আইন-আদালত

ফেমডম সেশনের নামে পুরুষ নির্যাতন: দুই নারী রিমান্ডে

ফেমডম সেশনের নামে পুরুষ নির্যাতন: দুই নারী রিমান্ডে

ফেমডম সেশনের নামে পুরুষকে উলঙ্গ করে নির্যাতনের ভিডিও ধারণের ঘটনায় পর্নোগ্রাফি আইনে করা মামলায় গ্রেফতার দুই নারীর দুদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।

Advertisement

বুধবার (৭ মে) রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের শুনানি শেষে এ আদেশ দেন ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. সেফাতুল্লাহ।

রিমান্ডপ্রাপ্ত দুই আসামি হলেন- ময়মনসিংহ জেলার পাগলা থানার মায়েরা বড়বাড়ী গ্রামের মো. মনিরুজ্জামানের মেয়ে ও বর্তমানে রাজধানী বসুন্ধরার বাসিন্দা শিখা আক্তার (২৫), যার ছদ্মনাম মিস্ট্রেস ফারহানা মিলি এবং ঢাকার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার ‘জি’ ব্লকের সাত নম্বর রোডের ৫৯৬ নম্বর বাড়ির আবুল বাসার খোকনের মেয়ে সুইটি আক্তার জারা (২৫), যার ছদ্মনাম মিস্ট্রেস জেরি।

এদিন এ দুই আসামিকে আদালতে উপস্থিত করে পাঁচদিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ভাটারা থানা পুলিশের উপপরিদর্শক ইকবাল হোসেন। অন্যদিকে, আসামিদের রিমান্ড বাতিল ও জামিন চেয়ে আবেদন করে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে প্রত্যেকের জামিন নামঞ্জুর করে দুদিনের রিমান্ডের আদেশ দেন বিচারক।

Advertisement

এর আগে গত বৃহস্পতিবার বিকেলে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার জি-ব্লকের একটি বাসা থেকে ওই দুজনকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের কাছ থেকে বিকৃত যৌনাচারে ব্যবহৃত একটি চাবুক, পরিধেয় বিশেষ পোশাক, হাই হিল, বুট জুতা ও মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়। এদিনই তাদের আদালতে সোপর্দ করা হলে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন বিচারক। কখনো চাবুক দিয়ে, কখনোবা হাই হিল বুট জুতা দিয়ে বিবস্ত্র এক পুরুষকে আঘাত করছে বিশেষ পোশাকের একাধিক নারী। আর এ দৃশ্য মোবাইল ফোন দিয়ে ভিডিও করছেন আরেক নারী। এ ধরনের নির্যাতনের ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।

জানা যায়, এটা এক ধরনের বিকৃত পর্নো ভিডিও। যে পুরুষটিকে নির্যাতন করা হচ্ছে তিনি স্বেচ্ছায় অর্থের বিনিময়ে নির্যাতিত হচ্ছেন, তাকে বলা হয় ‘স্লেভ’। যেসব নারীরা নির্যাতন করছেন তাদের বলা হয় ‘মিসট্রেস’। অন্যদিকে নির্যাতনের এ বিষয়টির নাম দেওয়া হয়েছে ‘ফেমডম সেশন’। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ ধরনের ভিডিও প্রচার করে ‘ফেমডম সেশন’ নেওয়ার জন্য প্রলুব্ধ করা হয় পুরুষদের। রাজধানীর অভিজাত এলাকায় গড়ে তোলা হচ্ছে এ ধরনের বিকৃত যৌনাচারের আস্তানা।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারী মো. আব্দুল্লাহ নামে একজনের করা মামলার পরিপ্রেক্ষিতে ওই দুই নারীকে গ্রেফতার করা হয়। মামলা করার আগে আব্দুল্লাহ নিজে স্লেভ (নির্যাতিত হতে চাওয়া পুরুষ) হতে চেয়ে যোগাযোগ করেন চক্রের এক নারী সদস্যের সঙ্গে। পরে তাদের দেওয়া ঠিকানায় গিয়ে ঘটনার সত্যতা জানতে পেরে মামলা করেন ভাটারা থানায়।

মামলার এজাহারে বাদী আব্দুল্লাহ উল্লেখ করেন, গত ২৯ এপ্রিল রাতে ফেসবুকের একটি অ্যাকাউন্টে তিনি দেখতে পান, পুরুষদের উলঙ্গ করে শারীরিক নির্যাতন ও বিকৃত যৌনাচারের ভিডিও প্রচার করা হচ্ছে। এ কার্যকলাপে জড়িত ব্যক্তিরা টেলিগ্রাম ও অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এসব ভিডিও ছড়িয়ে দেয়। জড়িত নারীরা নিজেদের ‘মিসট্রেস’ হিসেবে পরিচয় দেয় এবং মিস্ট্রেসদের ‘ফেমডম সেশন’ যেসব পুরুষরা নিয়ে থাকে তাদের ‘স্লেভ’ বলে। পুরুষরা টাকার বিনিময়ে ওই নারীদের কাছে নির্যাতিত হতে আগ্রহী হয়, যা ‘ফেমডম সেশন’ নামে পরিচিত।

Advertisement

ঘটনার সত্যতা জানতে তিনি নিজ পরিচয় গোপন করে চক্রের নির্দেশনা অনুযায়ী ফেসবুক মেসেঞ্জারের মাধ্যমে যোগাযোগ করে চক্রটির সদস্য ফারজানা মিলির সঙ্গে। তাদের দেওয়া বিকাশ নম্বরে পাঠান ৫০০ টাকা। টাকা পাওয়ার পর আব্দুল্লাহকে দেওয়া হয় বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার একটি বাসার ঠিকানা। তাদের দেওয়া ঠিকানা অনুযায়ী ৩০ এপ্রিল তিনি পৌঁছে যান সেখানে। গিয়ে দেখতে পান শিখা আক্তার ও সুইটি আক্তারসহ অজ্ঞাতপরিচয় আরও কয়েকজন একজন পুরুষকে বিবস্ত্র করে শারীরিক নির্যাতন করছেন এবং মোবাইল ফোনে ভিডিও ধারণ করছেন। এ ঘটনায় ভাটারা থানায় মামলা দায়ের করেন তিনি।

আজ রিমান্ড আবেদনে তদন্তকারী কর্মকর্তা উপপরিদর্শক ইকবাল হোসেন উল্লেখ করেন, আসামিরা কোনো পর্নোগ্রাফি উৎপাদন এবং বিক্রয় চক্রের সদস্য কি না তা জানার জন্য তাদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন। তাই তাদের রিমান্ড চাওয়া হয়েছিল। আদালত তাদের দুদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।

এমআইএন/এমএএইচ/