বিভিন্ন দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়ার (রিপন মিয়া) বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
Advertisement
দুদকের উপ-পরিচালক ও জনসংযোগ কর্মকর্তা আকতারুল ইসলাম জাগো নিউজকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
গণঅভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতা হত্যা মামলায় আসামির তালিকায় নাম রয়েছে তোফাজ্জল হোসেন মিয়ার। ৫ আগষ্টের পর থেকে তিনি আত্মগোপনে রয়েছেন।
এর আগে গত বছরের ৭ আগষ্ট মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়ার চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করা হয়।
Advertisement
সাবেক প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব থাকাকালে ২০২২ সালের ৭ ডিসেম্বর মুখ্য সচিব হিসেবে নিয়োগ পান জ্যেষ্ঠ সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া। ২০২৩ সালের ৪ জুলাই চাকরির মেয়াদ শেষ হওয়ায় তাকে একই পদে এক বছরের জন্য চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয় তৎকালীন সরকার। এরপর ২০২৪ সালের ২৬ জুন তার চুক্তির মেয়াদ আরও এক বছর বাড়ানো হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, দুদকের গোয়েন্দা ইউনিটের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে তোফাজ্জল হোসেনের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রাথমিকভাবে সত্য প্রমাণিত হওয়ায় অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। দুদকের উপ-পরিচালক মো. ফজলুল হকের নেতৃত্বে চার সদস্যের একটি তদন্ত দল গঠন করা হয়েছে। এই দলের অন্য সদস্যরা হলেন সহকারী পরিচালক নাছরুল্লাহ হোসাইন, মুবাশ্বিরা আতিয়া তমা এবং উপ-সহকারী পরিচালক আফিয়া খাতুন।
দুদকের যে গোয়েন্দা প্রতিবেদনের ভিত্তিতে তার বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করা হয়েছে তাতে বলা হয়েছে- তিনি পিরোজপুর জেলার ভান্ডারিয়ায় তার পৈতৃক বাড়িতে একটি চারতলা ভবন নির্মাণ করেছেন এবং এলাকায় অনেক জমির মালিক।এছাড়া ঢাকার মিরপুর-২ তে তার নামে একটি বাড়ি আছে এবং ‘প্রত্যাশা ভবন’ নামের একটি বাড়ি তিনি স্ত্রীর বাবার নামে করে দিয়েছেন বলে জানা যায়। দিয়াবাড়িতে তার নামে একটি প্লট ও ফ্ল্যাট রয়েছে, যেটি সড়ক বিভাগ থেকে পাওয়া বলে অভিযোগ আছে।
প্রতিবেদনের একটি কপি জাগো নিউজের সংগ্রহে রয়েছে।
Advertisement
আরও জানা গেছে, পূর্বাচল এবং বিসিএস অ্যাডমিন হাউজিং সোসাইটিতেও তার নামে প্লট আছে। তিনি এলাকায় প্রভাবশালী হিসেবে পরিচিত ছিলেন এবং তার সুপারিশেই পৌর মেয়র, উপজেলা চেয়ারম্যান ও সংসদ সদস্যদের মনোনয়ন নির্ধারিত হতো।
ভান্ডারিয়ার চেয়ারম্যান মিরাজুল ইসলাম মিরাজ তাকে দুবাইয়ে একটি ফ্ল্যাট উপহার দিয়েছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া কানাডা ও অস্ট্রেলিয়ায়ও তার নামে বা পরিবারের সদস্যদের নামে ফ্ল্যাট ও সম্পত্তি রয়েছে বলে জানা যায়।
নিজের বাবার নামে একটি ‘অস্তিত্বহীন’ এতিমখানার নামে সরকারি অর্থ আত্মসাৎ করার অভিযোগ রয়েছে এই আমলার বিরুদ্ধে। ১ বছর আগে বরাদ্দ নেওয়া হলেও এতিমখানাটি ২০২৪ সালের জুনে নিবন্ধিত হয়।
স্থানীয় সমাজসেবা কর্মকর্তারা দুদককে জানিয়েছেন, প্রভাব খাটিয়ে নিয়ম উপেক্ষা করে মাত্র কয়েক দিনের মধ্যে এতিমখানাটির নিবন্ধন দেওয়া হয়। এই এতিমখানার সভাপতি হিসেবে আছেন তোফাজ্জলের বড় ভাই মোয়াজ্জেম হোসেন মিয়া। স্থানীয়দের মতে, যেখানে এতিমখানা দেখানো হয়েছে, সেখানে বসবাসকারী ছাত্ররা কেউই এতিম নয়।
এসএম/এএমএ