কাবিল ও হাবিল মানবজাতির আদিপিতা আদমের (আ.) দুই সন্তান। কাবিল হাবিলকে হত্যা করেছিলেন। এটা ছিল মানবজাতির ইতিহাসে সংঘটিত প্রথম হত্যাকাণ্ডের ঘটনা।
Advertisement
আদমের (আ.) এই দুই সন্তানের মধ্যে কোনো একটি বিষয়ে দ্বন্দ্ব হয়েছিল এবং কার দাবি সঠিক তা বোঝার জন্য উভয়েই কোরবানি করেছিলেন। আল্লাহ তাআলা হাবিলের কোরবানি কবুল করেছিলেন। ফলে কাবিল হাবিলের ওপর ক্রুদ্ধ হয়ে ওঠেন এবং তাকে হত্যার হুমকি দেন। হাবিল কাবিলকে বোঝানোর চেষ্টা করেন, আল্লাহ তাআলা মুত্তাকিদের কোরবানি কবুল করেন। তাই ক্রুদ্ধ না হয়ে, হিংসা না করে কাবিলের উচিত নিজেকে সংশোধন করা। তিনি এও বলেন, তুমি আমাকে হত্যা করলেও আমি তোমাকে হত্যা করবো না, আমি আল্লাহকে ভয় করি। কিন্তু ভাইয়ের সুন্দর উপদেশ ও আচরণ দেখেও কাবিলের মধ্যে শুভবোধ জাগ্রত হয়নি। তিনি নিজের ভাইকে হত্যা করেছিলেন।
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা এই ঘটনা বর্ণনা করেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, আর তুমি তাদের কাছে আদমের দুই পুত্রের সংবাদ যথাযথভাবে বর্ণনা কর, যখন তারা উভয়ে কোরবানি পেশ করল। অতঃপর তাদের একজন থেকে গ্রহণ করা হল, আর অপরজন থেকে গ্রহণ করা হল না। সে বলল, অবশ্যই আমি তোমাকে হত্যা করব। অন্যজন বলল, আল্লাহ শুধু মুত্তাকীদের থেকে গ্রহণ করেন। যদি তুমি আমার দিকে তোমার হাত বাড়াও আমাকে হত্যা করার জন্য, আমি তোমাকে হত্যা করার জন্য আমার হাত তোমার দিকে বাড়াব না। নিশ্চয় আমি সৃষ্টিকুলের রব আল্লাহকে ভয় করি। নিশ্চয় আমি চাই যে, তুমি আমার ও তোমার পাপ নিয়ে ফিরে যাও, ফলে তুমি আগুনের অধিবাসী হও। আর সেটিই হচ্ছে জালিমদের প্রতিদান। অতঃপর তার প্রবৃত্তি তাকে প্ররোচিত করল নিজের ভাইকে হত্যা করতে। ফলে সে তাকে হত্যা করল এবং ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হল। (সুরা মায়েদা: ২৭-৩০)
হাবিল-কাবিলের দ্বন্দ্বের কারণ সম্পর্কে মুফাসসিররা বলেন, যখন আদম (আ.) ও হাওয়া (আ.) পৃথিবীতে আসেন এবং সন্তান জন্মগ্রহণ ও বংশ বিস্তারের ধারা শুরু হয়, তখন প্রতিবার একজন ছেলে ও একজন মেয়ে এ রকম জময সন্তানের জন্ম হতো। তখন পৃথিবীতে মানুষ বলতে শুধু আদমের (আ.) সন্তানরাই ছিলেন। তাই এক বাবা-মায়ের সন্তান হলেও তাদের মধ্যে বিয়ে নিষিদ্ধ ছিল না। তবে এক গর্ভে যে ছেলে ও মেয়ের জন্ম হতো, তারা একে অপরকে বিয়ে করতেন না। এক গর্ভের ছেলে ও অন্য গর্ভের মেয়ের মধ্যে বিয়ে হতো।
