লাইফস্টাইল

শিশু-কিশোরদের মানসিকভাবে সহায়তা করবেন যেভাবে

শিশু-কিশোরদের মানসিকভাবে সহায়তা করবেন যেভাবে

সানজানা রহমান যুথী শরীরের সঙ্গে মানুষের মনের সম্পর্ক অবিচ্ছেদ্য। শরীর ভালো না থাকলে যেমন আমরা ভালো থাকি না, ঠিক তেমনি মানসিকভাবে ভালো না থাকলেও আমরা অসুস্থ হয়ে পড়ি। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো, শারীরিক স্বাস্থ্য নিয়ে যতটা সচেতন, অনেক ক্ষেত্রেই মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে ততটা সচেতন নই।

Advertisement

আবার শিশু-কিশোরদের বয়স কম হওয়ায় তাদের সমস্যাগুলো বড়রা অনেক সময় গুরুত্বের সঙ্গে বোঝার চেষ্টা করেনা। কিন্তু অভিভাবক ও পরিবারের সদস্য হিসেবে আমরা আমাদের সন্তানদের মানসিকভাবে সুস্থ থাকার সর্বোচ্চ সুযোগ করে দিতে সহায়তা করতে পারি। এটি আমাদের দায়িত্বের মধ্যেও পড়ে। একজন শিশুকে ছোটবেলা থেকেই নিজের মানসিক স্বাস্থ্য ও সুস্থতা নিয়ে ভাবতে শেখানো এবং তাদের সঠিকভাবে দিকনির্দেশনা দেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি শিক্ষা।

চলুন জেনে নেয়া যাক কিভাবে আপনি আপনার শিশুর মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করতে পারেন, তার মানসিক অবস্থা নিয়ে কীভাবে কথা বলতে হবে, এবং কখন বুঝবেন যে তারা মানসিকভাবে সমস্যায় রয়েছে -

১. শুনতে প্রস্তুত থাকুন

আপনার শিশুকে নিয়মিত জিজ্ঞেস করুন তারা কেমন আছে। এতে তারা তাদের অনুভূতি নিয়ে কথা বলতে অভ্যস্ত হবে এবং জানবে, কেউ একজন সবসময় শুনতে প্রস্তুত আছে।

Advertisement

২. তাদের কঠিন সময়ে পাশে থাকুন

আপনার শিশুর আচরণ বা অনুভূতির প্রতি মনোযোগ দিন এবং তাদের কঠিন সময়গুলোতে পাশে দাঁড়ান। চ্যালেঞ্জিং আচরণের মুখোমুখি হওয়া সহজ নয়, তবে চেষ্টা করুন তাদের বুঝতে। তারা কী অনুভব করছে এবং কেন করছে- সেদিকে গুরুত্ব দিন।

৩. তাদের জীবনে সক্রিয়ভাবে যুক্ত থাকুন

তাদের জীবন এবং যেসব বিষয় তাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ, তা নিয়ে আগ্রহ দেখান। এতে তারা নিজের মূল্য বুঝতে শেখে এবং আপনি সহজে যেকোনো সমস্যা শনাক্ত করতে পারবেন।

৪. তাদের আগ্রহকে উৎসাহ দিন

আপনার শিশুকে তাদের আগ্রহ খুঁজে পেতে সহায়তা করুন ও উৎসাহ দিন। সৃজনশীল বা শারীরিক কার্যকলাপে যুক্ত হওয়া, নতুন কিছু শেখা এবং দলে কাজ করা—এসব আমাদের মানসিক সুস্থতা রক্ষা করে ও সামাজিক সম্পর্ক তৈরি করে।

৫. তাদের কথা গুরুত্বের সঙ্গে নিন

সন্তানের কথা মন দিয়ে শোনা ও মূল্য দেওয়া তাদেরকে সম্মানিত বোধ করায়। তাদের অনুভূতিগুলো গঠনমূলকভাবে মোকাবিলা করতে সহায়তা করার উপায় ভাবুন।

Advertisement

৬. ইতিবাচক রুটিন তৈরি করুন

নিয়মিত রুটিন মেনে চলার চেষ্টা করুন, বিশেষ করে স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া ও শারীরিক ব্যায়ামের দিকে মনোযোগ দিন। পর্যাপ্ত ঘুমও জরুরি, তাই নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমাতে যাওয়া ও জাগার অভ্যাস গড়ে তুলুন।

যেসব লক্ষণ দেখে বুঝতে পারেন একটি শিশু মানসিকভাবে সমস্যায় আছে

অনেক শিশু ও কিশোর-কিশোরী জীবনের কোনো না কোনো পর্যায়ে আচরণগত বা মানসিক সমস্যার সম্মুখীন হয়। কিছু ক্ষেত্রে সময়ের সঙ্গে তা ঠিক হয়ে যায়, আবার কারও পেশাদার সহায়তা প্রয়োজন হতে পারে।

সবসময় বোঝা যায় না কোন বিষয়টি আপনার শিশুকে অস্বস্তি বোধ করাচ্ছে, তবে কিছু লক্ষণ দেখে আপনি অনুমান করতে পারবেন, যেমন-

১. প্রতিদিনের সাধারণ আচরণে বড় কোনো পরিবর্তন

২. ঘুমাতে সমস্যা হওয়া

৩. সামাজিক পরিবেশ থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেওয়া

৪. আগের মতো প্রিয় কাজগুলো করতে অনাগ্রহ

৫. নিজেকে শারীরিকভাবে আঘাত করা বা নিজের যত্ন না নেওয়া

কখন একজন শিশু বা কিশোর-কিশোরীর জন্য পেশাদার সহায়তা নেওয়া উচিত

আপনি আপনার শিশুকে সবচেয়ে ভালোভাবে চেনেন। তাই যদি আপনি তাকে চিন্তিত থাকেন, প্রথমেই ভাবুন – তাদের আচরণে কোনো বড় পরিবর্তন এসেছে কি না।

যদি আসে, তাহলে সেটা কোনো নির্দিষ্ট ঘটনা বা জীবনের পরিবর্তনের কারণে হয়েছে কি না? সেটি কি শুধু বাড়িতে, স্কুলে বা অন্যদের সঙ্গে থাকলে হয়? যদি আপনি অনিশ্চিত হন, তাহলে একজন পেশাদার মনোচিকিৎসকের সহায়তা নিন।

তথ্যসূত্র: ন্যাশনাল হেলথ্ সার্ভিস

এএমপি/জেআইএম