অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে সিজারিয়ান অপারেশন করাতে অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকায় নিয়ে যাচ্ছিলেন স্বামী মাওলানা বিল্লাল ফকির। মাঝপথে ঢাকা-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়েতে অ্যাম্বুলেন্সের সঙ্গে বাসের ধাক্কা লেগে প্রাণ যায় একই পরিবারের চারজনসহ পাঁচজনের। তবে ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূ রোজিনা আক্তার (৩২)।
Advertisement
পরে সন্ধ্যায় ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে সিজারিয়ান অপারেশন হলে রোজিনার কোলজুড়ে আসে এক ছেলেসন্তান। তবে জন্ম নেওয়ার আগেই নবাগত ছেলে হারালো তার বাবাকে। বাবারও দেখা হলো না তিন মেয়ের পরে জন্ম নেওয়া একমাত্র ছেলে সন্তানকে। এই ঘটনা শোকাচ্ছন্ন করেছে স্বজন ও গ্রামবাসীদের। চলছে শোকের মাতম।
নিহত চারজনের বাড়ি মাদারীপুর সদর উপজেলার মিঠাপুর গ্রামে। নিহতরা হলেন মাওলানা বিল্লাল ফকির (৪০), তার বাবা সামাদ ফকির (৬০), মা সাহেদা বেগম (৫০) ও তার ছোট বোন আফসানা আক্তার (২০) এবং অ্যাম্বুলেন্স চালক মাহবুব সরদার।
এদিকে নিহতদের পারিবারিক কবরস্থানে দাফনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি খোঁড়া হয়েছে চারটি কবর। একসঙ্গ সেখানে দাফন করা হবে তাদের।
Advertisement
স্থানীয় ও নিহতের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার (৮ মে) সকালে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী রোজিনা আক্তারকে অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকায় নিয়ে যাচ্ছিলেন স্বামী বিল্লাল ফকির। মাঝপথে ঢাকা-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ের মুন্সিগঞ্জের নিমতলা এলাকায় অ্যাম্বুলেন্সের চাকা ফেটে যায়। চালক অ্যাম্বুলেন্স থামিয়ে চাকা পরিবর্তন করছিলেন। এসময় কুষ্টিয়া থেকে ঢাকাগামী গোল্ডেন লাইন পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাস অ্যাম্বুলেন্সকে চাপা দেয়। এতে মারা যান বিল্লাল ফকির, তার বাবা সামাদ ফকির, মা সাহেদা বেগম ও তার ছোট বোন আফসানা আক্তার এবং অ্যাম্বুলেন্স চালক মাহবুব সরদার।
এ ঘটনায় আহত হন অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূসহ তিনজন। একসঙ্গে একই পরিবারের চারজনসহ পাঁচজন নিহতের ঘটনায় পরিবারসহ গ্রামজুড়ে চলছে শোকের মাতম।
স্থানীয়রা জানান, দুর্ঘটনার পর আহত অন্তঃসত্ত্বা রোজিনাকে ঢাকার ধানমন্ডির একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে সন্ধ্যায় তার সিজারিয়ান অপারেশন করানো হয়। একটি ছেলে সন্তান জন্ম দেন তিনি। রোজিনা আক্তারের আরও তিনটি মেয়ে আছে। তারা স্থানীয় মাদরাসায় পড়ে।
প্রতিবেশী মুন্নি আক্তার বলেন, ‘একসঙ্গে একই পরিবারের চারজন মারা যাবে, এটা কখনো বুঝতে পারিনি। এই শোক আমরা কী করে সইবো! এটা মেনে নেওয়ার মতো নয়। আমরা বাসচালকের শাস্তি চাই।’
Advertisement
নিহত বিল্লালের ফুপাতো ভাই মাওলানা গোলাম রহমান বলেন, পরিবারের কেউ এই মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না। এ ঘটনায় গোল্ডেন লাইন পরিবহনের চালকের ফাঁসি চাই। বেপরোয়া গতির কারণেই এই দুর্ঘটনা ঘটেছে।
মাদারীপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ওয়াদিয়া শাবাব বলেন, একসঙ্গে পাঁচজন নিহতের ঘটনা খুবই মর্মান্তিক। নিহতদের পরিবারকে এখন সমবেদনা জানানো ছাড়া আর কিছুই দেওয়ার নেই। সরকারিভাবে যত ধরনের সহযোগিতা করা যায়, সে বিষয়ে উপজেলা প্রশাসন তাদের পাশে থাকবে।
আয়শা সিদ্দিকা আকাশী/এসআর/জেআইএম