চাঁদ দেখা সাপেক্ষ ৭ জুন বাংলাদেশে ঈদুল আজহা উদযাপিত হতে পারে। সেই হিসেবে বলা যায় দরজায় কড়া নাড়ছে কোরবানির ঈদ। মাঝখানে বাকি নেই এক মাসও। প্রস্তুতি শুরু করেছেন ব্যাপারীরাও। গৃহস্থ ও খামার থেকে গরু সংগ্রহের প্রস্তুতি নিচ্ছেন তারা।
Advertisement
এরই মধ্যে কোরবানির গরুর বায়নাও দিয়ে রাখছেন ব্যাপারীরা। তবে তাদের দাবি, এবার কোরবানির গরুর সংকট হবে না। দেশে প্রচুর কোরবানির গরু মজুত আছে, তবে গোখাদ্যের কারণে দাম বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
ঈদুল আজহা উপলক্ষে গরু সংগ্রহ শুরু করেন ব্যাপারীরা। তাদের মধ্যে একজন কুষ্টিয়ার দৌলতপুর থানার মুথরাপুর গ্রামের মেহেদী হাসান রতন। গাবতলী পশুর হাটে তার নিজস্ব জায়গা রয়েছে, যেখান থেকে কোরবানির গরু বিক্রি করেন তিনি।
গত কোরবানিতে ৪৮ গরু বিক্রি করে সাড়ে ৫ লাখ টাকা লাভ করেছেন তিনি। এবার এরইমধ্যে ৫০টি গরু গৃহস্থের কাছে ৫০ শতাংশ দাম দিয়ে বায়না করা হয়েছে। কোরবানির ৫ দিন আগে গরুগুলো হাটে তোলা হবে। প্রতিদিন গরু রাখা বাবদ ২০০ টাকা গৃহস্থকে দেন ব্যাপারীরা। গড়ে প্রতিটা গরুর দাম ১ লাখ ১৫ হাজার থেকে ১ লাখ ৫৫ হাজার টাকা পর্যন্ত। ১ লাখ ১৫ হাজার টাকা মূল্যের গরুতে মাংস মিলবে সাড়ে তিন মণ এবং ১ লাখ ৫৫ হাজার টাকা মূল্যের গরুতে সাড়ে চার মণ মাংস মিলবে।
Advertisement
ঈদুল আজহার প্রস্তুতি প্রসঙ্গে মেহেদী হাসান রতন বলেন, কোরবানির ঈদের একমাসও বাকি নেই। কোরবানি উপলক্ষে আমাদের দীর্ঘ একটা প্রস্তুতি থাকে। আমরা কয়েকজন শেয়ারে ব্যবসাটা করি। কেউ গাবতলীতে থাকি, কেউ গ্রামের হাটগুলোতে। আমরা এখন গ্রামে বিভিন্ন গৃহস্থের ও খামার থেকে গরু সংগ্রহ করছি। এরইমধ্যে ৫০টি গরু বায়না দিয়েছি। অর্ধেক দাম পরিশোধ করেছি। বাকি টাকা পরিশোধ করব খোঁয়াড় থেকে গরু নিয়ে আসার পর।
আরও পড়ুন কোন দেশে কীভাবে পালিত হয় ঈদুল আজহা ঈদুল আজহায় ১০ দিন ছুটির সিদ্ধান্তগাবতলীর হাটের ব্যাপারীরা জানান, গো-খাদ্যের বাড়তি দামের কারণে কোরবানির গরুর দাম ১০ থেকে ১৫ শতাংশ বেশি হতে পারে। গত কোরবানিতে যে চালের কুড়া বা খুদ প্রতি কেজি ২৮ টাকা ছিল তা ৩৮ টাকা হয়েছে। ২০ টা ছোট খড়ের এক একটি আঁটিতে ৬০ টাকা বেড়ে দাম হয়েছে ১৬০ টাকা। ধানের গুঁড়া ৮ টাকা থেকে বেড়ে ১৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। অন্যদিকে, ছোট ঘাসের বোঝা ৮০ টাকা থেকে বেড়ে ১৫০ টাকা, গমের খোসা ৪৫ টাকা থেকে বেড়ে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
হাট থেকে খামার পর্যন্ত প্রত্যেকটা মাঝারি মানের গরুতে পরিবহন খরচ ৩০০ টাকা বেড়ে ৯০০ টাকা হয়েছে। ফলে একটা গরুর জন্য দৈনিক ৪০০ টাকা খরচ হচ্ছে। ব্যাপারীদের দাবি, কোরবানির গরুর মাংসের দাম সর্বোচ্চ ৮০০ টাকা হতে পারে। সেই হিসেবে তিন মণ মাংস মিলবে এমন একটা মাঝারি সাইজের গরু কিনতে খরচ পড়বে ৯৬ হাজার টাকা, যা গত বছরের থেকে ১০ শতাংশ বেশি।
বিগত কয়েক বছর ধরে হাটগুলোতে ভারতীয় গরুর তেমন দেখা মেলে না। কিছু সাদা বলদ গরু দেখা যায় যা সংখ্যায় খুবই কম। সীমান্ত কড়াকড়ি থাকলেও ঈদুল আজহাকে সামনে কিছু ভারতীয় গরু প্রতিবারই অবৈধভাবে দেশে প্রবেশ করে। এবার পাকিস্তান-ভারত সীমান্তে যুদ্ধের প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশ সীমান্তেও। প্রায় প্রতিটি সীমান্ত পয়েন্টে বিজিবি ও বিএসএফ কড়া পাহারা দিচ্ছে। ফলে যারা চোরাই পথে গরু আনেন তারা ভয়ে সীমান্তে যেতে পারছে না। তারপরও গবাদি পশুর সংকট ও উচ্চমূল্যের আশঙ্কা নেই বলে দাবি ব্যাপারীদের।
