পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলার নবি ও খলিল হজরত ইবরাহিমের (আ.) অনেক ঘটনা বর্ণিত হয়েছে। এর মধ্যে একটি ঘটনা হলো একবার তিনি আল্লাহর কাছে আবেদন করেছিলেন আল্লাহ তাআলা যেন তাকে দেখান কীভাবে তিনি মৃতকে জীবিত করেন। যদিও ইবরাহিম (আ.) আখেরাতের জীবন ও মৃত্যুর পর পুনরায় জীবিত হওয়ার ব্যাপারে পূর্ণ ইমান রাখতেন, তবুও তিনি তার অন্তরকে নিশ্চিত ও প্রশান্ত করার জন্য প্রমাণ চেয়েছিলেন।
Advertisement
আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَإِذْ قَالَ إِبْرَاهِيمُ رَبِّ أَرِنِي كَيْفَ تُحْيِي الْمَوْتَىٰ قَالَ أَوَلَمْ تُؤْمِن قَالَ بَلَىٰ وَلَـٰكِن لِّيَطْمَئِنَّ قَلْبِي
স্মরণ কর, যখন ইবরাহিম বলেছিলেন, হে আমার রব! আপনি মৃতকে কীভাবে জীবিত করেন, আমাকে দেখান। তিনি বললেন, তুমি কি ইমান আনোনি? সে বলল: অবশ্যই, কিন্তু আমার অন্তর যাতে প্রশান্ত হয়। (সুরা বাকারা: ২৬০)
Advertisement
এরপর আল্লাহ তাআলা ইবরাহিমকে (আ.) চারটি পাখি ধরে নিজের কাছে রেখে সেগুলোকে এমনভাবে লালন-পালন করতে নির্দেশ দিলেন, যেন সেগুলো তার পোষা হয়ে যায় তিনি ডাকলেই তার হাতের কাছে চলে আসে এবং তিনি যেন সেগুলোকে ভালভাবে চিনতেও পারেন। সে অনুযায়ী ইবরাহিম (আ.) চারটি পাখি সংগ্রহ করে পোষ মানালেন।
আল্লাহ তাআলা তখন নির্দেশ দিলেন, ওই পাখিগুলোকে জবাই করে এগুলোর হাড়-মাংস, পাখা ইত্যাদি সবকিছু একসাথে কিমায় পরিণত করুন, তারপর সেগুলোকে ভাল করে মিশিয়ে কয়েকটি ভাগে বিভক্ত করে নিজের পছন্দমত কয়েকটি পাহাড়ে এক-একটি ভাগ রেখে দিন। তারপর এদেরকে ডাকুন। তখন এগুলো আল্লাহর কুদরতে জীবিত হয়ে উড়ে আপনার কাছে চলে আসবে। ইবরাহিম আলাইহিস সালাম তা-ই করলেন। তারপর যখন তিনি পাখিগুলোকে ডাকলেন, সঙ্গে সঙ্গে হাড়ের সাথে হাড়, পাখার সাথে পাখা, গোশতের সাথে গোশত, রক্তের সাথে রক্ত মিলে পূর্বের রূপ ধারণ করল এবং তার কাছে উড়ে এসে উপস্থিত হল।
আল্লাহ তাআলা বলেন,
قَالَ فَخُذۡ اَرۡبَعَۃً مِّنَ الطَّیۡرِ فَصُرۡهُنَّ اِلَیۡكَ ثُمَّ اجۡعَلۡ عَلٰی كُلِّ جَبَلٍ مِّنۡهُنَّ جُزۡءًا ثُمَّ ادۡعُهُنَّ یَاۡتِیۡنَكَ سَعۡیًا وَ اعۡلَمۡ اَنَّ اللّٰهَ عَزِیۡزٌ حَكِیۡمٌ
Advertisement
আল্লাহ তাআলা (ইবরাহিমকে) বললেন, তুমি চারটি পাখি নাও। তারপর সেগুলোকে পোষ মানাও। অতঃপর প্রতিটি পাহাড়ে সেগুলোর টুকরো অংশ রেখে এস। তারপর সেগুলোকে ডাক, সেগুলো দৌড়ে আসবে তোমার কাছে। আর জেনে রাখ, নিশ্চয় আল্লাহ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়। (সুরা বাকারা: ২৬০)
ইবরাহিম (আ.) আল্লাহর নবি এবং তার অত্যন্ত নেক ও প্রিয় একজন বান্দা। তার ইমানের দৃঢ়তা, আল্লাহমুখিতা, একনিষ্ঠতা ছিল অতুলনীয়। তাকে আবুল আম্বিয়া বা নবিদের পিতা বলা হয়। আল্লাহ তাআলা তার বংশের বহু সংখ্যাক ব্যক্তিকে নবুয়্যত দিয়ে সম্মানিত করেছেন। আল্লাহর শেষ নবি হজরত মুহাম্মাদও (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়সাল্লাম) তার বংশধর।
কোরআনে আল্লাহ তাআলা নবি ইবরাহিমের (আ.) আনুগত্য ও একনিষ্ঠতার প্রশংসা করেছেন এবং নবিজিকে নির্দেশ দিয়েছেন তার মিল্লাত বা মতাদর্শ অনুসরণ করতে। আল্লাহ তাআলা বলেন,
إِنَّ إِبْرَاهِيمَ كَانَ أُمَّةً قَانِتًا لِلَّهِ حَنِيفًا وَلَمْ يَكُ مِنَ الْمُشْرِكِينَ شَاكِرًا لِأَنْعُمِهِ اجْتَبَاهُ وَهَدَاهُ إِلَى صِرَاطٍ مُسْتَقِيمٍ وَآتَيْنَاهُ فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَإِنَّهُ فِي الْآخِرَةِ لَمِنَ الصَّالِحِينَ ثُمَّ أَوْحَيْنَا إِلَيْكَ أَنِ اتَّبِعْ مِلَّةَ إِبْرَاهِيمَ حَنِيفًا
নিশ্চয় ইবরাহিম ছিলেন এক উম্মত, আল্লাহর একান্ত অনুগত ও একনিষ্ঠ। তিনি মুশরিকদের অন্তর্ভূক্ত ছিলেন না। তিনি ছিলেন আল্লাহর অনুগ্রহের জন্য কৃতজ্ঞ; আল্লাহ তাকে মনোনীত করেছিলেন এবং তাকে পরিচালিত করেছিলেন সঠিক পথে। আমি তাকে দুনিয়াতে কল্যাণ দান করেছিলাম, আর আখেরাতেও তিনি অবশ্যই সৎকর্মশীলদের অন্তর্ভুক্ত। তোমার প্রতি ওহি করছি যে, তুমি একনিষ্ঠ ইবরাহিমের মতাদর্শ অনুসরণ কর। (সুরা নাহল: ২০-২৪)
কোরআনের বহু আয়াতে তার নাম এসেছে। কোরআনে একটি সুরাও রয়েছে তার নামে। কাবা নির্মাণ, ছেলেকে কোরবানি করতে নিয়ে যাওয়া, নমরুদের সাথে বিতর্ক, তার জন্য আগুন আরামদায়ক হয়ে যাওয়া ইত্যাদি তার জীবনের আরও বহু ঘটনা কোরআনে বর্ণিত হয়েছে।
ওএফএফ/জিকেএস