ব্যক্তিশ্রেণির বিনিয়োগকারীর জন্য ক্যাপিটাল গেইন ট্যাক্স সম্পূর্ণ বাদ দেওয়ার দাবি জানিয়েছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)। একই সঙ্গে এক লাখ টাকা টার্নওভারের ওপর যে ৫০ টাকা অগ্রিম আয়কর রয়েছে তা কমিয়ে ১৫ টাকা করার দাবি জানানো হয়েছে। পাশাপাশি তালিকাভুক্ত ও তালিকাভুক্ত নয় এমন কোম্পানির মধ্যে করের ব্যবধান ন্যূনতম ১০ শতাংশ করার দাবি জানিয়েছে দেশের প্রধান শেয়ারবাজারের কর্তৃপক্ষ।
Advertisement
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ড. আনিসুজ্জামান চোধুরীর মাধ্যমে সরকারের কাছে এসব দাবি জানানো হয়েছে। বুধবার (২৮ মে) ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ডিবিএ)- এর প্রতিনিধিদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে এ তথ্য জানান ডিএসই চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলাম।
গতকাল মঙ্গলবার বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ৯৫৭তম কমিশন সভা হয়। এতে বেনিফিশিয়ারি ওনার্স (বিও) হিসাবের মেইনটেন্যান্স ফি ৪৫০ টাকা থেকে কমিয়ে ১৫০ টাকা করা, সমন্বিত গ্রাহক হিসাব (সিসিএ) থেকে অর্জিত সুদ আয়ের ২৫ শতাংশ স্টক এক্সচেঞ্জের ইনভেস্টরস প্রটেকশন ফান্ডে জমা দিয়ে বাকি অর্থ ব্রোকাররা ব্যবহার করতে পারার বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়। এছাড়া চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে কমোডিটি মার্কেট চালু এবং বার্জার পেইন্ট বাংলাদেশ লিমিটেডের রাইট শেয়ার অনুমোদন বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে এই বৈঠক হয়।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন ডিএসইর পরিচালক মো. শাকিল রিজভী, মিনহাজ মান্নান ইমন, রিচার্ড ডি রোজারিও, ডিবিএ প্রেসিডেন্ট সাইফুল ইসলাম প্রমুখ।
Advertisement
আরও পড়ুন
উদ্যোক্তা-পরিচালকদের ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণে ৪৪ কোম্পানিকে চিঠি বিনিয়োগ পরিবেশ-সুশাসন নিশ্চিতে সংস্কার বাজেটে প্রতিফলিত হওয়া উচিতবৈঠকে ডিএসই চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলাম বলেন, গতকাল বিএসইসির কমিশন সভায় ৪টি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত হয়েছে। আপনাদের দীর্ঘদিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বিও হিসাবের মেইনটেন্যান্স ফি সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসা হয়েছে। ব্রোকারেজ হাউস এবং বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে সিসি অ্যাকাউন্টের ইন্টারেস্ট ব্রোকারদের ব্যবহার করা এবং চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে কমোডিটি মার্কেট চালুর প্রবিধানমালা অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও গতকালের বৈঠকে বার্জার পেইন্ট বাংলাদেশ লিমিটেডের রাইট শেয়ার অনুমোদিত হয়েছে। এসব সুবিধা বিনিয়োগকারী তথা শেয়ারবাজারে অনুকূল সাড়া পড়বে এবং দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি আকর্ষণীয় ও সর্বজনীন বিনিয়োগের ক্ষেত্র তৈরি হবে বলে আশা করি।
