা লাভের পর ঢাকার যে সমৃদ্ধি হওয়ার কথা ছিল আকারে তা হলেও নাগরিক সুযোগ-সুবিধা এবং শিল্পিত মানের দিক থেকে তা হয়নি। বরং বেড়ে ওঠা ঢাকা যেন ক্রমেই ইট-কাঠ পাথরের জঙ্গলে পরিণত হয়েছে। প্রাকৃতিক এবং মনুষ্যসৃষ্ট বিভিন্ন দৈব দুর্বিপাকে নগরবাসী হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে তারা কী এক ভয়ানক অবস্থার মধ্যে আছে। অথচ একবিংশ শতাব্দীতে উন্নত নগরায়ণ মানুষের প্রত্যাশার কেন্দ্রবিন্দুতে। জীবনযাত্রার অনিবার্য প্রয়োজনে মানুষ এখন নগরমুখী। সে কারণেই নগরায়ণকে পরিবেশবান্ধব, স্বাস্থ্যকর ও সুষম হওয়ার কথা বলা হচ্ছে।

Advertisement

বলা যায়, নগরজীবনকে স্বচ্ছন্দ, পরিবেশবান্ধব, টেকসই ও উন্নয়নমুখী করা এখন সময়ের দাবি। অনেক দিন থেকেই ঢাকার ওপর চাপ কমানোর জন্য প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণসহ নানান পদক্ষেপের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু কাজের কাজ তেমন একটা হয়নি। ঢাকায় এখনো চলছে নির্মাণযজ্ঞ। প্রতি ইঞ্চি জায়গায় বাড়ি-ঘর স্থাপনা নির্মাণ করা হচ্ছে। বিল্ডিং কোড মেনে চলছে না কেউ। এক বাড়ি বা স্থাপনার সাথে অন্য বাড়ি বা স্থাপনার পার্থক্য খুবই সামান্যই। দেওয়াল ঘেঁষে দেওয়াল। জানালা খোলা যায় না। আলো বাতাস ঢোকে না। দিনেও লাইট জ্বালিয়ে রাখতে হয়। বাড়ে বিদ্যুৎ খরচ, পরিবেশ দূষণ। অলিগলির রাস্তা সরু। অ্যাম্বুলেন্স, ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ঢোকারও কোনো উপায় থাকে না অনেক ক্ষেত্রে। বিষয়গুলো চর্মচোখে দেখা গেলেও কারও যেন কোনো বিকার নেই। স্বার্থপরতা আমাদের অন্ধ করে দিচ্ছে। ব্যক্তিস্বার্থে আমরা ভুলে যাই জাতীয় স্বার্থের কথা। ফলে আমাদের প্রিয় ঢাকাকে আমরা বাস অনুপযোগী করতে নেতিবাচক ভূমিকা রেখেই চলেছি।

ঢাকায় এখনো চলছে নির্মাণযজ্ঞ। প্রতি ইঞ্চি জায়গায় বাড়ি-ঘর স্থাপনা নির্মাণ করা হচ্ছে। বিল্ডিং কোড মেনে চলছে না কেউ। এক বাড়ি বা স্থাপনার সাথে অন্য বাড়ি বা স্থাপনার দূরত্ব খুবই সামান্যই। দেওয়াল ঘেঁষে দেওয়াল। জানালা খোলা যায় না। আলো বাতাস ঢোকে না। দিনেও লাইট জ্বালিয়ে রাখতে হয়। বাড়ে বিদ্যুৎ খরচ, পরিবেশ দূষণ। অলিগলির রাস্তা সরু। অ্যাম্বুলেন্স, ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ঢোকারও কোনো উপায় থাকে না অনেক ক্ষেত্রে।

