দারিদ্র্যের কষাঘাতে পড়ালেখা ভাগ্যে জোটেনি মোজাম্মেল হোসেনের (৩০)। পরিবারের বড় সন্তান হিসেবে শিশু বয়সেই মাথায় তুলে নিতে হয় সংসারের বোঝা। এখনো দিন কাটছে শ্রম দিয়েই।
Advertisement
দিন যায় মাস যায়। বছর ঘুরে আবার বছর আসে তবুও ঘোরে না মোজাম্মেলের ভাগ্যের চাকা। চাকরি হারানোর ভয়ে ন্যায্য মজুরি চাওয়ার সাহসও পান না। ফলে অতিরিক্ত সময় শ্রম দিয়েও মালিকের নির্ধারিত মজুরিতেই বাধ্য হয়ে কাজ করতে হচ্ছে তাকে।
মোজাম্মেল হোসেন ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট উপজেলার স্বদেশী ইউনিয়নের মাটিকাটা গ্রামের আনোয়ার হোসেনের ছেলে। তিন ভাই ও তিন বোনের মধ্যে সবার বড় মোজাম্মেল। তিনি ময়মনসিংহ শহরের হক বেকারিতে শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন।
কারখানাটিতে সরেজমিন দেখা যায়, বিভিন্ন বয়সী শ্রমিক বেকারির বিভিন্ন খাদ্যপণ্য তৈরি করতে ব্যস্ত। কেউ বিস্কুট, কেউ কেক, কেউ চানাচুর আবার কেউবা পাউরুটিসহ বিভিন্ন খাদ্যপণ্য বানাচ্ছেন। কিছু শ্রমিক প্যাকেজিং করে থরে থরে সাজিয়ে রাখাসহ দোকানে দোকানে বিক্রির উদ্দেশ্যে তিন চাকার ভ্যানে ওঠাচ্ছেন। এগুলো খাতায় লিখে হিসেব রাখছেন ম্যানেজার।
Advertisement
কথা হয় শ্রমিক মোজাম্মেল হোসেনের সঙ্গে। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমার বাবা ছিলেন দরিদ্র কৃষক। যৎসামান্য জমি চাষাবাদ করে পরিবারের সাত সদস্যের ভরণপোষণ করতেন। পরিবারের সবাইকে প্রতিদিন তিনবেলা ভাত খাওয়াতে পারলেই বাবা আনন্দ পেতেন। পরিবারের ওই অবস্থায় লেখাপড়া করা সম্ভব ছিল না।’
মোজাম্মেল হোসেন বলেন, ‘আমার একেবারেই পড়ালেখা নেই। যখন থেকে বুঝতে শিখেছি, তখন থেকেই পরিবারের হাল ধরতে শ্রমিক হিসেবে আশপাশে কাজ শুরু করি। আরেকটু বড় হলে ময়মনসিংহ শহরের হক বেকারির সন্ধান পান বাবা। পরে মালিকের সঙ্গে কথা বলে আমাকে শ্রমিক হিসেবে কাজ দেওয়া হয়। গত ১৫ বছর ধরে এই কারখানায় কাজ করছি। চাকরি পাওয়ার প্রথম মাসে এক হাজার ৬০০ টাকা বেতন পেয়েছি। তখন ছোট ছিলাম। এখন বড় হয়েছি। কারখানায় অনেক সময় দিচ্ছি, শ্রম দিচ্ছি। কিন্তু আশানুরূপ মজুরি পাচ্ছি না।’
ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, বাজারে গেলে নিত্যপণ্যের দামের সঙ্গে হিসেব মেলানো কঠিন হয়ে যায়। প্রতিদিন ৪০০ টাকা মজুরিতে কাজ করে পোষায় না। তবুও পেটের তাগিদে কাজ করতে হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, হক বেকারি ছাড়াও আশপাশে আরও কারখানা রয়েছে। তবে শ্রমিকরা পরিশ্রম অনুযায়ী মজুরি পান না। অথচ দৈনিক আট ঘণ্টার বেশি সময় শ্রম দিতে হয় তাদের।
Advertisement
হক বেকারির মালিকের নামও মোজাম্মেল হক। যথাসময়ে মজুরি বাড়ানো হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি জাগো নিউজকে বলেন, যারা কাজ ভালোভাবে করতে পারে, তাদের ভালো মজুরি দেওয়া হচ্ছে। কাজ অনুযায়ী মজুরি দেওয়া হয়। তবে দ্রুততম সময়ের মধ্যে মজুরি আরও বাড়ানো হবে বলে জানান তিনি।
কলকারখানা অধিদপ্তর ময়মনসিংহের উপমহাপরিদর্শক আহমাদ মাসুদ জাগো নিউজকে বলেন, শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি বাস্তবায়ন করতে আমাদের কর্মকর্তারা বিভিন্ন কারখানা পরিদর্শন করছেন। ন্যায্য মজুরি থেকে শ্রমিকদের বঞ্চিত করা যাবে না। কোনো কারখানায় শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি না দেওয়ার তথ্য পেলে ওই কারখানার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এসআর/জিকেএস