Advertisement
এই নিয়মে কাবিলের সঙ্গে জন্মগ্রহণ করা মেয়েটির বিয়ে হওয়ার কথা ছিল হাবিলের সাথে আর হাবিলের সঙ্গে জন্মগ্রহণ করা মেয়েটির বিয়ে হওয়ার কথা ছিল কাবিলের সাথে। কিন্তু ঘটনাচক্রে কাবিলের সহোদরা বোনটি ছিল অত্যন্ত রূপবতী এবং হাবিলের সহদোরা বোনটি ছিল অপেক্ষাকৃত কম রূপবতী। কাবিল ও হাবিলের যখন বিয়ের সময় হলো, কাবিল জেদ ধরলেন যে, তিনি নিজের সহদোরা বোনকেই বিয়ে করবেন। আর হাবিল নিয়ম অনুযায়ী কাবিলের বোনকেই বিয়ে করতে চাচ্ছিলেন।
এই দ্বন্দ্বের কথা আদমের (আ.) কাছে পৌঁছলে তিনি কাবিলকে এ রকম অন্যায় জেদ ধরতে নিষেধ করলেন এবং তাদের তাদের মতভেদ দূর করার উদ্দেশ্যে বললেন, তোমরা উভয়েই আল্লাহর জন্যে নিজ নিজ কোরবানি পেশ কর। যার কোরবানি গৃহীত হবে, তার দাবিই গ্রহণযোগ্য গণ্য হবে। আদম (আ.) জানতেন যে সঠিক দাবি করছে, তার কোরবানিই কবুল হবে। তখনকার নিয়ম অনুযায়ী মানুষ যখন নিজেদের কোরবানি পেশ করতো, তখন কোরবানি কবুল হলে আকাশ থেকে একটি আগুনের গোলা এসে কোরবানির জন্য পেশ করা পশু বা ফসল পুড়িয়ে দিতো। আকাশ থেকে আগুনের গোলা না এলে বোঝা যেত কোরবানি কবুল হয়নি।
হাবিল ছিলেন পশুপালক। তিনি তার পশুপাল থেকে একটি উৎকৃষ্ট দুম্বা কোরবানির জন্য পেশ করলেন কাবিল কৃষিকাজ করতেন। তিনি কিছু শস্য, গম ইত্যাদি কোরবানির জন্য পেশ করলেন। তারপর নিয়ম অনুযায়ী আকাশ থেকে আগুন এসে হাবিলের পেশকৃত পশুটি জ্বালিয়ে দিল। কিন্তু কাবিলের পেশকৃত শস্য যেমন ছিল, তেমনই পড়ে রইল। এর পরে কী ঘটেছে তা কোরআনে বর্ণিত হয়েছে যা আমরা ওপরে উল্লেখ করেছি।
কাবিল হাবিলকে হত্যার পর তার মরদেহ উন্মুক্ত স্থানে ফেলে রেখেছিলেন স্বাভাবিক নিয়মে যা হিংস্র জন্তুর খাবারে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা ছিল। আল্লাহ তাআলা চাননি তার এই নেক বান্দার মরদেহের অসম্মান হোক। তিনি একটি কাক পাঠালেন। কাকটি কাবিলের সামনে মাটি খুঁড়ে অন্য একটি কাকের মরদেহ দাফন করলো। এই দৃশ্য দেখে কাবিলের বোধোদয় হলো যে, একটি কাক পর্যন্ত অন্য কাকের মরদেহ উন্মুক্ত ফেলে রাখে না। আমি তো এই কাকের চেয়েও অধম!
Advertisement
আল্লাহ তাআলা বলেন, তারপর আল্লাহ একটি কাক পাঠালেন, সে মাটি খনন করতে লাগল, সে তার ভাইয়ের লাশ কীভাবে গোপন করবে তা দেখানোর জন্য। সে বলল, ধিক আমাকে! আমি এই কাকটির মতও হতে পারলাম না যাতে আমার ভাইয়ের লাশ গোপন করতে পারি! ফলে সে অত্যন্ত লজ্জিত হল। (সুরা মায়েদা: ৩১)
ওএফএফ/জেআইএম