জাতীয়

নির্মাণশ্রমিকের নিরাপত্তায় দরকার আইনি কাঠামো

নির্মাণশ্রমিকের নিরাপত্তায় দরকার আইনি কাঠামো

নিরাপদ বাসস্থানের জন্য সবার আকাঙ্ক্ষা থাকে একটি কংক্রিটের ভবন। শহরবাসী চায় সুউচ্চ ভবনে ফ্ল্যাট কিংবা নিরাপদ থাকার জায়গা। এটি একটি মৌলিক চাহিদা। কিন্তু নিরাপদ বাসস্থান তৈরির কারিগররা কর্মক্ষেত্রে কতটা নিরাপদ?

Advertisement

যথাযথ নিরাপত্তা সরঞ্জাম ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা না থাকায় নির্মাণশ্রমিকরা নিয়মিত প্রাণ হারাচ্ছেন। আহত হচ্ছেন অনেকে। কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তার উন্নতির পরিবর্তে মৃত্যু ও আহত হওয়ার সংখ্যা বাড়ছে। প্রায়ই গণমাধ্যমে সংবাদের শিরোনাম হচ্ছেন নির্মাণশ্রমিকরা। আহত ব্যক্তিরা সমাজের জন্য হয়ে উঠছেন বোঝা। মৃত বা আহত শ্রমিকদের পরিবারের সদস্যরা ভুগছেন দীর্ঘ কষ্টে।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজের (বিআইএলএস) তথ্য অনুসারে, গত পাঁচ বছরে দুর্ঘটনায় ৫৭১ জন শ্রমিক মারা গেছেন। আহত হয়েছেন ২৭৬ জন। তবে, সংবাদ প্রতিবেদনের ভিত্তিতে এ তথ্য বাস্তব চিত্র প্রদর্শন করে না।

রাজধানীর অধিকাংশ সুউচ্চ ভবন নির্মাণে মানা হয় না শ্রমিক সুরক্ষা। শ্রমিকরা কোনো সুরক্ষা উপকরণ পান না বললেই চলে। প্রায়ই দেখা যায় ভবনের বাইরে রশি বাঁধা বাঁশে ঝুলে ঝুলে কাজ করছেন শ্রমিকরা। মাথায় কোনো সেফটি হেলমেটও পরতে দেখা যায় না।

Advertisement

নির্মাণশ্রমিকদের সেফটির বিষয়টাকে আমরা সবার আগে প্রাধান্য দেই। তারা নিরাপদে থাকলে একটা প্রকল্প সহজ ও সুন্দর হয়। রিহ্যাবে সদস্যভুক্ত প্রতিষ্ঠানে নির্মাণশ্রমিকদের গ্লাভস, হেলমেটসহ সেফটি ইক্যুইপমেন্ট রাখার নির্দেশনা আছে, কোম্পানিগুলো নিজেরাই এটা বাস্তবায়ন করে।-(রিহ্যাব) সিনিয়র সহ-সভাপতি লিয়াকত আলী ভূঁইয়া।

মিরপুর এলাকার একটি রিয়েল এস্টেট কোম্পানিতে কর্মরত নির্মাণশ্রমিক মোহাম্মদ হাসান বলেন, ‘এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক যে আমরা অন্যদের জন্য ঘর তৈরি করি কিন্তু তারা আমাদের নিরাপত্তার কথা ভাবে না। আমরাও আমাদের শ্রমের ন্যায্য মূল্য পাই না।’

তিনি বলেন, ‘নিয়োগকর্তারা যদি আমাদের জন্য সুরক্ষা সরঞ্জাম সরবরাহ করেন, তাহলে আমরা আমাদের জীবন বাঁচাতে পারবো এবং হতাহতের ঘটনা কমাতে পারবো। কোনো চুক্তি না থাকায় এবং আমাদের বেশিরভাগই অনানুষ্ঠানিক খাতে কাজ করে বলে আমরা কখনই কোম্পানির কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ বা নিয়োগকর্তার কাছ থেকে দীর্ঘমেয়াদি সুবিধা ভোগ করি না।’

