ভোলার প্রায় ২২ লাখ মানুষের সুচিকিৎসার জন্য ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতাল থাকলেও চিকিৎসকসহ নানা সংকটে ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসা সেবা। জেলার সাত উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে এই হাসপাতালে রোগী এলেও মিলছে না কাঙ্ক্ষিত সেবা। ফলে বাধ্য হয়ে সুচিকিৎসার জন্য রোগীদের নৌপথ পাড়ি দিয়ে যেতে হয় বরিশাল ও ঢাকায়।
Advertisement
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, চিকিৎসকসহ নানা সংকটের কারণে এই অবস্থা। তবে জেলাবাসীর দাবি, ভোলায় সরকারি মেডিকেল কলেজ হলে পর্যাপ্ত চিকিৎসক থাকবে এবং মিলবে সুচিকিৎসাও। তাই সরকারি মেডিকেল কলেজ স্থাপনসহ ৫ দফা দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন ছাত্র-জনতা।
সরেজমিনে জানা গেছে, ভোলা জেলার প্রায় ২২ লাখ মানুষের চিকিৎসা সেবার জন্য একমাত্র ভরসা ভোলা ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতাল। কিন্তু চিকিৎসক ও নার্সসহ নানা সংকটে প্রতিদিনই ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসাসেবা। দূরদূরান্ত থেকে রোগীরা এসেও পাচ্ছেন না কাঙ্ক্ষিত সেবা। সুচিকিৎসার জন্য তাদের বরিশাল ও ঢাকায় যেতে হয়। আর ভোলা জেলার চারদিকে নদী থাকায় তাদের পাড়ি দিতে হয় ঝুঁকিপূর্ণ নৌপথ।
ভোলা ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের অফিস সূত্রে জানা গেছে, হাসপাতালটিতে বিভিন্ন পদে ৬১ জন চিকিৎসকের পদ থাকলেও রয়েছেন মাত্র ১৯ জন। এরমধ্যে একজন তত্ত্বাবধায়ক ও একজন সহকারী পরিচালক। সিনিয়র কনসালটেন্টের ১০টি পদ থাকলেও রয়েছেন ৩ জন, জুনিয়র কনসালটেন্টের ১৩টি পদের বিপরীতে রয়েছেন ৩ জন, ৪ জন মেডিকেল অফিসারের পদ থাকলেও রয়েছেন মাত্র একজন। অন্যান্য চিকিৎসকের পদেও একই অবস্থা।
Advertisement
হাসপাতালে ভর্তি রোগী মো. নীরব হোসেন জানান, তিনি বোরহানউদ্দিন উপজেলা থেকে ৪ দিন আগে জ্বর নিয়ে ভর্তি হয়েছেন। প্রতিদিন সকালে একজন চিকিৎসক এসে কোনো রকম দেখে ওষুধ লিখে চলে যান। চার দিনে কোনো পরিবর্তন হয়নি।
মরজিনা বেগম জানান, তার স্বামী স্ট্রোক করার পর ভোলা ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে এসেছেন। চিকিৎসকরা পরীক্ষা করে ওষুধ লিখে দিয়েছেন। গত দুইদিন ধরে খাওয়ালেও কোনো পরিবর্তন হয়নি। এখন ডাক্তারের কাছে গেছে বলেন উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল নিয়ে যেতে। টাকার অভাবে আমরা নিতে পারছি না। আমরা গরিব মানুষ, ভোলায় যদি ভালো চিকিৎসা হতো তাহলে বরিশালে নিতে হতো না।
আরেক রোগীর স্বজন শাওন চৌধুরী জানান, ভোলা ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসক সংকটে চিকিৎসা হচ্ছে না। বেশিরভাগ রোগীকেই বরিশাল ও ঢাকায় রেফার্ড করছেন ডাক্তাররা। এখানে যদি ভালো চিকিৎসা নাই হয় তাহলে এত বড় হাসপাতাল থেকে লাভ কী?
এদিকে ভোলায় একটি সরকারি মেডিকেল কলেজ স্থাপনসহ ৫ দফা দাবিতে কয়েক সপ্তাহ ধরেই আন্দোলন করছে জেলার ছাত্র-জনতাসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল।
Advertisement
আন্দোলনকারী মো. রাহিম ইসলাম, আব্দুল্লাহ আল আমিন, আবু জাফর ও মো. মেহেদীসহ কয়েকজন জানান, ভোলা ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের সুন্দর ভবনই রয়েছে। কিন্তু এখানে মানুষ এসে কাঙ্ক্ষিত সেবা পাচ্ছে না। যদি ভোলায় একটি সরকারি মেডিকেল কলেজ থাকতো তাহলে মানুষও কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসা সেবা পেতো।
তারা আরও জানান, ভোলায় একটি সরকারি মেডিকেল কলেজ স্থাপনসহ ৫ দফা দাবিতে কয়েক সপ্তাহ ধরেই আন্দোলন ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছি। দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাবো।
ভোলা ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. শেখ সুফিয়ান রুস্তম জানান, ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতাল হলেও ১০০ শয্যার জনবল নিয়ে চলছে এই হাসপাতালটি। সেখানেও রয়েছে জনবল সংকট। এতে চাহিদা অনুযায়ী সেবা দিতে পারছেন না তারা। সংকট দূরের জন্য তিনি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে বার বার চিঠি পাঠাচ্ছেন। চিকিৎসক সংকট দূর হলে রোগীরা কাঙ্ক্ষিত সেবা পাবেন।
ভোলা সিভিল সার্জন ডা. মনিরুল ইসলাম জানান, শুধু ভোলা ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালই নয়, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতেও চিকিৎসকের সংকট রয়েছে। ভোলায় সরকারি মেডিকেল কলেজ স্থাপন হলে ভোলার মানুষ উন্নত চিকিৎসা সেবা পাবেন। জেলাবাসীকে চিকিৎসা সেবার জন্য আর নদী পাড়ি দিতে হবে না। তাই ভোলায় একটি সরকারি মেডিকেল কলেজ স্থাপনের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠাবেন।
এফএ/এমএস