বাংলাদেশে অবস্থিত বিভিন্ন দেশ ও সংস্থার রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনারদের কাছে শ্রম সংস্কার অগ্রগতির গত আট মাসের চিত্র তুলে ধরেছেন প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয়ক বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী।
Advertisement
সোমবার (১২ মে) তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনারদের সঙ্গে একটি উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে শ্রম সংস্কার সম্পর্কিত আগামী দিনের রোডম্যাপও উপস্থাপন করেন তিনি। বৈঠকে তাকে সহযোগিতা করে কারিগরি বিশেষজ্ঞ ও শ্রম অধিকার বিশেষজ্ঞদের একটি দল।
লুৎফে সিদ্দিকী বলেন, গত আট মাসে আমরা ব্যাপক অগ্রগতি অর্জন করেছি। আইএলও রোডম্যাপ শুধু একটি দিকনির্দেশনা নয়, এটি একটি প্রতিশ্রুতিও। এর সঠিক বাস্তবায়ন ও ফলাফল আনয়নে আমরা সময়, শক্তি ও সদিচ্ছার যথাযথ প্রয়োগ করছি।
ত্রিপক্ষীয় অংশীজনদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করে তাদের এ প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত করায় তিনি শ্রম উপদেষ্টা ড. সাখাওয়াত হোসেনের নৈতিক কর্তৃত্বের প্রশংসা করেন।
Advertisement
শ্রম সচিব এ এইচ এম শফিকুজ্জামান জানান, ২০২৫ সালের জুলাইয়ের মধ্যে শ্রম আইনের সংশোধনসহ গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক অর্জনের লক্ষ্য নিয়েই আমরা কাজ করছি। প্রক্রিয়াটি দ্রুত এগোচ্ছে।
এ প্রক্রিয়াকে অভূতপূর্ব উল্লেখ করে ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার এ সময় বলেন, আমরা লক্ষ্য করেছি যে, এ বিষয়ে জরুরি ভিত্তিতে বেশ কিছু সামাজিক সংলাপ হয়েছে। আমরা এমন মনোভাবকে সাধুবাদ জানাই। আমরা এ সম্পর্কিত আইনের খসড়া এবং মাঠপর্যায়ে শিগগিরই এর বাস্তবতায় দেখতে চাই। ইউরোপের বাজারে প্রবেশাধিকার অক্ষুণ্ণ রাখার জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ।
মার্কিন চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স ট্রেসি অ্যান জ্যাকবসন বলেন, বর্তমান সরকারের অধীনে এই অগ্রগতিকে আমরা স্বাগত জানাই। তবে পূর্বের শ্রম অধিকার লঙ্ঘন সংক্রান্ত ঘটনাগুলোর জন্য জবাবদিহিও দেখতে চাই।
কানাডিয়ান হাইকমিশনার অজিত সিংহ বলেন, আমরা এখন পর্যন্ত যে অগ্রগতি দেখেছি তাতে সন্তুষ্ট এবং আইএলও রোডম্যাপকে সমর্থন করি। বাংলাদেশের স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উত্তরণের প্রেক্ষাপটে এটি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
Advertisement
বৈঠকে ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারা কুক বলেন, বাংলাদেশের এলডিসি উত্তরণের জন্য অবশ্যই শক্তিশালী শ্রম নীতিমালার সমর্থন জরুরি। এজন্য অন্তর্বর্তী সরকার যে পদক্ষেপগুলো নিয়েছে, অন্যদের মতোই আমিও সেগুরোকে স্বাগত জানাই।
আইএলও-এর কান্ট্রি ডিরেক্টর তুওমো পউটিয়াইনেন বলেন, বাংলাদেশের শ্রম আইন সংস্কারের খুবন কাছাকাছি রয়েছি আমরা। যে বিষয়টি লক্ষ্য রাখতে হবে তা হলো, এটি যেন সময়োপযোগী হয় এবং দীর্ঘ মেয়াদে শ্রমিকদের সুরক্ষা দেয়।
আইন সচিব ড. হাফিজ আহমেদ চৌধুরী জানান, আমরা এ সংক্রান্ত আইনি বিষয়ে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছি এবং অংশীজনদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছি।
শ্রম, স্বরাষ্ট্র ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে পূর্ববর্তী সরকারের রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলাগুলো পর্যালোচনা, আদালতের জট এড়াতে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির পদ্ধতি এবং পরিদর্শকদের পর্যাপ্ত সক্ষমতা ঘাটতির মতো বিষয় নিয়ে হওয়া আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক নিয়েও উপস্থিত কূটনীতিকদের অবহিত করেন লুৎফে সিদ্দিকী।
তিনি বলেন, এটি কেবল একটি অভ্যন্তরীণ বিষয় নয়। শ্রম অধিকার এখন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষিত শুল্কনীতির মতো বাণিজ্য সংক্রান্ত বিষয় এবং বাজার প্রবেশাধিকারের সঙ্গে সম্পর্কিত। আমাদের সে অনুযায়ীই কাজ করতে হবে।
কূটনীতিকরা এসময় একমত হন যে, যেকোনো রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটেই শ্রম সংস্কার ও জবাবদিহিতাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।
অনেকেই এ সময় বাংলাদেশের উত্তরণে তাদের দেশের সমর্থনের কথা পুনর্ব্যক্ত করেন।
সবশেষে লুৎফে সিদ্দিকী বলেন, জুলাই আন্দোলন বাংলাদেশের জন্য সঠিক পদক্ষেপ নেওয়ার একটি অনন্য সুযোগ সৃষ্টি করেছে। আইএলও পরিচালনা পর্ষদে মামলার নিষ্পত্তি চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছানোর এই যাত্রায় সবার সমর্থনের জন্য আমরা কৃতজ্ঞ।
এমইউ/এএমএ/জেআইএম