লাইফস্টাইল

শব্দ দূষণে বিরক্ত সবাই, নিজের দায়িত্বটা পালন করছেন কি

শব্দ দূষণে বিরক্ত সবাই, নিজের দায়িত্বটা পালন করছেন কি

যানবাহনের হর্ন, বিল্ডিং নির্মাণকাজ, জেনারেটর, ট্রাফিক ও মাইকের শব্দ মিলিয়ে ঢাকা বিশ্বের অন্যতম ‘শব্দদূষণে আক্রান্ত শহর’ হিসেবে পরিচিত। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, ঢাকার বেশিরভাগ এলাকায় শব্দের মাত্রা প্রতিদিন ১০০ ডেসিবেল ছাড়িয়ে যায়, যা নিরাপদ সীমা (৫৫ ডেসিবেল) থেকে প্রায় দুই গুণ বেশি। এই নীরব ঘাতক যে কতভাবে আমাদের ক্ষতি করছে, জানেন কি?

Advertisement

কোন কোন উৎস থেকে বেশি শব্দ দূষণ হয়?

বাংলাদেশ পরিবেশ অধিদপ্তর এবং বিভিন্ন গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, ঢাকায় শব্দ দূষণের প্রধান উৎস চারটি। যানবাহন, বিশেষ করে বাস, ট্রাক ও মোটরসাইকেলর হর্নের তীব্রতা থাকে ৭০-১১০ ডেসিবেল পর্যন্ত। মেট্রোরেল, ফ্লাইওভার ও রাস্তা নির্মাণ ও মেরামতের শব্দ থাকে ৯০-১২০ ডেসিবেল পর্যন্ত। শিল্পকারখানা ও জেনারেটরের শব্দ ৮৫-১০০ ডেসিবেল; এবং রাজনৈতিক সমাবেশ, বিবাহ ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানের মাইকের শব্দের তীব্রতা থঅকে ১০০ ডেসিবেলের বেশি।

এই তীব্র ও অসহনীয় শব্দ প্রতিদিন সহ্য করছি আমরা। হয়তো বিরক্তি প্রকাশ করছি কখনও কখনও। কিন্তু এর ফলে নীরবে কী কী ক্ষতি হয়ে চলেছে, তা কি আমার জানি?

শব্দ দূষণের ফলাফল-

১. শ্রবণশক্তি হ্রাস৮৫ ডেসিবেলের বেশি তীব্র শব্দ দীর্ঘসময় ধরে শুনলে কানের অস্থিপঞ্জরী বা ককলিয়া ক্ষতিগ্রস্ত হয়, ফলে স্থায়ীভাবে শ্রবণশক্তি কমে যায়। জাতীয় শ্রবণ ইনস্টিটিউটের গবেষণা বলছে, ঢাকার ২৫ শতাংশ মানুষ কোন না কোন শ্রবণ সমস্যায় ভুগছে।

Advertisement

২. মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতিউচ্চ শব্দ স্ট্রেস হরমোন, কর্টিসল, বাড়িয়ে দেয়। এটি উদ্বেগ, অনিদ্রা ও ডিপ্রেশনের কারণ হতে পারে। ২০২০ সালে জাপানের এক গবেষণায় দেখা যায়- যারা দীর্ঘদিন ৭০ ডেসিবেলের বেশি শব্দের মধ্যে থাকে, তাদের হৃদরোগের ঝুঁকি ২০ শতাংশ বেশি।

৩. শিশু ও গর্ভবতী নারীদের জন্য ঝুঁকিগর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত শব্দ ভ্রূণের বিকাশে বাধা দেয় এবং প্রিম্যাচিউর ডেলিভারির সম্ভাবনা বাড়ায়। সেই সঙ্গে শিশুদের লার্নিং ডিসঅ্যাবিলিটি ও মনোযোগের সমস্যা দেখা দিতে পারে।

শব্দ দূষণ কীভাবে হয়, কেন এটি অপকারী- এসব তথ্য জেনে আসলে কোন লাভ নেই যদি আমরা এই পরিস্থিতি পরিবর্তনের কোন চেষ্টা না করি। জাতি হিসেবে আমাদের এক অদ্ভুত অভ্যাস আছে। কোন সমস্যার মুখোমুখি হলে আমরা নিজেদের কী করণীয় আছে সেদিকে না তাকিয়ে কোন না কোন কর্তৃপক্ষকে দোষ দেওয়ার জন্য খুঁজতে থাকি।

কর্তৃপক্ষ বা সরকারের দায় অবশ্যই আছে। তবে সেদিকে আঙুল তুলার আগে আপনি কি নিশ্চিত হয়ে বলতে পারবেন যে, নাগরিক হিসেবে আপনার দায়িত্বগুলো ঠিকঠাক পালন করেছেন?

Advertisement

শব্দ দূষণ কমানোর উপায়

১. বাংলাদেশে শব্দ দূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা-২০০৬ অনুযায়ী, আবাসিক এলাকায় শব্দের মাত্রা দিনে ৫৫ ডেসিবেল ও রাতে ৪৫ ডেসিবেল এর মধ্যে রাখা বাধ্যতামূলক। কিন্তু এর প্রয়োগ নেই। আইন প্রয়োগের প্রশ্ন আসবে যখন মানুষ আইনের তোয়াক্কা করেনা। কিন্তু নিজ স্থান থেকে ভেবে বলুন আপনি নিজে কি এই আইনটি মানেন?

২. স্কুল, হাসপাতাল জাতীয় স্থাপনার আগে রাস্তায় সাইনবোর্ড লাগানো থাকে। অথচ এটিকে পুরুত্ব দেওয়ার কাজ আসলে নাগরিকের।

৩. সবুজ প্রাচীর: রাস্তার পাশে গাছ লাগিয়ে শব্দ কমাতে পারে। ফাঁকা মাটি দেখলেই একটি গাছের চারা লাগিয়ে দিন।

৪. গাড়িতে অপ্রয়োজনীয় হর্ন বর্জন করুন।

৫. বাড়ির জানালায় ডাবল গ্লাজিং করলে শব্দ ৩০-৪০ শতাংশ কমে যাবে।

৬. অতিরিক্ত ভলিউম দিয়ে গান বাজাবেন না। এতে প্রতিবেশীদের সমস্যা হতে পারে।

৭. শিল্প কল-কারখানা লোকালয় থেকে দূরে তৈরি করুন।

শব্দ দূষণ শুধু কানের জন্য নয়, হৃদয় ও মস্তিষ্কেরও শত্রু। সরকারি নীতির পাশাপাশি আমাদের ব্যক্তিগত সচেতনতাই পারে এই সমস্যা কমাতে। সেই সঙ্গে ঢাকায় ‘সাউন্ড পোলিউশন ম্যাপিং’ চালু করা গেলে দূষণের হটস্পট শনাক্ত করা সহজ হবে।

সূত্র: বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, বাংলাদেশ পরিবেশ অধিদপ্তর, জাতীয় শ্রবণ ইনস্টিটিউট

এএমপি/জেআইএম