Advertisement
মানিকগঞ্জ সিঙ্গাইর থানার কাওসার ব্যাপারী। গত কোরবানির ঈদে ৮০টা মাঝারি সাইজের গরু থেকে ১১ লাখ টাকা লাভ করেছেন তিনি। এবারের ঈদে ১০০টি মাঝারি গরু কোরবানির হাটে তোলার লক্ষ্য তার। এক কোটি টাকার মূলধন রাখা ও পছন্দের গরু সংগ্রহ একটা বড় চ্যালেঞ্জ বলে জানান তিনি। এরইমধ্যে বিভিন্ন হাট ও খামার থেকে পছন্দমতো ৫৫টির বেশি গরু সংগ্রহ করেছেন।গরুগুলো রেখেছেন গৃহস্থের বাড়িতেই।
তবে দেশে এবার পর্যাপ্ত গরু রয়েছে। ফলে ভারত থেকে গরু আনার প্রয়োজন হবে না বলে দাবি কাওসার ব্যাপারীর।
তিনি বলেন, ভারতের গরুর দরকার নাই। দেশে পর্যাপ্ত গরু আছে। আল্লাহর রহমতে গরু ফুরাবে না। খাইয়ে শেষ করতে পারব না। দেশে যা গরু আছে তা দিয়ে কোরবানির ঈদ ভালো হবে।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর জানায়, ২০২৪ সালে কোরবানির জন্য প্রস্তুত করা হয়েছিল ১ কোটি ২৯ লাখ ৮০ হাজার ৩৬৭টি গবাদি পশু। আর এবার প্রস্তুত করা হয়েছে ১ কোটি ২৪ লাখ ৪৭ হাজার ৩৩৭টি, যা গত বছরের তুলনায় ৫ লাখ ৩৩ হাজার ৩০টি কম। এবার প্রস্তুত করা গবাদি পশুর মধ্যে ৫৬ লাখ ২ হাজার ৯০৫টি গরু-মহিষ, ৬৮ লাখ ৩৮ হাজার ৯২০টি ছাগল-ভেড়া এবং ৫ হাজার ৫১২টি অন্যান্য গবাদি পশু। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় আসন্ন ঈদুল আজহায় গবাদি পশুর সম্ভাব্য চাহিদা নির্ধারণ করেছে ১ কোটি ৩ লাখ ৭৯ হাজার ২০২টি। বিপরীতে এবার কোরবানিযোগ্য পশু প্রস্তুত করা হয়েছে ১ কোটি ২৪ লাখ ৪৭ হাজার ৩৩৭টি। গত বছর কোরবানি উপলক্ষে এক কোটি ছয় লাখ ২১ হাজার ২২৮টি গবাদি পশু বিক্রি হয়েছে। এবারও প্রায় সমান সংখ্যক বা এর চেয়ে কিছু বেশি গবাদি পশু বিক্রি হতে পারে। এ হিসেবে এই বছর কোরবানিযোগ্য গবাদি পশু উদ্ধৃত থাকবে ২০ লাখ ৬৮ হাজার ১৩৫টি।
সবচেয়ে বেশি কোরবানিযোগ্য পশু মজুত রয়েছে রাজশাহী বিভাগে, কম রয়েছে সিলেটে। রাজশাহী বিভাগের আট জেলায় মোট ৪৩ লাখ ৪৪ হাজার ৪৯টি কোরবানিযোগ্য গবাদি পশু আছে। আর সিলেটে রয়েছে ৩ লাখ ৮ হাজার ৫১৫টি পশু। এ ছাড়া ঢাকা বিভাগে গবাদি পশুর মজুত আছে ১৩ লাখ ৭২ হাজার ৫৬৭টি, চট্টগ্রাম বিভাগে ১৯ লাখ ৭৪ হাজার ৭৪টি, খুলনা বিভাগে ১৪ লাখ ৩৪ হাজার ৫৭৮টি, বরিশাল বিভাগে ৪ লাখ ৫৯ হাজার ৮৪৮টি, রংপুর বিভাগে ১৯ লাখ ৮০ হাজার ৪১৩টি এবং ময়মনসিংহ বিভাগে ৫ লাখ ৭৩ হাজার ২৯৩টি। অন্যদিকে, কোরবানিতে গবাদি পশুর চাহিদা সবচেয়ে বেশি ঢাকা বিভাগে। ঢাকা বিভাগে এবার কোরবানির পশুর চাহিদা রয়েছে ২২ লাখ ৩৭ হাজার ৬৮৫টি।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (খামার শাখা) মো. শরিফুল হক জাগো নিউজকে বলেন, এবার কোরবানির ঈদে ভারতীয় গরুর কোনো প্রয়োজন হবে না। আমরা কোরবানির পশুতে স্বয়ংসম্পূর্ণ। কোরবানির ঈদের জন্য বিদেশি গরুর দরকার নেই। খামারগুলোতে পর্যাপ্ত গরাদি পশু মজুদ আছে। আমরা খামার থেকে নিয়মিত তথ্য নিচ্ছি। নিয়মিত মনিটর করা হচ্ছে। খাদ্য কীভাবে খাওয়াতে হবে, কীভাবে পরিচর্যা করতে হবে- এসব বিষয়ে আমরা পরামর্শ দিচ্ছি।
এমওএস/এএমএ/জিকেএস