আন্তর্জাতিক

সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হলো কার, প্রশ্ন কাশ্মীরিদের

সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হলো কার, প্রশ্ন কাশ্মীরিদের

১০ মে, শনিবার সকাল বেলা। শ্রীনগরের ফতেহ কাদালে ঝেলম নদীর পাড়ে ঘনবসতিপূর্ণ এক পাড়ায় ৬২ বছর বয়সী হাজিরা একটি সরকারি চাল বিতরণ কেন্দ্রের মেঝেতে বসে ছিলেন। মুখে টানটান উদ্বেগ, ঠোঁটের ওপর ঘাম জমা—হাজিরা বললেন, ‘তাড়াতাড়ি দেন, পরিস্থিতি ভালো না।’

Advertisement

সরকার থেকে মাসে একবার কম দামে চাল পেতে তাকে বায়োমেট্রিক দিতে হয়, যা তার চার সদস্যের পরিবারের খাদ্যনির্ভরতার মূল ভরসা।

তবে এবারের অভিজ্ঞতা ছিল ভিন্ন। গত কয়েকদিনে ভারতশাসিত কাশ্মীরে যে ধরনের ঘটনাপ্রবাহ ঘটেছে, তা ছিল নজিরবিহীন। ড্রোন চক্কর দিয়েছে আকাশে, বিমানবন্দর বন্ধ, সীমান্তে গোলাবর্ষণ, মৃত্যু, আতঙ্ক—সব মিলিয়ে পুরো অঞ্চল যেন যুদ্ধের মুখোমুখি।

‘যুদ্ধ আসছে,’ বলছিলেন হাঁটুর ব্যথায় কাতর হাজিরা।

Advertisement

আরও পড়ুন>>

কাশ্মীর সংকটের স্থায়ী সমাধানে সাহায্য করতে চান ট্রাম্প ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধবিরতি ঘোষণায় কাশ্মীরে স্বস্তি কাশ্মীরে ফের বিস্ফোরণ, যুদ্ধবিরতির ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা

তবে শনিবার সন্ধ্যায় কিছুটা স্বস্তি নেমে আসে—মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা করেন, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধবিরতি আনতে তিনি সাফল্য পেয়েছেন। পরদিন তিনি আরও বলেন, কাশ্মীর সমস্যার স্থায়ী সমাধানে তিনি দুই দেশের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী।

তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষক জাফর চৌধুরীর মতে, দিল্লি ট্রাম্পের এই মন্তব্যে সন্তুষ্ট নয়। কারণ, ভারতের মতে ‘পাকিস্তান-সমর্থিত সন্ত্রাসবাদ’ই দুই দেশের উত্তেজনার মূল উৎস।

‘এত ভয় কোনোদিন লাগেনি’

যুদ্ধবিরতির আগে কয়েকদিনে ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে অভূতপূর্ব গোলাবর্ষণ শুরু হয়, ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলার মধ্যে পড়েন হাজার হাজার কাশ্মীরি।

Advertisement

সীমান্তবর্তী এলাকা ঊরিতে ৮ মে নারগিস বশির নামে এক নারী পালাতে গিয়ে গাড়িতে প্রাণ হারান। তার পরিবারের আরও তিনজন আহত হন। ৬০ বছর বয়সী সাবেক সেনা সদস্য মোহাম্মদ নাসির খানের ঘরের দেওয়াল ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়। ‘এখনো জানি না, এই বাড়ি বসবাসযোগ্য কি না,’ বলছিলেন তিনি।

২৮ বছর বয়সী সুলেমান শেখ জানান, তার বাড়িতেও গোলা এসে পড়ে। ‘আমার পরিবারের লোকজন চলে গেছে, আমি শুধু গৃহপালিত পশুগুলোর জন্য এখানে রয়ে গেছি,’ বলেন তিনি।

‘এই চক্র আর কতদিন চলবে?’

যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলেও কাশ্মীরে আতঙ্ক এখনো কাটেনি। ড্রোন হামলা, বিস্ফোরণ, রাতের নিঃশব্দ আকাশে লাল আগুনের রেখা এখনো মানুষের চোখে ভাসে। ‘শুধু সন্ধ্যায় বোঝা যাবে যুদ্ধবিরতি টিকে আছে কি না,’ বলছিলেন মেডিকেল কলেজের ছাত্রী মুসকান ওয়ানি।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক নূর আহমদ বাবা বলেন, রাজনৈতিকভাবে কাশ্মীরিদের বঞ্চিত করা হয়েছে, তাদের মন জয় করার কোনো কার্যকর উদ্যোগ নেই। ফলে অবিশ্বাস বাড়ছেই।

তরুণ সফটওয়্যার প্রকৌশলী ফুরকান বলেন, আমরা কি শুধু বুলেটের খাদ্য? দুই দেশের গোলাগুলির খেলায় বারবার ভুক্তভোগী হচ্ছি আমরা, কাশ্মীরিরা। পৃথিবীর কাছে আমরা তো শুধু ‘কোল্যাটারাল ড্যামেজ’।

পাঞ্জাবে অধ্যয়নরত মুনিব মেহরাজ বলেন, আবারও আমরা খেসারত দিলাম—জীবন গেলো, বাড়িঘর ধ্বংস হলো, শান্তি ভেঙে গেলো। আমরা আর সাময়িক বিরতি চাই না। চাই স্থায়ী সমাধান।

সূত্র: আল-জাজিরাকেএএ/