ভ্রমণ

পর্যটকদের নজর কাড়ে মসজিদে নূর

পর্যটকদের নজর কাড়ে মসজিদে নূর

মসজিদে নূর জামালপুর জেলার সবচেয়ে সুন্দর ও মনোমুগ্ধকর মসজিদ। শতবর্ষের পুরোনো কোনো মসজিদ না হলেও এর সৌন্দর্যের কথা দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে। দৃষ্টিনন্দন মসজিদটি একনজর দেখতে এবং নামাজ আদায় করতে বৃহত্তর ময়মনসিংহ ছাড়াও দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে মুসল্লিরা ছুটে আসেন। জেলার বকশীগঞ্জ উপজেলায় নির্মিত মসজিদটি এর মধ্যে দর্শনীয় স্থান হিসেবে জায়গা করে নিয়েছে।

Advertisement

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অসাধারণ নির্মাণশৈলীর নান্দনিক মসজিদটি ব্যক্তিগত অর্থায়নে তৈরি করা হয়েছে। হজে যাওয়ার পর অনুপ্রাণিত হয়ে মসজিদটি তৈরি করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মাহবুবুল হক চিশতী। মসজিদের কাঠামো মার্বেল পাথর দিয়ে তৈরি। যা বিদেশ থেকে আনা হয়েছে। তুরস্কের আদলে তৈরি করা মসজিদটি দ্বিতলবিশিষ্ট ও সম্পূর্ণ কারুকার্যমণ্ডিত। তিন দরজাবিশিষ্ট মসজিদের ছাদের মাঝখানে আছে বড় একটি গম্বুজ। যার ভেতরের অংশেও আছে সুন্দর নকশার সমাহার। চারপাশে পিলারের ওপর নির্মিত সাতটি গম্বুজ ও চারটি বড় মিনার।

বকশীগঞ্জ শহরে প্রবেশ করতেই দেখা মিলবে দৃষ্টিনন্দন মসজিদটি। পৌরসভার দড়িপাড়ায় অবস্থিত মসজিদে একসঙ্গে ২ হাজার ৫০০ মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারেন। মসজিদের মূল অংশের পবিত্রতা রক্ষার জন্য চারপাশে আছে দেওয়াল। সামনেই বিশাল মাঠ। আঙিনাজুড়ে সারিবদ্ধ ঝাউগাছ, ফুল ও ফলের গাছ। অজুখানাটি দেখতে দৃষ্টিনন্দন। আছে পার্কিং ব্যবস্থাও। চারপাশে আছে ফসলি জমি। ধানের মৌসুমে সবুজ মাঠ সৌন্দর্যকে বাড়িয়ে তোলে। যা দেখলেই প্রাণ জুড়িয়ে যায়।

মসজিদটির সৌন্দর্য দেখতে এবং নামাজ আদায় করতে প্রতিদিনই দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসেন মুসল্লিরা। বিশেষ করে জুমার দিনে মুসল্লিদের ঢল নামে। এ ছাড়া ঈদ ও বিভিন্ন দিবসে শিশু ও নারীসহ বিভিন্ন বয়সী দর্শনার্থীরা ঘুরতে আসেন। দর্শনার্থীদের কেন্দ্র করে মসজিদ মাঠে বসে ভ্রাম্যমাণ খাবারের দোকান। স্থানীয়দের দাবি, বৃহত্তর ময়মনসিংহ বিভাগে এমন সুন্দর ও মনোমুগ্ধকর মসজিদ আর নেই। মসজিদের আঙিনা পরিপাটি ও ঝকঝকে রাখার জন্য সর্বদা নজর রাখে এলাকাবাসী।

Advertisement

আরও পড়ুন সাত গম্বুজ মসজিদ ও অজানা সমাধির গল্প  আড়াইশ বছরের পুরোনো ১৩ গম্বুজ মসজিদ 

ইসলামপুর উপজেলা থেকে আসা আরমান হোসেন বলেন, ‘মসজিদে নূর জামালপুরের মধ্যে অন্যতম মনোমুগ্ধকর মসজিদ। মসজিদের ডিজাইন ও নির্মাণশৈলী অত্যন্ত আকর্ষণীয়। আগেও অনেকবার এসেছি। আজও সৌন্দর্যের টানে এসেছি। জুমার নামাজ আদায় করলাম। এখানে ঘুরতে এলে অন্যরকম ভালো লাগা কাজ করে। মসজিদের ভেতর ও বাইরের পরিবেশটা অনেক সুন্দর।’

আশরাফ হাসান বলেন, ‘বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান, গ্রামীণ সংস্কৃতি, প্রাকৃতিক দৃশ্য নিয়ে ডকুমেন্টরি তৈরি করি। ফেসবুকের মাধ্যমে এই মসজিদ সম্পর্কে জানার পর সরাসরি দেখতে এসেছি। মসজিদটি অনেক সুন্দর। জুমার নামাজও পড়লাম। চারপাশের পরিবেশও সুন্দর। সব মিলিয়ে খুব ভালো লাগলো। দৃষ্টিনন্দন এই মসজিদের দৃশ্য সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে ভিডিও করেছি।’

মসজিদে নূরের ইমাম ও খতিব মো. বেলাল হোসেন বলেন, ‘পাঁচ একর জমির ওপর অবস্থিত মসজিদটি। ২০১৮ সালের ১১ মে প্রথম জুমার মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে নামাজ আদায় শুরু হয়। মসজিদটি দেখতে ও নামাজ আদায় করতে প্রতিদিনই বিভিন্ন বয়সী মুসল্লি ছুটে আসেন। শুক্রবার ও ঈদের সময়ে দর্শনার্থীদের ঢল নামে। আলহামদুলিল্লাহ এখন পর্যন্ত কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। আশা করি ভবিষ্যতেও ঘটবে না ইনশাআল্লাহ।’

যেভাবে আসবেনযে কোনো স্থান থেকে প্রথমে যেতে হবে জামালপুর। জামালপুর শহর থেকে সিএনজিযোগে বকশীগঞ্জ বাজারে প্রবেশের একটু আগেই রাস্তার ডানপাশে (পূর্বদিকে) নামলেই মসজিদের দেখা মিলবে। শেরপুর থেকে সিএনজিযোগে বকশীগঞ্জ বাজারে এসে এক মিনিট হাঁটলেই মসজিদটির দেখা মিলবে। জেলার দেওয়ানগঞ্জ বা কুড়িগ্রামের রৌমারী থেকে বাস বা সিএনজিযোগে বকশীগঞ্জ বাজারে নেমে এক মিনিট হাঁটলেই মসজিদে পৌঁছানো যাবে।

Advertisement

এসইউ/জিকেএস