দুই.ঢাকার ওপর চাপ কমানোর জন্য পূর্বাচল উপ-শহর প্রকল্প গড়ে তোলা হলেও সেটি এখনো বাস উপযোগী হয়ে ওঠেনি। বস্তুত পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্প বাংলাদেশ সরকারের একটি উন্নয়ন প্রকল্প যার উদ্দেশ্য ঢাকা মহানগরীর অদূরে পূর্বাচল এলাকায় একটি আধুনিক ‘টাউনশিপ’ স্থাপন করা। এজন্য রূপগঞ্জ থানা ও কালীগঞ্জ থানা এলাকার ৬,১৫০ একর জমি নির্বাচন করা হয়। এখানে ২৬ হাজার আবাসিক ভবন এবং ৬২ হাজার অ্যাপার্টমেণ্ট নির্মাণ করা হবে। এই টাউনশিপকে ৩০টি সেক্টরে ভাগ করা হয়েছে। এটি রাজউকের একটি প্রকল্প। ১৯৯৫ সালে রাজধানী ঢাকার সম্প্রসারণের লক্ষ্য নিয়ে ‘পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্প’ গৃহীত হয়েছিল। কিন্তু এখনো প্রকল্পের কাজ শেষ হয়নি। ফলে এখানে প্লট বরাদ্দপ্রাপ্তরাও ঘরবাড়ি নির্মাণ করতে পারছে না। একটি প্রকল্প শেষ করতে যদি যুগের পর যুগ শেষ হয়ে যায় তাহলে এর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ব্যাহত হয়।

Advertisement

কথায় কথায় পরিকল্পিত নগরীর কথা বলা হলেও ঢাকায় পরিকল্পনার ছিটেফোঁটা নেই। আসলে পরিকল্পিত নগর বলতে বোঝায় একটি পরিকল্পিত জনবসতি। যার সবকিছু হবে পরিকল্পনা অনুযায়ী। কোথায় স্কুল, কলেজ, হাসপাতাল হবে, অফিস আদালত কোথায়, কোথায় বসবাসের জায়গা সবকিছুই হবে পরিকল্পনামাফিক। পরিকল্পনামাফিক সবকিছু হলে প্রত্যেক নগরেই মানুষ শৃঙ্খলাপূর্ণ নাগরিক সুযোগ সুবিধা ভোগ করে। এতে তার নাগরিক জীবন হয় মর্যাদাপূর্ণ, গ্রাম কিংবা মফস্বলের তুলনায় উন্নততর, স্বস্তিদায়ক। কিন্তু এই নগরই আবার পরিকল্পনাহীনভাবে বেড়ে উঠলে তাতে নাগরিকদের জীবন দুর্বিষহ হয়ে ওঠে। জনজীবনকে তা বিপর্যস্ত করে ফেলে। মানুষের ভোগান্তির কোনো শেষ থাকে না।

আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার জরিপে প্রায় ঢাকার করুণ অবস্থার কথা উঠে আসছে। এ অবস্থা যে আমাদের জন্য কতটা লজ্জাজনক সেটি বলার অপেক্ষা রাখে না। দেখা যাচ্ছে বাস অনুযোগী শহরে বসবাসের ক্ষেত্রেও আমরা চ্যাম্পিয়ন! হায়রে অভাগা কপাল! জরিপকারী প্রতিষ্ঠান একটি শহরের বিভিন্ন বিষয় বিবেচনায় নিয়ে এর মান নির্ণয় করে। এর মধ্যে রয়েছে- নগরীতে বসবাসের সুযোগ সুবিধা, জনসংখ্যার ঘনত্ব, সামাজিক ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, শিক্ষা ব্যবস্থা, চিকিৎসা পাওয়ার সুযোগ-সুবিধা, অপরাধের হার, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন, পরিবেশ, যোগাযোগ ব্যবস্থা, অবকাঠামোর গুণগতমান, পানি সরবরাহের মান, খাদ্য, পানীয়, ভোক্তাপণ্য এবং সেবা ও সরকারি বাসগৃহের প্রাপ্যতা। এসব দিক থেকে আমাদের নগরগুলোর কী অবস্থা তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

