ভ্রমণ

ষাট গম্বুজ মসজিদের গম্বুজ কয়টি?

ষাট গম্বুজ মসজিদের গম্বুজ কয়টি?

দুপুরের রোদ হঠাৎ মেঘের চাদরে ঢাকা পড়ে। বাতাসে ভেসে বেড়ায় শূন্যতা আর অতীতের নিঃশব্দ গুঞ্জন। চারদিকে ছায়া নেমে এলে পাথরের বুকে যেন কানের কাছে ভেসে আসে পায়ের মৃদু শব্দ। যেন শতাব্দি পেরোনো কোনো চরিত্র ফিরে এসেছে তার চেনা গন্তব্যে। ঠিক এমন এক মুহূর্তে চোখের সামনে উদ্ভাসিত হয় এক বিস্ময়কর স্থাপনা। যার নাম ষাট গম্বুজ মসজিদ। এটি একটি জীবন্ত ইতিহাস, অপার্থিব গাথা। যেখানে ইট, পাথর আর নকশায় মিশে আছে সময়, সাধনা আর স্বপ্নের অনুপম কাব্য।

Advertisement

বাগেরহাটের এই মসজিদ শুধু স্থাপত্যের নিদর্শন নয়, যেন একটি মহাকাব্য। যেখানে প্রতিটি স্তম্ভ, গম্বুজ একেকটি চরিত্র, যা বলে দেয় এক মহান মানুষের স্বপ্ন বাস্তবায়নের গল্প। খান জাহান আলী, উপমহাদেশে মুসলিম স্থাপত্যের অন্যতম রূপকার। তিনি এই মসজিদের নির্মাতা। ১৫ শতকে তার হাতে গড়ে ওঠা এ মসজিদ শুধু নামাজ পড়ার স্থান নয়; ছিল প্রশাসনিক দপ্তর, শান্তির আশ্রয়, সাহসী অভিযাত্রার ক্যানভাস।

ষাট গম্বুজ নামটি শুনে যেমনটা ভাবা হয়, আসলে মসজিদে ঠিক ষাটটি গম্বুজ নেই। এটি আসলে এক রূপক অর্থে। প্রকৃতপক্ষে গম্বুজের সংখ্যা ৮১টি। এর মধ্যে চার কোণায় চারটি অর্ধগোলাকৃতি গম্বুজ এবং মাঝের ছাদজুড়ে ৭৭টি গম্বুজ। এসব গম্বুজ টিকে আছে ৬০টি পাথরের স্তম্ভের ওপর। এই ৬০টি স্তম্ভই মসজিদের নামকরণের মূল কারণ। যেখানে সংখ্যাটি হয়েছে এক প্রতীকী অভিব্যক্তি।

স্থাপত্যশৈলীতে মসজিদটি মুগ্ধ করে প্রথম দর্শনেই। ১৬০ ফুট লম্বা ও ১০৪ ফুট চওড়া আয়তাকার ভবনটি ঘেরা মোটা দেওয়ালে। প্রায় ৮.৫ ফুট পুরু এই দেওয়াল যেন যুদ্ধকালীন প্রতিরক্ষা বেষ্টনীর মতো শক্ত আর নিঃসন্দেহ। মেহগনি কাঠের দরজা, খিলানযুক্ত জানালা আর ঠান্ডা মেঝে ছুঁয়ে মনে হয় এক রহস্যময় শান্তির আলিঙ্গনে ঢুকে পড়েছে শরীর।

Advertisement

আরও পড়ুন‘জিনের তৈরি’ মসজিদে একদিননান্দনিকতার ছোঁয়ায় দৃষ্টিনন্দন হাজিবাড়ি জামে মসজিদ

মসজিদের পাশেই আছে খান জাহান আলীর সমাধি। যার পাশে একটি বিশাল দিঘি। স্বচ্ছ জলের পরশ যেন আজও বহন করে সেই আধ্যাত্মিক স্পর্শ। পূর্ণিমা রাতে গম্বুজে আলো পড়ে ছায়া গড়ে তোলে এক রহস্যময় চিত্রকর্ম। কেউ কেউ বলেন, রাতের গভীরে এখানে এখনো শোনা যায় ধ্যানমগ্ন মোনাজাতের প্রতিধ্বনি।

ষাট গম্বুজ মসজিদ শুধু ইতিহাস নয়, জীবন্ত উত্তরাধিকার। ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় নাম ওঠা স্থাপনাটি বাংলাদেশকে তুলে ধরে বিশ্বের দরবারে। স্কুলপড়ুয়া শিশুদের চোখে এটি রূপকথার দুর্গ; গবেষকদের কাছে এটি সময়ের সংস্কৃতি ও কৌশলের অমূল্য দলিল।

মসজিদের ছায়ায় দাঁড়িয়ে ইতিহাস ছুঁয়ে দেখা যায়, যেখানে ইসলাম প্রচারের পাশাপাশি স্থাপত্য, সমাজনীতি আর পরিবেশ ব্যবস্থাপনার এক অভিনব মেলবন্ধনের সাক্ষী হয়ে আছে বিশাল সৌধটি। যখন বাগেরহাটের আকাশে গোধূলি নামে; তখন গম্বুজগুলো ঝিম ধরা পাখির মতো আলো-অন্ধকারের খেলায় মেতে ওঠে। যেন বলে ওঠে, আমরা ছিলাম, আছি, থাকবো; ইতিহাসের চিহ্ন হয়ে।

ঢাকা থেকে গাবতলী বা কাঁচপুর টার্মিনাল থেকে সরাসরি বাসে বাগেরহাট যাওয়া যায়। ভাড়া ৬০০-৮০০ টাকার মধ্যে। সময় লাগে ৮-৯ ঘণ্টা। বাসস্ট্যান্ড থেকে সাত গম্বুজ মসজিদে রিকশায় ১০-১৫ মিনিটে সহজে পৌঁছানো যায়।

Advertisement

এসইউ/জেআইএম