গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বাহিনীর টানা হামলায় বুধবার (৭ মে) সকাল থেকে অন্তত ৬১ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। অধিকাংশ হামলা হয়েছে জনবহুল এলাকায়, যেখানে সাধারণ মানুষ খাদ্য ও নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে ছিল। অবরুদ্ধ উপত্যকাটিতে একদিকে যেমন হামলা চলছে, অন্যদিকে মার্চের শুরু থেকে চালু থাকা কঠোর অবরোধে তীব্র খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে, যা ক্ষুধার যন্ত্রণা বাড়িয়ে তুলছে।
Advertisement
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা জানিয়েছে, গাজা সিটির আল-ওয়েহদা স্ট্রিটে থাই এবং পালমিরা রেস্টুরেন্টের কাছে একটি গোয়েন্দা ড্রোন থেকে একই সময়ে দুটি স্থানে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়—একটি রেস্টুরেন্টের ভেতরে, আরেকটি পাশের একটি মোড়ে। এতে অন্তত ১৭ জন নিহত হন।
আরও পড়ুন>>
গাজা ‘দখলের পরিকল্পনা’ ইসরায়েলি মন্ত্রিসভায় অনুমোদন গাজায় অভিযান জোরদারে রিজার্ভ সৈন্যদের ডাকছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী একদিনেই গাজা-ইয়েমেন-লেবানন-সিরিয়ায় ইসরায়েলের হামলাআল-জাজিরার গাজা প্রতিনিধি হানি মাহমুদ জানিয়েছেন, এটি ছিল শহরের অন্যতম জায়গা, যেখানে মানুষ এখনো কোনোভাবে খাবার সংগ্রহ করতে পারছিল।
Advertisement
মাহমুদের কথায়য়, টেবিল-চেয়ার সব এলোমেলো হয়ে পড়ে আছে, মাটিতে রক্ত ছড়িয়ে রয়েছে। আহতদের রক্তক্ষরণ এত বেশি ছিল যে চারপাশে শুধু রক্তের দাগ।
একই সময় নিকটবর্তী একটি মোড়ে হওয়া আরেক হামলার স্থান থেকে মাহমুদ জানিয়েছেন, মাটিতে ছড়িয়ে থাকা মরদেহগুলো রক্তাক্ত ও ছিন্নভিন্ন অবস্থায় পড়ে ছিল।
এছাড়া, গাজা শহরের তুফাহ এলাকায় আল-কারামা স্কুলে ইসরায়েলি বোমাবর্ষণে আরও ১৩ জন নিহত হয়েছেন। উত্তরের জাবালিয়ায় একটি বাড়িতে হামলায় নিহত হন আরও তিনজন।
দক্ষিণাঞ্চলীয় খান ইউনিস শহরে একটি পরিবারের সদস্যসহ আটজন নিহত হন—এর মধ্যে পাঁচজন একটি বাড়িতে হামলায় মারা যান। মধ্য গাজার দেইর আল-বালাহ এলাকায় একটি তাঁবুতে হামলায় এক শিশুসহ তিনজন নিহত হন। বানি সুহেইলা গ্রামে একটি বাড়িতে হামলায় আরও এক দম্পতি নিহত হন।
Advertisement
মঙ্গলবার রাতে মধ্য গাজার বুরেইজ শরণার্থী শিবিরের একটি স্কুলে আগের হামলার ধ্বংসস্তূপ থেকে আরও চারটি মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। ফিলিস্তিনি সিভিল ডিফেন্স জানিয়েছে, সেখানে অন্তত ৩০ জন নিহত হয়েছেন এবং বহু আহত হয়েছেন।
হানি মাহমুদ আরও জানান, লোকজন নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য ছুটছিল, কারণ আবাসিক ভবন ও আশ্রয়কেন্দ্রগুলো বারবার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হচ্ছে। খান ইউনিসের আবাসান এলাকায় একজন কৃষক নিহত হন। যিনি কয়েক মাস আগে রোপণ করা ফসল কাটছিলেন, যা ছিল পরিবারের একমাত্র খাবারের সম্ভাব্য উৎস।
গাজার ওপর চালু থাকা ইসরায়েলি অবরোধের কারণে ২ মার্চ থেকে জ্বালানি ও খাদ্যপণ্য সরবরাহ প্রায় বন্ধ। সাহায্যকারী সংস্থাগুলোর মতে, গাজায় খাবারের মজুদ প্রায় শেষের পথে।
জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী সংস্থা এক্স-এ বলেছে, ইসরায়েলকে অবশ্যই এই অবরোধ তুলে নিতে হবে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের একতাবদ্ধ উদ্যোগ ছাড়া এই মানবিক বিপর্যয় আরও ভয়াবহ রূপ নিতে যাচ্ছে।
কেএএ/