এছাড়া ঢাকা ভূমিকম্প ঝুঁকিতে রয়েছে। এর আগে অন্য জরিপে প্রকাশ পেয়েছে ঢাকা বিশ্বের দূষিত নগরগুলোর মধ্যে অন্যতম। ঢাকার চারপাশের নদীগুলোর করুণ অবস্থায়ই এই জরিপের সত্যতা প্রমাণে যথেষ্ট। এছাড়া যানজট, যানবাহন এবং কলকারখানার কালো ধোঁয়া, ট্যানারি বর্জ্য, খাদ্যে ভেজাল, সেবাপ্রতিষ্ঠানগুলোর নিম্নমানও ঢাকার জীবনযাত্রায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। অধিক জনসংখ্যার চাপে ন্যুব্জ এই শহরে নেই পয়োনিষ্কাশনের সুষ্ঠু ব্যবস্থা। জনসংখ্যা বাড়ছে। সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে গাড়ি-ঘোড়া। কিন্তু সে তুলনায় রাস্তাঘাট, হাসপাতাল, স্কুল-কলেজ, গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানি ইত্যাদি নাগরিক সেবা পাওয়া যাচ্ছে না। সবকিছুতেই পরিকল্পনাহীনতার ছাপ। অথচ রাজধানী ঢাকাই দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের প্রাণকেন্দ্র। দেশের এক-তৃতীয়াংশ মানুষ এখন শহরে বাস করছে।

এজন্য পরিকল্পিত নগরায়ণের কোনো বিকল্প নেই। ঢাকা আবাসস্থল থেকে পরিণত হয়েছে বিরাট বাজারে। বস্তুত এই শহরের সুনির্দিষ্ট কোনো চরিত্র নেই। যত্রতত্র যে যেখানে পারছে যে কোনো প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলছে। এতে নগরী তার বিশিষ্টতা হারাচ্ছে। এক জগাখিচুড়ি অবস্থায় রাজধানীবাসী এখানে বাস করছে। ফলে অনেক নাগরিক সুবিধা থেকেই তারা বঞ্চিত। শিশু এবং বৃদ্ধদের জন্য এই নগরী যেন নরকতুল্য। খেলার মাঠ নেই, নেই জলাশয়। সবুজ গাছগাছালির দেখা মেলাও ভার।

Advertisement

তিন.যানজট ঢাকা নগরীকে কার্যত এক অচল এবং স্থবির নগরীতে পরিণত করেছে। এটি একটি স্থায়ী সমস্যা হিসেবে দেখা দেওয়ায় পরিবহন খাতে বড় ধরনের পরিকল্পনা নিয়ে এগোনো ছাড়া কোনো উপায় নেই। যানজট সমস্যার সমাধান না হওয়ায় প্রতিদিনই অনেক কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে। পিছিয়ে যাচ্ছে উন্নয়ন। বাধাগ্রস্ত হচ্ছে অগ্রগতি। শুধু তাই নয়, শব্দ ও বায়ুদূষণে নানা সংক্রামক ব্যাধিতেও আক্রান্ত হচ্ছে রাজধানীর বিপুলসংখ্যক মানুষ। যানজটে নগরবাসীর প্রাত্যহিক জীবনযাত্রাও মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে। অর্থনৈতিক ক্ষতির পরিমাণও বাড়ছে দিন দিন। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় দেখা যায়, যানজটের কারণে বছরে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ৫ হাজার কোটি টাকারও বেশি। সব রুটে যাত্রীদের চলাচলে কমপক্ষে তিন কর্মঘণ্টা সময় অপচয় হয় প্রতিদিন। যানজটের কারণে বিপুল পরিমাণ জ্বালানিরও অপচয় হয়। কিন্তু এ থেকে পরিত্রাণের যেন কোনো উপায় নেই। বিভিন্ন সময়ে নানামুখী কর্মসূচি-পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হলেও বাস্তবায়ন হয়েছে খুবই কম। ফলে সমস্যা যে তিমিরে ছিল সেখানেই রয়ে গেছে। অথচ দুর্বিষহ যানজটের জন্য পরিকল্পনা ও সমন্বয়হীনতার অভাবকেই দায়ী করা হয়।