আরও পড়ুনযাত্রাবাড়ীতে নির্মাণাধীন ভবন থেকে পড়ে নির্মাণশ্রমিকের মৃত্যুমাথা ভেদ করে গেল লোহার রড : তবুও বেঁচে নির্মাণশ্রমিকউত্তরায় আটতলা থেকে পড়ে নির্মাণশ্রমিকের মৃত্যু

সরকারের এমন একটি আইন প্রণয়ন করা উচিত যা ক্ষতিপূরণ ও স্বাস্থ্যগত আঘাতের বিরুদ্ধে সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য সব শ্রমিককে এক ছাদের নিচে নিয়ে আসবে। বলেন এই শ্রমিক।

Advertisement

‘নির্মাণশ্রমিকদের সেফটির বিষয়টা আমরা সবার আগে প্রাধান্য দেই। তারা নিরাপদে থাকলে একটা প্রকল্প সহজ ও সুন্দর হয়। রিহ্যাবে সদস্যভুক্ত প্রতিষ্ঠানে নির্মাণশ্রমিকদের গ্লাভস, হেলমেটসহ সেফটি ইক্যুইপমেন্ট রাখার নির্দেশনা আছে, কোম্পানিগুলো নিজেরাই এটা বাস্তবায়ন করে।’ বলছিলেন রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (রিহ্যাব) সিনিয়র সহ-সভাপতি লিয়াকত আলী ভূঁইয়া।

তিনি বলেন, ‘এছাড়া রিহ্যাব ট্রেনিং ইনস্টিটিউটে বছরব্যাপী নির্মাণশ্রমিকদের ট্রেনিংয়ের আয়োজন করা হয়। সেখানে নির্মাণের সঙ্গে সেফটির বিষয়েও সচেতন করা হয়।’

দেশের নির্মাণশিল্পের প্রায় ৯০ শতাংশ নির্মাণশ্রমিক কোনো লিখিত চুক্তি ছাড়াই কাজ করেন। এদের নানাভাবে শোষণ করা হয়। নিরাপত্তা সরঞ্জাম নেই, আবার দুর্ঘটনায় পড়লে কোনো ক্ষতিপূরণও মেলে না।- শ্রমিক নেতা আমিরুল হক আমিন

গত এক দশকে বাংলাদেশের নির্মাণখাত দ্রুত সম্প্রসারিত হয়েছে। কিন্তু শ্রমিকদের নিরাপত্তা ও জীবনমানের উন্নয়ন ঘটেনি। বিভিন্ন মেগা প্রকল্প যেমন পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, টানেল ও রাস্তা সম্প্রসারণের কারণে নির্মাণখাতে শ্রমিকের চাহিদা বেড়েছে বহুগুণ। বাড়ছে অর্থনীতিতে এর অবদান।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, দেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রায় ৮ শতাংশ আসে নির্মাণখাত থেকে। এতে কর্মরত শ্রমিকের সংখ্যা ৪০ লাখের বেশি।

এত বড় অবদান ও সাফল্যের পরও শ্রমিকরা বঞ্চনার শিকার। জীবনযাপন করছে নিরাপত্তাহীনতা ও অনিশ্চিত ভবিষ্যতের মধ্যে।

শ্রমিক নেতা আমিরুল হক আমিন বলেন, দেশের নির্মাণশিল্পের প্রায় ৯০ শতাংশ নির্মাণশ্রমিক কোনো লিখিত চুক্তি ছাড়াই কাজ করেন। এদের নানাভাবে শোষণ করা হয়।

তিনি বলেন, নিরাপত্তা সরঞ্জাম নেই, আবার দুর্ঘটনায় পড়লে কোনো ক্ষতিপূরণও মেলে না। তাদের কোনো স্বাস্থ্যবিমা নেই, নেই ক্ষতিপূরণ। ফলে তাদের জীবন চলে চরম দুরবস্থার মধ্য দিয়ে।’

আইএইচও/এএসএ/জেআইএম