দেশজুড়ে

সন্ধ্যা নামলেই দেখা মেলে বিপন্ন গন্ধগোকুলের

সন্ধ্যা নামলেই দেখা মেলে বিপন্ন গন্ধগোকুলের

সন্ধ্যা নামলেই পাবনার বেড়া উপজেলার কয়েকটি এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে সুগন্ধি (পোলাও) চালের ঘ্রাণ। তখনই স্থানীয়রা বুঝতে পারেন আশপাশেই রয়েছে বিপন্ন প্রাণী গন্ধগোকুল। স্থানীয়ভাবে এটা ‘নেল’ নামে পরিচিত। সন্ধ্যার পর তাদের দেখা যায় ছোটাছুটি করতে।

Advertisement

স্থানীয়রা বলছেন, বেড়া পৌর এলাকার মৈত্রবাঁধা, শেখপাড়া, দাসপাড়া, হাতিগাড়াসহ কয়েকটি মহল্লায় এখনো চোখে পড়ে গন্ধগোকুলের। তবে আগের চেয়ে সংখ্যায় কম।

প্রাণীটির ছবি তুলে রাজশাহী বিভাগীয় বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ অধিদপ্তরের বন্যপ্রাণী পরিদর্শক জাহাঙ্গীর কবিরের কাছে পাঠালে তিনি সেটিকে ‘বাগডাশ’ বলে শনাক্ত করেন। এ প্রাণী সম্পর্কে তিনি বলেন, বিপন্ন হলেও এটি এখনো কিছু কিছু জায়গায় দেখা যায়।

স্থানীয়রা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরেই প্রাণীটির উপস্থিতি ও ছোটাছুটির কারণে এলাকাবাসীর সঙ্গে একটি সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। অধিকাংশের পছন্দের তালিকায় প্রাণীটি। গৃহপালিত হাঁস-মুরগি, কবুতর ধরে দিয়ে গেলেও ফাঁদ পেতে বা অন্যান্যভাবে তাকে তাড়ানো বা ক্ষতির মতো কিছুই করেননি স্থানীয়রা।

Advertisement

এ বিষয়ে বেড়া পৌর এলাকার মৈত্রবাঁধা মহল্লার অবসরপ্রাপ্ত স্কুলশিক্ষক শিখা রাহা বলেন, আমার বাড়ির ছাদের ওপর দিয়ে প্রায়ই এরা যাতায়াত করে। আমার ধারণা বাড়ির আশপাশের কোনো গাছে বা পরিত্যক্ত ঘরে এরা বাস করে। সন্ধ্যার পর ছাদে গেলেই অনেক সময় পোলাউয়ের গন্ধ পাই। কখনো কখনো এদের দুই-তিনটি যাতায়াত করতে দেখি। তিন-চারমাস আগে আমার ছাদবাগানের ঝোপের মধ্যে দুটি বাচ্চাও দেখেছিলাম। দুই-তিনদিন পর আর দেখতে পাইনি। সম্ভবত ওদের মা অন্য জায়গায় নিয়ে গেছে।

বেড়া উপজেলার মনজুর কাদের মহিলা কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত সহকারী অধ্যাপক আব্দুস সালাম বলেন, দেশের অনেক এলাকা থেকেই গন্ধগোকুল বিলুপ্ত হতে বসেছে। তবে বেড়া পৌর এলাকায় এদের বিচরণ যেমন কিছুটা বেশি তেমনি পৌরবাসীও এদের প্রতি সহানুভূতিশীল।

বন্যপ্রাণী ও পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রাণীটি এখন বিলুপ্তির পথে। অথচ একসময় গন্ধগোকুলকে ঝোঁপঝাড়, গ্রাম ও বনাঞ্চলে অহরহই দেখা যেত। প্রাণীটি পরিবেশ ও প্রকৃতির জন্য খুবই উপকারী। ব্যাঙ ও ইঁদুরসহ ক্ষতিকর পোকামাকড় খেয়ে উদ্ভিদের বংশবৃদ্ধিতে দারুণ ভূমিকা রাখে। তাল, খেজুরের রস, ছোট পাখিও খায়। ক্ষতিকর পোকামাকড় খেয়ে এবং ফলমূল খেয়ে এর বীজ বিস্তারের মাধ্যমে পরিবেশের উপকার করে থাকে। যেমন- বটফল বা অন্যান্য ফল তারা যখন খায় তখন এর মলের দ্বারা নির্গত সেই বীজগুলো সফল উদ্ভিদে পরিণত হয়। অর্থাৎ এর পেটের ভেতর দিয়ে ফলের বীজগুলো গজানোর উপযুক্ত পরিবেশ (জার্মিনেশন) পায় বলে তা পরবর্তীতে বীজের অংকুরোগদমে শতভাগ কার্যকরী হয়ে থাকে।

বছরে সাধারণত দুবার এরা প্রজনন করে। গর্ভধারণকাল দুই মাসের কিছু বেশি। পুরোনো গাছের খোঁড়ল, গাছের ডালের ফাঁকে, পরিত্যক্ত ঘর, ধানের গোলা বা তাল-সুপারির আগায় ছানা ফোটায়। সাধারণত তিনটি করে ছানা দেয় এরা।

Advertisement

বেড়া উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, গন্ধগোকুল খুবই লাজুক স্বভাবের। মানুষকে দেখে ভয়ও পায়। আবাসভূমি ধ্বংস ও হাঁস-মুরগি বাঁচাতে মানুষ একে নিধন করে। ফলে এরা এখন বিপন্ন। তাই সবার উচিত এদের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া।

আলমগীর হোসাইন নাবিল/জেডএইচ/জেআইএম