ক্যাম্পাস

সন্তানের আনন্দ ভাগাভাগি করতে ক্যাম্পাসে বাবা-মা

সন্তানের আনন্দ ভাগাভাগি করতে ক্যাম্পাসে বাবা-মা

উচ্চ মাধ্যমিক শেষে শুরু হয় ভর্তিযুদ্ধ। টানা পরিশ্রম, ধৈর্যের ফসল নিজের পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি। কারো জন্য বাড়তি পাওনা হিসেবে যোগ হয় কাঙ্ক্ষিত বিষয় পাওয়া। তবে ভর্তি হলেই জীবনযুদ্ধ শেষ হয় না, বরং শুরু। ক্যাম্পাসে ক্লাস, প্রেজেন্টেশন, টিউটোরিয়াল, পরীক্ষা, সিজিপিএ ওঠানামা এসব নিত্যসঙ্গী। এর মাঝে টিউশন করে নিজের আর্থিক সচ্ছলতা অর্জন করা।

Advertisement

চার বছর অধ্যবসায়ের মাধ্যমে শেষ হয় গ্র্যাজুয়েশন। সমাবর্তন অনুষ্ঠানে গ্র্যাজুয়েটদের হাতে সার্টিফিকেট তুলে দেওয়ার মধ্য দিয়ে স্বীকৃতি মেলে শিক্ষার্থীদের। সমাবর্তনের মাধ্যমে প্রিয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে বিদায় নেন শিক্ষার্থীরা।

পঞ্চম সমাবর্তন অনুষ্ঠানকে ঘিরে গত কয়েকদিন ধরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ। গ্র্যাজুয়েটরা সমাবর্তনের গাউন পরে বন্ধু, সহপাঠী, পরিচিতদের নিয়ে সেইসব স্মৃতি ফ্রেমবন্দি করে রাখছেন। তবে সবচেয়ে আনন্দদায়ক মুহূর্ত হচ্ছে, অনেকেই বাবা-মাকে নিয়ে এসেছেন। নিজের সফলতার আনন্দ ভাগাভাগি করছেন তাদের সঙ্গে। কেউ আবার বাবাকে গাউন পরিয়ে দিচ্ছেন, মায়ের মাথায় দিচ্ছেন হ্যাট। সন্তানের অর্জনে শামিল হতে পেরে খুশি অভিভাবকরাও।

আইন অনুষদের সামনে দেখা হয় ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মিজানুর রহমানের সঙ্গে। তিনি আইন থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ করে বর্তমানে ঢাকা চিফ মেট্রোপলিটন মেজিস্ট্রেট কোর্টে আইনজীবী হিসেবে আছেন। সমাবর্তনের দিন স্মরণীয় করতে লক্ষ্মীপুরের কমলনগর থেকে নিয়ে এসেছেন মা ও বাবাকে।

Advertisement

তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার মূল অনুপ্রেরণা ছিল আব্বা-আম্মার দোয়া। অনেক সময় হতাশা এলে তাদের কথা চিন্তা করে দ্বিগুণ পরিশ্রম করতাম। উনারাও আমাকে অনুপ্রেরণা এবং সাহস দিতেন। এজন্য আজকের আনন্দের সম্পূর্ণ ক্রেডিট তাদেরই। তাই বাড়ি থেকে অনেক দূরে হলেও আব্বা-আম্মাকে নিয়ে এসেছি। তারাও খুব আনন্দিত।

মিজানুর রহমানের বাবা বলেন, ছেলে গ্র্যাজুয়েট হয়েছে এটা আমাদের জন্য আনন্দের। আমি আর ওর মা যে কত খুশি, বলে বোঝাতে পারবো না। আল্লাহর কাছে শুকরিয়া।

মিজানুর রহমানের মা বলেন, ছেলেকে গাউন-টুপিতে গ্র্যাজুয়েট হিসেবে দেখা গর্বের। দোয়া করি ও যেন সৎভাবে দেশের সেবা করতে পারে।

বাবা-মাকে নিয়ে এসেছেন আইন অনুষদের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী জুয়েল রানাও। জুয়েল রানা সদ্য স্নাতক শেষ করেছেন। তার বাবা-মা এসেছেন রামগঞ্জ থেকে।

Advertisement

জুয়েল বলেন, আমার দীর্ঘদিনের স্বপ্ন ছিল বাবা-মায়ের মাথায় নিজ হাতে হ্যাট পরিয়ে দেবো। আজ সেই স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। এ আনন্দ ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না।

জুয়েলের বাবা নুরুল আমিন বলেন, নিজ সন্তানকে গ্র্যাজুয়েট দেখতে পাওয়া কত গর্বের তা বলে বোঝানো যাবে না। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে ধন্যবাদ আমাদেরকে এমন মুহূর্ত উপহার দেওয়ার জন্য।

জুয়েলের মা হোসনেয়ারা বেগম বলেন, ছোটবেলা থেকেই জুয়েল প্রচণ্ড মেধাবী ছিল। সে যেদিন আইন অনুষদে চান্স পায় আমি যেমন খুশি হয়েছিলাম, আজ একই আনন্দ অনুভূত হচ্ছে। আমার বড় ছেলেও এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ করেছে।

মিজানুর রহমানের মতোই শত শত শিক্ষার্থী এসেছেন তাদের বাবা-মাকে নিয়ে। আজ অনুষ্ঠিত হচ্ছে দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় সমাবর্তন। চবির এই সমাবর্তনে অংশ নেবেন ২২৫৬০ গ্র্যাজুয়েট।

আহমেদ জুনাইদ/এফএ/জেআইএম