দেশজুড়ে

কলা-পান পেরিয়ে ড্রাগন-মাল্টায় রঙিন স্বপ্ন কৃষকের

কলা-পান পেরিয়ে ড্রাগন-মাল্টায় রঙিন স্বপ্ন কৃষকের

কলা ও পানের জন্য খ্যাতি রয়েছে দেশের পশ্চিমের জনপদ ঝিনাইদহের। তবে এতেই থেমে নেই জেলার কৃষকেরা। নিত্যনতুন চ্যালেঞ্জ জয় করে চাষ করছেন দেশি-বিদেশি নানা প্রজাতির ফল। বিশেষ করে জেলায় ড্রাগন, মাল্টা, কমলা ও থাই পেয়ারার আবাদ বেড়েছে বহুগুণ। বেড়েছে অ্যাভোকাডোর চাষ। শখের বসে কৃষকেরা এসব ফলের চাষ শুরু করলেও দিনে দিনে তা বাণিজ্যিক রূপ পেয়েছে। ঝিনাইদহে উৎপাদিত ফল দেশের বাজারের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি বিদেশে রপ্তানির সম্ভাবনাও দেখছেন সংশ্লিষ্টরা।

Advertisement

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, সবশেষ ২০২৩-২৪ মৌসুমে জেলার ৬টি উপজেলায় মাল্টা, ড্রাগন, পেয়ারা, কলা, কমলার চাষ ব্যাপক হারে বেড়েছে। বিগত সময়ের তুলনায় উপজেলাগুলোতে গড়ে উঠেছে নতুন নতুন ড্রাগন, পেয়ারা ও মাল্টার বাগান। কৃষকের আগ্রহ দেখে এসব প্রজাতির ফল চাষের তথ্য ও প্রয়োজনীয় সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে সরকারি দপ্তরগুলো।

তবে পেয়ারা, ড্রাগন, মাল্টার পাশাপাশি জেলার কালীগঞ্জ, কোটচাঁদপুর, মহেশপুর ও সদর উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় গড়ে উঠেছে অ্যাভোকাডো ও আঙুরের চাষ। সখের বসে অনেক কৃষক পরীক্ষামূলক আঙুর চাষ করেন। প্রথম বছরেই পেয়েছেন সফলতা। অ্যাভোকাডো চাষেও কৃষকের মুখে সফলতার হাসি। এসব ফলের আবাদ সীমিত হওয়ায় রপ্তানিমুখী করা যায়নি। তবে আবাদ বৃদ্ধি পেলে অ্যাভোকাডো, ড্রাগন ও আঙুর রপ্তানির দারুণ সুযোগ রয়েছে জেলার কৃষকদের সামনে।

কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তারা বলছেন, ঝিনাইদহের মাটি ও প্রকৃতির বৈচিত্র্য রয়েছে। এ অঞ্চলে কৃষক যেকোনো ফসলের আবাদ করে সফল হচ্ছেন। পরিশ্রমী কৃষকদের কেউ কেউ নিজ উদ্যোগে পরীক্ষামূলক চাষাবাদ করে পেয়েছেন সফলতা। পরে একই ফসলের বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু করছেন কৃষকেরা। বিশেষ করে, ঝিনাইদহের মাল্টা, কলা, পেয়ারা ও ড্রাগন দেশে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে।

Advertisement

কোটচাঁদপুর উপজেলার মাল্টা চাষি তুহিন হোসেন বলেন, ২০১৯ সালে প্রথম সখের বসে মাল্টার বাগান করেছিলাম। এখন বাণিজ্যিক বাগান করেছি। প্রতি বছর ভালো ফলন আসে। দামও ভালো পাওয়া যায়। মাল্টার স্বাদ অনেক ভালো।

ড্রাগন চাষি শিমুল আহমেদ বলেন, আমাদের উৎপাদিত ড্রাগনের মান অনেক ভালো। কিছু অসাধু মানুষের কারণে ড্রাগন নিয়ে নানা অপপ্রচার ছড়িয়েছে। কিন্তু মাঠ থেকে সংগ্রহ করা ড্রাগনের মান নিয়ে কেউ প্রশ্ন করার সুযোগ পাবে না। আমরা যে ড্রাগন উৎপাদন করি, তা দেশের বাইরেও রপ্তানি হচ্ছে।

আরও পড়ুন:

শখের বশে ফল চাষ করে স্বাবলম্বী মিজানুর গরুর খামারে গ্রামের চিত্র বদলে দিয়েছেন লাকী

