মতামত

বাংলাদেশে সমস্যা বেশি তাই সুযোগও বেশি, তৈরি হও

বাংলাদেশে সমস্যা বেশি তাই সুযোগও বেশি, তৈরি হও

বাংলাদেশ একটি দ্রুত উন্নয়নশীল দেশ। বিগত কয়েক দশকে অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং অবকাঠামোগত উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হলেও বাংলাদেশে এখনো নানাবিধ সমস্যা বিদ্যমান। তবে এই সমস্যাগুলোই নতুন নতুন সুযোগ সৃষ্টি করছে। আসলে সমস্যা থাকা মানেই সম্ভাবনার দ্বার খোলা থাকা। আজকের বিশ্ব অর্থনীতির দিকে তাকালে দেখা যায়, যে-সব দেশ দ্রুত উন্নতি করেছে, তাদের প্রায় সবাই বড় বড় সমস্যাকে সমাধানে রূপান্তর করে এগিয়েছে। বাংলাদেশও এই পথে হাঁটছে।

Advertisement

বাংলাদেশের অন্যতম বড় সমস্যা হলো বেকারত্ব। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)-এর তথ্য অনুযায়ী ২০২২ সালে বাংলাদেশে বেকারত্বের হার ছিল প্রায় ৪.২ শতাংশ। যদিও প্রকৃত চিত্র আরও উদ্বেগজনক। প্রতি বছরই নতুন করে প্রায় ২০-২২ লাখ তরুণ-তরুণী কর্মবাজারে প্রবেশ করছে, যাদের বড় অংশই প্রয়োজনীয় দক্ষতার অভাবে চাকরি পাচ্ছেন না। তবে এখানেই লুকিয়ে আছে সম্ভাবনা। বেকারত্ব দূরীকরণে স্বনির্ভরতা এবং উদ্যোক্তা হওয়ার সুযোগ তৈরি হচ্ছে। গত কয়েক বছরে বাংলাদেশে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগের (এসএমই) সংখ্যা ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে এসএমই খাতে প্রায় ২২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এটি প্রমাণ করে যে চাকরির বাজারে সংকট থাকলেও উদ্যোক্তা হওয়ার সম্ভাবনা এবং সুযোগ বৃদ্ধি পাচ্ছে।

বাংলাদেশে সমস্যা বেশি থাকলেও তা হতাশার কারণ নয়, বরং এই সমস্যাগুলোই নতুন সম্ভাবনার দরজা খুলে দিচ্ছে। সমস্যা সমাধানের মধ্য দিয়েই তৈরি হবে নতুন নতুন কর্মসংস্থান, বিনিয়োগের ক্ষেত্র এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি। প্রয়োজন শুধু উদ্ভাবনী চিন্তা, উদ্যোগী মনোভাব এবং সমস্যাকে ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করার মানসিকতা।

এছাড়া, বাংলাদেশে রয়েছে নগরায়ণ ও পরিবেশগত সমস্যা। রাজধানী ঢাকা পৃথিবীর অন্যতম ঘনবসতিপূর্ণ ও দূষিত শহর। ট্র্যাফিক জ্যাম, বায়ু দূষণ এবং অপরিকল্পিত নগরায়ণের ফলে ঢাকার বসবাসের মান অবনতি হয়েছে। কিন্তু এখানেও রয়েছে সম্ভাবনা। আধুনিক নগরায়ণ, স্মার্ট সিটি ও পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তির ক্ষেত্রে বিনিয়োগ ও উদ্ভাবনের সুযোগ তৈরি হয়েছে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ সরকার এবং বেসরকারি খাতের উদ্যোগে স্মার্ট সিটি প্রজেক্ট, গ্রিন বিল্ডিং এবং রিনিউয়েবল এনার্জি খাতে বিপুল বিনিয়োগ হচ্ছে। এই খাতে ২০২২ সালে বিদেশি বিনিয়োগ প্রায় ৪০% বৃদ্ধি পেয়েছে বলে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) জানিয়েছে।

Advertisement

তাছাড়া, বাংলাদেশের কৃষি খাতে বহু সমস্যা রয়েছে। জমির ঊর্বরতা হ্রাস, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব এবং প্রযুক্তির অভাবে কৃষকেরা বিভিন্ন প্রতিকূলতার সম্মুখীন হচ্ছেন। তবে কৃষিপ্রযুক্তি (AgriTech) এবং কৃষিপণ্যের মানোন্নয়নে নতুন নতুন স্টার্ট-আপ তৈরি হচ্ছে। বিগত পাঁচ বছরে কৃষি প্রযুক্তি খাতে প্রায় ৩০টিরও বেশি নতুন কোম্পানি আত্মপ্রকাশ করেছে এবং তারা সফলভাবে দেশবিদেশে ব্যবসা পরিচালনা করছে।

প্রযুক্তি খাতেও রয়েছে অসংখ্য সমস্যা, কিন্তু সেখানেও লুকিয়ে রয়েছে বড় সুযোগ। ই-কমার্স, ডিজিটাল মার্কেটিং, ফিনটেক এবং আইটি সার্ভিস খাতে গত কয়েক বছরে বাংলাদেশে ব্যাপক প্রবৃদ্ধি হয়েছে। ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব) এর তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ই-কমার্স খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে প্রায় ৭০%। বাংলাদেশের তরুণ উদ্যোক্তারা প্রযুক্তি খাতে ব্যাপক সম্ভাবনা সৃষ্টি করছে এবং আন্তর্জাতিক বাজারেও নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করছে।বাংলাদেশের তুলনায় প্রতিবেশী দেশ ভারত এবং ভিয়েতনামের দিকে তাকালে দেখা যায়, এই দেশগুলো তাদের সমস্যা থেকেই নতুন নতুন অর্থনৈতিক সুযোগ সৃষ্টি করেছে। ভারতের প্রযুক্তি ও স্টার্ট-আপ সেক্টরে বিপ্লব এসেছে, যা মূলত তাদের অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের চেষ্টার ফলাফল। ভিয়েতনাম উৎপাদন ও রপ্তানি বৃদ্ধির মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটিয়েছে। বাংলাদেশও এই উদাহরণগুলো থেকে শিক্ষা নিয়ে সমস্যাকে সুযোগে রূপান্তরের পথে এগিয়ে যেতে পারে।

সুতরাং, বাংলাদেশে সমস্যা বেশি থাকলেও তা হতাশার কারণ নয়, বরং এই সমস্যাগুলোই নতুন সম্ভাবনার দরজা খুলে দিচ্ছে। সমস্যা সমাধানের মধ্য দিয়েই তৈরি হবে নতুন নতুন কর্মসংস্থান, বিনিয়োগের ক্ষেত্র এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি। প্রয়োজন শুধু উদ্ভাবনী চিন্তা, উদ্যোগী মনোভাব এবং সমস্যাকে ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করার মানসিকতা।

লেখক : কলামিস্ট, ইউটিউবার এবং ফাইনান্স ও বিজনেস, স্ট্রাটেজিস্ট অ্যান্ড সিইও, ফিনপাওয়ার লিডারশিপ ইন্টারন্যাশনাল।

Advertisement

এইচআর/জিকেএস