রাজধানীতে দিন দিন জনসংখ্যা বেড়েই চলছে। সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে গাড়ি-ঘোড়া। কিন্তু সে তুলনায় রাস্তাঘাট বাড়ছে না। ফলে যানজট এক অনিবার্য বাস্তবতা হিসেবে দেখা দিয়েছে। এছাড়া নিয়মের ব্যত্যয় হওয়ায় যানজট থেকে মুক্তি পাচ্ছে না রাজধানীবাসী। যানজট নিয়ন্ত্রণে কঠোর ট্রাফিক আইনের প্রয়োগ, প্রাইভেট গাড়ির ওপর নিয়ন্ত্রণ, যত্রতত্র প্রাইভেটকার পার্কিং নিষিদ্ধ করা, রেল যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, নদীপথ এবং ঢাকার ভেতরের খাল দখলমুক্ত করে নৌপথের উন্নয়ন করা, রিকশামুক্ত সড়কসহ নানান পরিকল্পনার কথা বলা হয়। কিন্তু এগুলো নিয়ে কথাবার্তা যতটা হয় কাজ ততটা হয় না যে তা যানজটের বর্তমান হালই বলে দিচ্ছে।

কিন্তু যানজট এখন এমন এক অবস্থায় পৌঁছেছে যে, এ থেকে পরিত্রাণের উপায় খুঁজে বের করতে হবে। যানজট বর্তমান নগরবাসীকে স্থবির ও অচল করে রেখেছে। এই অবস্থা দীর্ঘায়িত হলে এর সুদূরপ্রসারী নেতিবাচক ফলাফল যে অত্যন্ত ভয়াবহ হবে সেটি বলার অপেক্ষা রাখে না।

চার.বেশ কয়েক বছর আগের কথা। বুয়েটের মেধাবী ছাত্রী সনি হত্যার প্রতিবাদে যারা অনশন করছিলেন কবি শামসুর রাহমান (এখন প্রয়াত) গিয়েছিলেন তাদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করতে। কবির বুয়েটে যাওয়ার ঘটনা ফলাও করে প্রচার হয় সবকটি দৈনিকে। ফলে আন্দোলনরত ছাত্র-ছাত্রীরা আরও প্রত্যয়ী ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। বিষয়টি ভালো ঠেকেনি বুয়েট ভিসির কাছে। তাই তিনি ক্রুদ্ধ হয়ে বলেছিলেন- ‘উনি কবি মানুষ, আমরা ইঞ্জিনিয়ার-কবিতার সঙ্গে আমাদের কোন সম্পর্ক নেই’। তৎকালীন ভিসির ওই অসার মন্তব্য দেশব্যাপী বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছিল। তখন তা হাসির খোরাক জুগিয়েছিল অনেকের।

সত্যি কবিতার সঙ্গে মানুষের, বিশেষ করে ইঞ্জিনিয়ারদের সম্পর্ক না থাকলে তার পরিণতি যে কী ভয়াবহ হতে পারে তা যেন বলে দিচ্ছে রাজধানীর কংক্রিটের এই জঙ্গল।

