দেশজুড়ে

পরিত্যক্ত প্লাস্টিকের বোতল দিয়ে অটোরিকশাচালকের দৃষ্টিনন্দন বাড়ি

পরিত্যক্ত প্লাস্টিকের বোতল দিয়ে অটোরিকশাচালকের দৃষ্টিনন্দন বাড়ি

গাইবান্ধায় কোমল পানীয়র পরিত্যক্ত প্লাস্টিকের বোতল দিয়ে দৃষ্টিনন্দন বাড়ি তৈরি করে তাক লাগিয়েছেন আব্দুল হাকিম খান (৩২) নামের একজন অটোরিকশাচালক। বাড়িটি নির্মাণে খরচও পড়েছে কম। স্থানীয়রা এর নাম দিয়েছেন ‘বোতল বাড়ি’। বৈচিত্র্যময় বাড়িটি দেখতে অনেকে ভিড় করছেন।

Advertisement

অটোরিকশাচালক আব্দুল হাকিম গাইবান্ধা জেলা শহর থেকে ২০ কিলোমিটার অদূরে সুন্দরগঞ্জ উপজেলার পশ্চিম ছাপড়হাটী গ্রামের বাসিন্দা।

আব্দুল হাকিম খানের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে তিনি অটোরিকশা চালান। একদিন ইউটিউবে দেখতে পান ফেলে দেওয়া কোমল পানীয়র বোতল দিয়ে বাড়ি বানানো যায়। সেই থেকে তার মনে বাসনা জাগে তিনিও বোতল দিয়ে একটি বাড়ি তৈরি করবেন। অটো চালানোর সুবাদে বিভিন্ন স্থান থেকে ফেলে দেওয়া বোতল সংগ্রহ করতে থাকেন তিনি। পরবর্তী সময়ে রাজমিস্ত্রি ডেকে এনে বোতল দিয়ে বাড়ি তৈরি করেন।

বোতল দিয়ে বাড়ির কাজ করছেন রংপুরের হারাগাছা গ্রামের রাজমিস্ত্রি বাদশা মিয়া। ৩০ বছরের রাজমিস্ত্রির কাজ করার সুবাদে বাড়িঘর তৈরির অভিজ্ঞতা রয়েছে তার। সেই অভিজ্ঞতার আলোকে তিনি বোতল দিয়ে বাড়িটি কাজ করছেন।

Advertisement

মিস্ত্রি বাদশা মিয়া বলেন, বাড়িটি তৈরির শুরুতে প্রাথমিকভাবে সিমেন্টের খুঁটি দিয়ে অবকাঠামো তৈরি করেন। এরপর প্লাস্টিকের বোতলগুলোয় বালু ও মাটি ভর্তি করে সিমেন্ট দিয়ে দেওয়ালের গাঁথুনি করেন। গাঁথুনির ওপরে দেন টিনের চাল। এভাবেই তৈরি হয় প্লাস্টিকের বোতল দিয়ে বাড়ি। ইটের তৈরির বাড়ি চেয়ে এই বাড়িতে গরম কম লাগবে।

বাড়ির মালিক আব্দুল হাকিম খান বলেন, ‌‘এই বাড়ির মিস্ত্রি হিসেবে যিনি কাজ করছেন তিনি সম্পর্কে আমার মামা শ্বশুর। একদিন তার বাড়িতে দাওয়াত খেতে গিয়ে বোতল দিয়ে বাড়ি তৈরির কথা বলি। প্রথম দিকে বোতলসহ খরচ বেশি পড়বে বলে সম্মতি দেননি। পরে আমি সবকিছু খরচ করতে কোনো সমস্যা হবে না জানালে পরে তিনি রাজি হন।’

তিনি আরও জানান, বাড়িটি তৈরি করতে তিন রুমে ৩০ হাতে ১৭ হাজার ৮৬৫ বোতল লেগেছে। ছাদ ঢালাইয়ের কাজ এখনো বাকি আছে। এ পর্যন্ত খরচ হয়েছে চার লাখ টাকা। সময় লেগেছে আড়াই মাস। আর সিমেন্ট, বালু, কাঠ, বোতল, রাজমিস্ত্রির পারিশ্রমিক মিলিয়ে খরচ হয়েছে প্রায় দেড় লাখ টাকা।