তিনি বলেন, আমরা প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ড. আনিসুজ্জামান চোধুরীর মাধ্যমে সরকারের কাছে প্রস্তাবনা রেখেছি যে, আগামী বাজেটে টার্নওভারের ওপর অগ্রিম যে আয়কর রয়েছে তা এক লাখ টাকায় ৫০ টাকা থেকে কমিয়ে ১৫ টাকা করার জন্য। তালিকাভুক্ত ও তালিকাভুক্ত নয় এমন কোম্পানির মধ্যে করের ব্যবধান ন্যূনতম ১০ শতাংশ করা। ক্যাপিটাল গেইন ট্যাক্স ব্যক্তিশ্রেণির বিনিয়োগকারীর জন্য সম্পূর্ণ বাদ দেওয়া। ব্যক্তিশ্রেণির বিনিয়োগকারী থেকে কর্তন করা ডিভিডেন্ড ট্যাক্স চূড়ান্ত কর দায় হিসেবে বিবেচনা করা। এছাড়া এক লাখ টাকা পর্যন্ত ডিভিডেন্ড ট্যাক্স করমুক্ত রাখা।
শেয়ারবাজারের এই ক্রান্তিকালে স্বল্পমেয়াদে কী কী পদক্ষেপ গ্রহণ করলে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনা যায়- সে বিষয়ে আলোচনার আহ্বান জানান ডিএসই চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলাম। আলোচনায় ডিবিএর সদস্যরা বর্তমান বাজার পরিস্থিতি থেকে উত্তোরণ এবং ভবিষ্যতে বাজারকে শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড় করাতে ডিএসইর বিজনেস ডেভেলপমেন্ট টিম গঠন, মার্কেট কমিউনিকেশন স্ট্র্যাটেজি প্রণয়ন, তারল্য সংকট, ক্যাপিটাল গেইন ট্যাক্স, পলিসি সাপোর্ট, নগদ উত্তোলনের সুবিধা দেওয়া, বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ, আইপিও পদ্ধতির সংস্কার (ডিজিটালাইজড), মন্দ আইপিও না আনা, ডিমিউচুয়ালাইজেশন স্কিম পর্যালোচনা, বিও অ্যাকাউন্ট খোলার পদ্ধতি ডিজিটালাইজড করার মাধ্যমে বৃদ্ধি করা, নতুন বিনিয়োগকারী আনা, ডিএসই মনিটরিং কার্যক্রমে প্রযুক্তির অন্তর্ভুক্তি, টি+১ এবং ডে ট্রেডিং চালু, সরকারি কোম্পানিগুলোকে বাজারে আনা, প্রান্তিক পর্যায়ে শেয়ার ব্যবসার সম্প্রসারণ, প্রাইমারি মার্কেটকে গতিশীল করা, আইপিও প্রসেসকে সহজীকরণের মাধ্যমে ভালো আইপিও আনার জন্য ডিএসই মার্কেটিং কার্যক্রম গতিশীল করা, জাতীয় বাজেটে বিশেষ প্রণোদনা সংযোজন, নেগেটিভ ইক্যুইটির সমাধান ইত্যাদি বিষয়ে আলোকপাত করেন।
Advertisement
ডিএসই চেয়ারম্যান বলেন, আমাদের একটি বিশদ কমিউনিকেশন স্ট্রাটেজি তৈরি ও সে অনুযায়ী মার্কেট স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে নিয়মিত মতবিনিময় করতে হবে। সরকার, বিএসইসি, ডিএসই, ডিবিএ সবাই মিলে কীভাবে মার্কেটকে পজিটিভলি সামনের দিকে এগিয়ে নিতে পারি সে বিষয়ে আমাদের কাজ করতে হবে। ঈদ পরবর্তী সময়ে বাজার উন্নয়নে আমাদের আরও কিছু পরিকল্পনা রয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব পাবলিকলি লিস্টেড কোম্পানিজ, কিছু সম্ভাবনাময় কোম্পানি এবং বাংকের প্রধান নির্বাহীদের সঙ্গে বৈঠক, তা আমরা পর্যায়ক্রমে করে যাবো। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নমেন্ট ট্রেজারি বিল বন্ডের প্রাইমারি অকশনটা যেন স্টক মার্কেটের মাধ্যমে করা হয়, তার জন্য আমরা প্রস্তাব রেখেছি।
এমএএস/কেএসআর/এমএস