কোটচাঁদপুর ফলের আড়তের একাধিক আড়তদার জানান, নিয়মিত মাঠ থেকে ড্রাগন, পেয়ারা, মাল্টা, কলা, কমলা সংগ্রহ করে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ সারাদেশে পাঠানো হয়। গ্রাম পর্যায়ে উৎপাদিত ফল-ফলাদি এখন বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে। এতে দিন দিন ঝিনাইদহের কৃষকেরা ফল চাষে আরও আগ্রহী হয়ে উঠছেন।

Advertisement

ঢাকা থেকে আসা ফল ব্যবসায়ী সাইদুর রহমান বলেন, ঝিনাইদহের ফলের মান অনেক ভালো। ঢাকাসহ বড় বড় শহরগুলোতে আমরা এসব ফল পৌঁছে দিয়ে থাকি। ফলের জোগান বেশি হলে আমরা এসব ফল বিদেশেও পাঠিয়ে থাকি। রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে কৃষক ফল উৎপাদন করলে তাতে অর্থনৈতিক উন্নতি আরও সমৃদ্ধ হবে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্য মতে, এবার জেলায় ১৪৬৫ হেক্টর জমিতে উন্নত জাতের পেয়ারার আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি কোটচাঁদপুরে। এ উপজেলায় ৬০০ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে পেয়ারার। এছাড়া জেলায় ১০১২ হেক্টর জমিতে ড্রাগন, ৪৯১৫ হেক্টর জমিতে কলা, ১৪৬ হেক্টর জমিতে মাল্টা, ৭৩ হেক্টর জমিতে কমলার আবাদ হয়েছে।

আরও পড়ুন:

দখল-দূষণে প্রমত্তা ‘চিত্রা’ এখন মরা নদী ঝিনাইদহে বেড়েছে তামাক চাষ, ঝুঁকিতে প্রাণ-প্রকৃতি

কলার আবাদ বেশি হয়েছে শৈলকূপায়। এ উপজেলায় ১২১৫ হেক্টর জমিতে ও সদর উপজেলার ১১৭৫ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের কলার আবাদ হয়েছে। মাল্টার আবাদ সবচেয়ে বেশি হয়েছে মহেশপুর উপজেলায় (৬০ হেক্টর)। কমলার আবাদেও এগিয়ে মহেশপুর (৫০ হেক্টর)। তবে ড্রাগন চাষে এগিয়ে কোটচাঁদপুর (৪৩৯ হেক্টর)।

সদর উপজেলার পেয়ারা ও লেবু চাষি শামসুজ্জামান বলেন, চাকরির পাশাপাশি কৃষি উৎপাদনের লক্ষ্য নিয়ে কাজ শুরু করেছি। পেয়ারা চাষে দারুণ সফলতা এসেছে। আমাদের জেলায় যে পেয়ারা উৎপাদন হয়, তা অনেক সুস্বাদু। বাজারে ঝিনাইদহের পেয়ারা, ড্রাগন, কলার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। অনেকেই এখন ফল-ফলাদি চাষে আগ্রহী হচ্ছেন।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ষষ্টি চন্দ্র রায় বলেন, ঝিনাইদহের মাটি ও পরিবেশ-প্রকৃতির অনন্য এক গুণ আছে। এই জেলার মাটিতে প্রায় সব ধরনের ফসলের আবাদ বেশ ভালো হয়। জেলায় ড্রাগন, মাল্টা, কলা, পেয়ারা, অ্যাভোকাডোর চাষ দিন দিন বাড়ছে। অনেক কৃষক এবার পরীক্ষামূলক আঙুরের আবাদ করেছেন। এখন পর্যন্ত আঙুরের ফলনে কৃষক খুশি। তবে এটার বাণিজ্যিক উৎপাদন সম্ভব কিনা সেটা নিয়ে আমরা কাজ করছি।

তিনি আরও বলেন, কীটনাশক ও কৃত্রিম সারের ব্যবহার কমিয়ে কীভাবে নিরাপদ ফল-ফসল উৎপাদন করা যায়, সেই বিষয়ে কৃষকদের সার্বিক সহযোগিতা ও প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। আমাদের মাঠকর্মীরা নিয়মিত প্রান্তিক কৃষকের সঙ্গে এ বিষয়ে কাজ করছেন। নিরাপদ ও মানসম্পন্ন ফল উৎপাদন করা গেলে তা রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করার ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে।

এমএন/এমএস