দেশজুড়ে

সন্তানদের নিয়ে দেখা স্বপ্ন মাঝপথেই থেমে গেলো

সন্তানদের নিয়ে দেখা স্বপ্ন মাঝপথেই থেমে গেলো

রংপুরের কাউনিয়ায় বাসচাপায় একই পরিবারের তিনজন নিহতের ঘটনায় শোকে স্তব্ধ হয়ে পড়েছে গোটা গ্রাম। সন্তানদের নিয়ে দেখা স্বপ্ন মাঝপথেই থেমে গেছে পরিবারটির।

Advertisement

স্থানীয়রা জানান, কাউনিয়া উপজেলার কুর্শা ইউনিয়নের মহেশা গ্রামের মোকলেছুর রহমানের তিন ছেলের মধ্যে বড় আনারুল। এরপর আশরাফুল। আনারুল ও আশরাফুল মীরবাগ বাজারে যৌথভাবে লন্ড্রি ও সূতার দোকান পরিচালনা করেন।

আনারুল ইসলামের এক ছেলে ও দুই মেয়ে। বড় ছেলে হাফেজ। মেয়ে স্নেহা মীরবাগ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন। ছোট মেয়ে প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থী।

এদিকে, আশরাফুল ইসলামের তিন ছেলের মধ্যে বড় দুই ছেলে রায়হান (১৫) ও রাহাত (১১) হাফিজিয়া মাদরাসার ছাত্র। দুই বছর বয়সের ছোট ছেলে রহমতকেও হাফেজ বানানোর ইচ্ছে ছিল আশরাফুলের। কিন্তু সেই স্বপ্ন আর পূরণ হলো না।

Advertisement

মঙ্গলবার (১৩ মে) সকালে বড় ভাইয়ের মেয়ে আফসানা আক্তার স্নেহাকে পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছে দিতে গিয়ে সড়ক দুর্ঘটনার কবলে পড়েন আশরাফুল। এসময় ভাতিজি স্নেহা ও স্ত্রী রুবিনা বেগমসহ (৩২) ছোট ছেলে রহমত ঘটনাস্থলে মারা যান। আহত হন মোটরসাইকেলচালক আশরাফুল।

সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের সদস্য আব্দুল কাদের জাগো নিউজকে বলেন, আশরাফুল ও আনারুল- দুই ভাই তাদের ছেলেদের হাফিজিয়া মাদরাসায় পড়ালেখা করাচ্ছেন। হঠাৎ এমন দুর্ঘটনায় সবকিছু চুরমার হয়ে গেল।

স্নেহার সহপাঠী ওই গ্রামের মোসলেমা আক্তার মুক্তা বলেন, স্নেহা খুব উদার মনের একটা মেয়ে ছিল। বন্ধুদের সঙ্গে হাসিখুশিতে থাকতো সবসময়। তার এমন মৃত্যু মেনে নিতে পারছি না।

মীরবাগ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আফরোজা বেগম বলেন, স্নেহা অত্যন্ত মেধাবি ছিল। স্কুলে কারও সঙ্গে কোনোদিন খারাপ আচরণ করতে দেখিনি। তাকে ঘিরে আমরা শিক্ষকরা আশাবাদী ছিলাম। লেখাপড়া শিখে সে জীবনে ভালো কিছু করতে পারতো- এই বিশ্বাস ছিল। কিন্তু অকালেই ঝরে গেলো সব আশা।

Advertisement

দুর্ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে আশরাফুল ইসলাম জানান, ভাতিজিকে পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছে দিয়ে স্ত্রীকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে যাওয়ার কথা ছিল। মঙ্গলবার সকাল ৯টার দিকে উপজেলা সদরে মোফাজ্জল হোসেন উচ্চ বিদ্যালয় পরীক্ষা কেন্দ্রে যাওয়ার সময় মীরবাগ বেইলি ব্রিজ পার হয়ে কৃষি কলেজের সামনে পৌঁছালে তার মোটরসাইকেলের সামনে থাকা একটা দ্রুত গতির মাহিন্দ্র গাড়ি হঠাৎ ব্রেক ধরে। এসময় তিনি মোটরসাইকেলটি থামানোর চেষ্টা করেন। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হওয়ায় মোটরসাইকেলটি পিছলে সড়কে পড়ে যান। পরে তিনি রাস্তার পাশ থেকে উঠে দেখেন তার স্ত্রী, সন্তান ও ভাতিজির নিথর দেহ পড়ে আছে সড়কের ওপর।

নিহত স্নেহার বাবা আনারুল ইসলাম বলেন, একমাত্র ছেলেকে হাফেজ বানিয়েছি। বড় মেয়ে স্নেহা ছোট থেকে মেধাবি ছিল। তাকে ঘিরে অনেক স্বপ্ন ছিল আমার। এভাবে সব তছনছ হয়ে যাবে ভাবতে পারছি না।

কাউনিয়া থানার এসআই (উপপরিদর্শক) শাহানুর জানান, সকাল ৯টার দিকে স্ত্রী, সন্তান ও এসএসসি পরীক্ষার্থী ভাতিজিকে নিয়ে মোটরসাইকেলে উপজেলা সদরে পরীক্ষা কেন্দ্রে যাচ্ছিলেন আশরাফুল। জুম্মারপাড় কৃষি কলেজের সামনে পৌঁছালে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মোটরসাইকেলটি পড়ে গেলে তিন আরোহী রাস্তার উপরে ছিটকে পড়েন। এসময় বিপরীত দিক থেকে আসা অজ্ঞাত একটি বাস রাস্তার ওপরে পড়ে থাকা মোটরসাইকেলের তিন আরোহীকে চাপা দিয়ে পালিয়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই তারা মারা যান। রাস্তার পাশে পড়ে যাওয়ায় আহত হন মোটরসাইকেল চালক আশরাফুল। পরে স্থানীয় লোকজন এসে আশরাফুলকে আহত অবস্থায় এবং বাকি তিনজনের মরদেহ মরদেহ উদ্ধার করেন।

স্থানীয় মিলন, মিজান, আসলাম জাগো নিউজকে বলেন, দুই লেনের আঞ্চলিক মহাসড়কে স্বল্প ও দ্রুত গতির ছোট ছোট গাড়িগুলো চলাচলের কারণে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনায় বাসচাপায় স্বামী বেঁচে গেলেও চলে গেল তিনটি প্রাণ। আমরা এমন দুর্ঘটনা দেখতে চাই না।

দুর্ঘটনা রোধে আঞ্চলিক মহাসড়কে ছোট ছোট গাড়ি চলাচল বন্ধের দাবি জানান তারা।

জিতু কবীর/জেডএইচ/জিকেএস