এক কার্যদিবস কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী থাকার পর দেশের শেয়ারবাজারে ফের দরপতন হয়েছে। রোববার (১৮ মে) প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এবং অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) লেনদেনে অংশ নেওয়া বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমার পাশাপাশি কমেছে সবকটি মূল্যসূচক।
Advertisement
এর আগে টানা তিন কার্যদিবস ঢালাও দরপতনের পর গতকাল শনিবার দেশের শেয়ারবাজারে কিছুটা ঊর্ধ্বমুখিতার দেখা মেলে।
এক সময় দেশে সাপ্তাহিক সরকারি ছুটি ছিল একদিন। ১৯৯৭ সালে প্রথম দুদিন (শুক্র ও শনিবার) সাপ্তাহিক ছুটি নির্ধারণ করা হয়। তবে ২০০১ সালে তা বাতিল করে আবার সাপ্তাহিক ছুটি একদিন করা হয়। অবশ্য ২০০৫ সালের ৫ সেপ্টেম্বর আবার সাপ্তাহিক ছুটি দুদিন করা হয়।
সাপ্তাহিক ছুটি দুদিন করায় দেশের শেয়ারবাজারের লেনদেনও দুদিন বন্ধ থাকে। তবে আসন্ন ঈদুল আজহা উপলক্ষে সরকার দীর্ঘ ছুটি দেওয়ার পাশাপাশি দুই শনিবার অফিস খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নেয়। তার আলোকে গতকাল শনিবার সরকারি সব অফিস খোলা থাকার পাশাপাশি শেয়ারবাজারে লেনদেন হয়।
Advertisement
এর মাধ্যমে ২০০৫ সালের পর আবারও শেয়ারবাজারে শনিবার লেনদেনের ঘটনা ঘটে। এমন ব্যতিক্রম দিনে শেয়ারবাজারে টানা দরপতন থেকে উর্ধ্বমুখিতার দেখা মেলে। এ পরিস্থিতিতে রোববার শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হয় বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ার মাধ্যমে। ফলে লেনদেনের শুরুতে সূচকের ঊর্ধ্বমুখিতার দেখা মেলে।
তবে প্রথম ঘণ্টার লেনদেন শেষ হওয়ার আগেই দাম কমার তালিকা বড় হয়। এতে সূচকও ঋণাত্মক হয়ে পড়ে। লেনদেনের সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে দাম কমার তালিকাও বড় হয়। সেই সঙ্গে বাড়ে সূচকের পতনের মাত্রা।
দিনের লেনদেন শেষে সব খাত মিলে ডিএসইতে ১০২টি কোম্পানির শেয়ার দাম বাড়ার তালিকায় নাম লেখাতে পেরেছে। বিপরীতে দাম কমেছে ২৪১টির। আর ৫৭টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। ভালো কোম্পানি বা ১০ শতাংশ অথবা তার বেশি লভ্যাংশ দেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ৫৫টির শেয়ার দাম বেড়েছে। বিপরীতে ১৪২টির দাম কমেছে এবং ২৪টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
মাঝারি মানের বা ১০ শতাংশের কম লভ্যাংশ দেওয়া ১৭টি কোম্পানির শেয়ার দাম বাড়ার বিপরীতে ৫৭টির দাম কমেছে এবং ৮টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ না দেওয়ার কারণে পচা ‘জেড’ গ্রুপে স্থান হওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে ৩০টির শেয়ার দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৪২টির এবং ২৫টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। তালিকাভুক্ত ৩৬টি মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে একটির দাম বেড়েছে। বিপরীতে ২৯টির দাম কমেছে এবং ৬টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
Advertisement
অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমার দিনে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসই-এক্স আগের দিনের তুলনায় ২৯ পয়েন্ট কমে ৪ হাজার ৭৯১ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। অন্য দুই সূচকের মধ্যে ডিএসই শরিয়াহ সূচক আগের দিনের তুলনায় ৬ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৪৬ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আর বাছাই করা ভালো ৩০ কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ৮ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৭৮০ পয়েন্টে নেমে গেছে।
আরও পড়ুন: ২০ বছর পর শনিবার লেনদেনসবকটি মূল্যসূচক কমলেও ডিএসইতে লেনদেনের পরিমাণ কিছুটা বেড়েছে। তবে লেনদেন তিনশ কোটি টাকার নিচে রয়েছে। দিনভর বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ২৯২ কোটি ৬০ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ২৬২ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। সে হিসাবে আগের কার্যদিবসের তুলনায় লেনদেন বেড়েছে ২৯ কোটি ৭৪ লাখ টাকা।
এ লেনদেনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে বিচ হ্যাচারির শেয়ার। টাকার অঙ্কে কোম্পানিটির ১৪ কোটি ৮৯ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা সিটি ব্যাংকের শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১৩ কোটি ৮৯ লাখ টাকার। ১২ কোটি ৭০ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে এনআরবি ব্যাংক।
এছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- শাইনপুকুর সিরামিক, বারাকা পতেঙ্গা পাওয়ার, উত্তরা ব্যাংক, বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন, সিটি জেনারেল ইন্স্যুরেন্স, খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ব্যাগ এবং ক্রিস্টাল ইন্স্যুরেন্স।
অন্য শেয়ারবাজার সিএসইর সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই কমেছে ৭৮ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ২৩৬ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৮৮টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১১৮টির এবং ৩০টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। লেনদেন হয়েছে ১০ কোটি ১ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৯ কোটি ১৯ লাখ টাকা।
এমএএস/এমএইচআর/জেআইএম