তথ্যপ্রযুক্তি

প্রযুক্তিহীন একটা দিন কেমন হতো!

প্রযুক্তিহীন একটা দিন কেমন হতো!

ঘুম ভাঙার শব্দটা কী হতো, যদি আমাদের আশপাশে মোবাইল ফোন না থাকত? কেমন হতো সকালটা, যদি আলার্মের আওয়াজের বদলে ঘুম ভাঙতো মুরগির ডাক কিংবা জানালার পাশে বসা দোয়েলের কিচিরমিচিরে? আমরা আজ এতটাই প্রযুক্তিনির্ভর যে আমাদের দিন শুরু হয় স্ক্রিনে চোখ দিয়ে, আর শেষও হয় চোখে-মাথায় ক্লান্তি নিয়ে স্ক্রিনেই তাকিয়ে থেকে।

Advertisement

কল্পনা করুন, যদি একদিনের জন্য পৃথিবী থেকে সব প্রযুক্তি গায়েব হয়ে যেত। মোবাইল ফোন, ইন্টারনেট, ল্যাপটপ, টেলিভিশন, ফ্যান, রেফ্রিজারেটর, এমনকি বিদ্যুৎও না থাকত! কেমন হতো আমাদের জীবনটা? অনেকেই হয়তো ভাববেন অস্থিরতা, বিশৃঙ্খলা, অচলাবস্থা। কিন্তু একটু গভীরভাবে ভাবলে, আমরা হয়তো দেখতে পেতাম এক ধরনের শান্তি, যা এই প্রযুক্তির ঝলকানির ভিড়ে আমরা ভুলে গেছি।

সকালের শুরুটা হতো অস্বস্তিকর, কিন্তু নিঃসন্দেহে নীরব। শহরের যানজটের শব্দ বা ফোনের ভাইব্রেশন নয়, বরং পাখির ডাক, গাছের পাতায় হাওয়ার শব্দে ঘুম ভাঙত। অফিসের জন্য তাড়াহুড়া করলেও সময় মাপার মতো হাতঘড়ি যদি না থাকে, তবে হয়তো আমাদের ভেতরে সময়ের একটি স্বাভাবিক অনুভব তৈরি হতো। খবরের কাগজ না পেলে পরিবারে গল্প চলতো আগের রাতের ঘটনার, কিংবা সকালে ঘটে যাওয়া ছোট ছোট বিষয় নিয়ে।

বন্ধুকে কিছু বলতে হলে হোয়াটসঅ্যাপের পরিবর্তে সাইকেল চেপে কিংবা হেঁটে যেতে হতো তার বাসায়। তাতে সময় লাগতো, কষ্টও হতো, কিন্তু সম্পর্কগুলো হতো আরও গভীর, আরও আন্তরিক। হয়তো তখন আর ‘সিন’ দেখে প্রতিক্রিয়া বোঝার চেষ্টা করতে হতো না। চোখে চোখ রেখে বলা কথাই যথেষ্ট ছিল অনুভবের জন্য।

Advertisement

রান্নার ক্ষেত্রেও পরিবর্তন আসত। মাইক্রোওয়েভ বা ইনডাকশন চুলা নয়, বরং কাঠের চুলায় রান্না করা খাবার আবার ফিরে আসত। ফ্রিজে জমিয়ে রাখা ঠান্ডা পানি নয়, কল থেকে তুলে আনা ভোরের ঠান্ডা পানি পিপাসা মেটাতো। বিনোদন বলতে টিভির পর্দা বা ইউটিউব নয়, বরং পরিবারের সবাই মিলে বসে গল্প করা, গান গাওয়া, কিংবা ছাদে উঠে তারা দেখা হতো।

জ্ঞান অর্জন হতো বইয়ের পৃষ্ঠায়, লাইব্রেরিতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাটিয়ে। ‘গুগল’ না থাকলে হয়তো আমরা আরও মনোযোগী হতাম পড়ালেখায়, আরও কৃতজ্ঞ হতাম শিক্ষকদের প্রতি। বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ হতো হাতে লেখা চিঠিতে। ‘হাই’ বলার জায়গায় থাকত ‘প্রিয়তমা’, বা ‘আপনার প্রতি অশেষ শুভেচ্ছা’ দিয়ে শুরু করা আন্তরিক শব্দাবলি। হাতের লেখা দেখেই বোঝা যেত কার চিঠি এসেছে, কোন মনের ভাষা উঠে এসেছে অক্ষরে অক্ষরে।

তাহলে কি প্রযুক্তি একেবারে অপ্রয়োজনীয়? মোটেই না। প্রযুক্তি আমাদের জীবনকে সহজ করেছে, উন্নতির পথ দেখিয়েছে। কিন্তু যখন আমরা প্রযুক্তির ব্যবহার শেখার বদলে তার উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ি, তখনই তা হয়ে ওঠে বিপর্যয়কর। মোবাইল আমাদের কাছে না থেকে, যদি আমরা প্রকৃতির রঙে চোখ ফেরাই, ফেসবুকের স্ক্রল না করে যদি পরিবারের হাসি-কান্নার গল্প শুনি, তাহলে প্রযুক্তির সঙ্গে সঙ্গেই জীবনও হবে আরও মানবিক, আরও হৃদয়ছোঁয়া।

আমরা হয়তো প্রযুক্তির দুনিয়ায় দৌড়াতে দৌড়াতে ভুলে গেছি হাঁটা শেখা, ভুলে গেছি মানুষের সঙ্গে মন খুলে কথা বলা। প্রযুক্তিহীন কিছু মুহূর্ত যদি আমরা নিজের জন্য তৈরি করি হাতে রাখা বই, বন্ধুর বাড়িতে হেঁটে যাওয়া, মাটির হাড়িতে রান্না করা খাবার খাওয়া কিংবা ছাদে উঠে তারা গোনা...তাহলেই হয়তো আমরা আবার আবিষ্কার করব, কীভাবে মানুষ হয়ে বাঁচতে হয়।

Advertisement

তবে প্রযুক্তি দরকার, তবে প্রযুক্তির চেয়ে বড় দরকার ‘মানবিকতা’। মাঝে মাঝে প্রযুক্তিকে পাশে রেখে কিছুটা নিঃশব্দ, নির্ভেজাল মুহূর্ত বেছে নেওয়া দরকার শুধু মানুষ হয়ে বাঁচার জন্য।

আরও পড়ুন

এসময় ডিস্কাউন্টে এসি কিনলে যেসব বিষয় মাথায় রাখবেন এসি কত তাপমাত্রায় চালালে বিদ্যুৎ বিল কমবে জানেন?

কেএসকে/এমএস