আব্দুল হাকিম বলেন, শুধু ইট-সিমেন্ট দিয়ে বাড়ি তৈরি করলে খরচ হতো প্রায় চার লাখ টাকা। কিন্তু পরিত্যক্ত প্লাস্টিকের বোতল দিয়ে এই বাড়ি নির্মাণে খরচ হয়েছে অনেক কম। বাড়িটি তৈরির সময় এলাকার অনেকেই এসে নির্মাণকাজ দেখছেন। দেওয়ালে ইটের পরিবর্তে বোতল দেওয়ায় কেউ কেউ নেতিবাচক কথা বলেছে। অনেকে তো আমি পাগল হয়ে গেছিও বলতেন। এখন বাড়িটি পরিবেশবান্ধব হবে জেনে অনেকেই প্রশংসা করছেন।

Advertisement

সরেজমিন দেখা যায়, আব্দুল হাকিমের ‘বোতল বাড়ির’ পাশে আম, কাঁঠাল, নারিকেল, সুপারিসহ বিভিন্ন প্রজাতির অনেক গাছ রয়েছে। এসবের মধ্যেই তৈরি হয়েছে দৃষ্টিনন্দন এই বাড়ি। বাড়িটির বাইরের দেওয়ালে কোমল পানীয়র বোতলের পেছনের অংশ আর ঘরের ভেতরের অংশে বোতলের মুখের অংশ রয়েছে। এখনো ছাদ ঢালাইয়ের কাজ বাকি আছে। এসময় বাড়িটি দেখার জন্য কয়েকজন যুবকসহ শিক্ষার্থীরা আসেন।

জারিন তাজমিন নামের একজন শিক্ষার্থী বলেন, ‘প্লাস্টিকের বাড়ি শুধু ইউটিউবে দেখেছি। আজ সামনাসামনি দেখে খুব ভালো লাগছে। আমার কয়েকজন বান্ধবীসহ আমরা বাড়ি দেখতে এসেছি।’

‘বোতল বাড়ি’ দেখতে আসা সাদুল্লাপুর উপজেলা কামারপাড়ার বাসিন্দা মোসলেম আলী বলেন, ‘এই বাড়ির কথা আগেই শুনেছি। তবে আজ দেখতে এসেছি। প্লাস্টিকের বোতল দিয়ে অভিনব কায়দায় তৈরি বাড়িটি দেখে আমি অভিভূত।’

পরিবেশ অধিদপ্তর গাইবান্ধা জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মুহাম্মদ হেদায়তুল ইসলাম বলেন, ‘প্লাস্টিক পরিবেশ দূষণ করে। কিন্তু সেই প্লাস্টিককে ইতিবাচকভাবে কাজে লাগিয়ে যে বাড়ি তৈরি করেছেন, তা অত্যন্ত পরিবেশবান্ধব। কোমল পানীয়র প্লাস্টিকের বোতল যত্রতত্র ফেলে না দিয়ে এসব বোতল সংরক্ষণ করে বাড়ি তৈরি বা অন্য কোনো ভালো কাজে ব্যবহার করলে আমরা পরিবেশ দূষণের হাত থেকে রক্ষা পাবো।’

এ বিষয়ে প্রকৌশলী শাহিদুল ইসলাম বলেন, প্লাস্টিকের তৈরি বাড়িগুলো সৌন্দর্যবর্ধন হিসেবে মানুষ করে থাকে। ঘরগুলো না দেখলে টেকসইয়ের বিষয়ে ভালোভাবে বলা যাবে না। এভাবে বাড়ি করলেও ঝুঁকি কম থাকে যদি দেওয়াল গাঁথুনির আগে চারদিক দিয়ে পিলারগুলোতে পরিমাণমতো রড়, সিমেন্ট, বালু ব্যবহার করা হয়।

এ এইচ শামীম/এসআর/এএসএম