প্রয়াত নাট্যজন সেলিম আল দীন ১৯৯৪ সালের এপ্রিল মাসে দৈনিক বাংলার সাহিত্য সাময়িকীতে প্রকাশিত ‘মান্দাই নৃ-গোষ্ঠী’ শিরোনামে এক প্রবন্ধে এই জনগোষ্ঠীর মাটির ঘরের অপূর্ব সুন্দর স্থাপত্য রীতি বর্ণনা প্রসঙ্গে বলেছিলেন, ‘আধুনিক কালের স্থাপত্যকলায় পরিবেশের সঙ্গে গৃহনির্মাণের একটি সুসামঞ্ছস্যপূর্ণ মিলন প্রত্যাশিত। চল্লিশ, পঞ্চাশ ও ষাটের দশকের পাশ্চাত্যের গৃহ স্থাপত্যের সাধারণ নকশাটা আমাদের দেশের স্থাপত্যকারগণ গ্রহণ করেছিলেন, নির্বিচারে। ঢাকা শহরের দিকে তাকালেই বোঝা যায়, রুগ্ণ গৃহ-স্থাপত্যের এক দিকচিহ্নহীন অভিযাত্রায় নেমেছি আমরা। সাদা চুনকাম করা দেওয়ালের সঙ্গে ঢাকা শহরের মৃত্তিকার কোনো সামঞ্ছস্য নাই। যে কাঠামোকলা ভূপ্রকৃতির সঙ্গে সামঞ্ছস্যহীন তাই যেন চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে সর্বত্র। পাশ্চাত্যে গৃহ স্থাপত্যের আঙ্গিক ও বৈচিত্র্য তাদের শিল্পায়ন ও বিজ্ঞানের ধারায় স্বাভাবিক। আমাদের প্রকৌশলীরা সেখানকার সেই নকশাই জুড়ে দিলেন এখানে। আমাদের চাঁদ সূর্য, শীত বর্ষা আড়ালে চলে গেলো। পুঁথিগত বিদ্যাটাকে ধ্রুবজ্ঞানে বিশ্বাস করার যে কি ফল তা আমাদের শহরের নানা অংশের স্থাপত্যরীতি দেখলেই বোঝা যায় অবশ্য।’

বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সিতাংশু রায় তার ‘AN INTRODUCTION TO AESTHETICS’ গ্রন্থে স্থাপত্য অধ্যায়ে বলেছেন, ‘প্রাসাদের ছাদ থেকে বৃষ্টির জল বেরিয়ে যাবার জন্যে নালীতে নল লাগিয়ে দিলেই ব্যবহারিক প্রয়োজন মেটে। কিন্তু নলের প্রান্তে বাঘের মুখের প্রতিকৃতি বসিয়ে দেয়া হল। তোরণ বা সোপানের দুইপাশে নির্মিত হল দম্ভভরে উপবিষ্ট সিংহের গম্ভীর মূর্তি। এতে করে স্থাপত্য সমগ্র নির্মিতির আদর্শদান করে ও নির্মাণের পর সামগ্রিক দৃষ্টিতে উপযোগিতার অতিরিক্ত এক সৌন্দর্যের সৃষ্টি করে’।

রবীন্দ্রনাথ বলাকার একটি কবিতায় তাজমহল সম্বন্ধে বলেছেন- ‘প্রেমের করুণ কোমলতা/ফুটিল তা/ সৌন্দর্যের পুষ্পপুঞ্জে প্রশান্ত পাষাণে’ পাষাণে প্রাণ দেওয়ার জন্য যে নান্দনিক বোধ থাকা প্রয়োজন তার জন্য বিষয়াতিরিক্ত জ্ঞানের অন্য শাখাগুলোরও অধ্যয়ন জরুরি। আমাদের স্থাপত্যকলায় যার তীব্র অভাব পরিস্ফুট। আমাদের নগরায়ণে যেমন পরিকল্পনার অভাব, তেমনি সৌন্দর্যের পুষ্পপুঞ্জে প্রশান্ত পাষাণের অভাব। স্থাপত্যকলায় প্রয়োজনের অতিরিক্ত সৌন্দর্যের অনুসন্ধান আমাদের ঐতিহ্যের কারণেই বড়বেশি প্রয়োজন। ঢাকাকে অসম্মান থেকে রক্ষার উদ্যোগে তাই এখনই কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে সক্রিয় হবেন- এমনটিই প্রত্যাশা করি।

লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক, কলামিস্ট। ডেপুটি এডিটর জাগো নিউজ। drharun.press@gmail.com

এইচআর/জিকেএস