জাতীয়

বেড়েছে শিশুশ্রমের মামলা, কমেছে নিষ্পত্তি

বেড়েছে শিশুশ্রমের মামলা, কমেছে নিষ্পত্তি

সরকারের নির্দেশনা পালন না করায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা করার সংখ্যা বেড়েছে। একই সঙ্গে বেড়েছে মামলা নিষ্পত্তির সংখ্যা। তবে শিশুশ্রমের অপরাধে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে করা মামলার সংখ্যা বাড়লেও কমেছে নিষ্পত্তি।

Advertisement

শিশুশ্রম নিয়ে যেসব মমলা করা হয়েছে, তার ৯২ শতাংশ নিষ্পত্তি হয়নি। কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের (ডিআইএফই) প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

আমাদের দায়িত্ব মামলা করা, নিষ্পত্তির বিষয়টি আদালতের ওপর নির্ভরশীল। আমরা যথেষ্ট তথ্য-প্রমাণসহ মামলা করি। মামলা নিষ্পত্তির বিষয়টি আমাদের হাতে নেই।- কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের যুগ্ম মহাপরিদর্শক মোছা. জুলিয়া জেসমিন

মামলা নিষ্পত্তি না হওয়ার কারণ হিসেবে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, শ্রমিক আইন লঙ্ঘনের দায়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হয়। মামলা দেওয়ার আগে প্রতিষ্ঠানগুলো পরিদর্শন এবং সংশ্লিষ্টদের বিভিন্নভাবে সচেতন ও সতর্ক করা হয়। এরপরও যারা নিয়ম মানেন না, তাদের বিরুদ্ধে করা হয় মামলা। কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর মামলা করতে পারে, কিন্তু মামলা নিষ্পত্তির বিষয় আদালতের ওপর নির্ভর করে।

Advertisement

কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর থেকে বলা হচ্ছে, বাংলাদেশ শ্রম আইন-২০০৬ ও বাংলাদেশ শ্রম বিধিমালা-২০১৫ অনুযায়ী কারখানা, দোকান এবং প্রতিষ্ঠানে নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করতে কাজ করছে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর। আইন বাস্তবায়ন করতে গিয়ে প্রথমে কারখানা বা প্রতিষ্ঠান সরেজমিনে পরিদর্শন করে শ্রম আইন ও বিধির লঙ্ঘন চিহ্নিত করা হয়। পরে তা প্রতিপালনের জন্য কারখানা ও প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ বরাবর সময় উল্লেখ করে নোটিশ দেওয়া হয়।

আরও পড়ুন প্রশাসনকে না জানিয়ে শ্রমিক ছাঁটাই করলে মালিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা  আইএলওর প্রতিবেদন/কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনা-রোগে বিশ্বে ১৫ সেকেন্ডে এক শ্রমিকের মৃত্যু  ‘দেশের ৬ কোটি শ্রমিকের আইনি সুরক্ষা ও মজুরির মানদণ্ড নেই’  দৈনিক ভিত্তিতে শ্রমিক নিয়োগ দেবে সরকার 

অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সংশোধন না করলে তাগিদপত্র দেওয়া হয়। এছাড়া বিভিন্ন সময় কারখানার মালিক বা ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষকে সচেতনতামূলক পরামর্শ দেওয়া হয়। তারপরও নির্দেশনা পালন না করা হলে সংশ্লিষ্ট কারখানা ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা করা হয় শ্রম আদালতে। এসব মামলা করা হয় যথেষ্ট তথ্য-প্রমাণসহ।

শ্রম আইন লঙ্ঘনের দায়ে করা মামলার বিষয়ে সবশেষ ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত সময়ের তথ্য নিয়ে প্রতিবেদন তৈরি করেছে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর। এই প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে মামলা করা হয়েছে মোট এক হাজার ৪০৩টি। নিষ্পত্তি হয়েছে ৫৫১টি। আগের বছর অর্থাৎ, ২০২২-২৩ অর্থবছর এক হাজার ১৪৮টি মামলা করা হয়, এর মধ্যে নিষ্পত্তি হয় ৪৯৫টি।

২০২৩-২৪ অর্থবছরে যেসব মামলা করা হয়েছে তার মধ্যে ৩৬টি হয়েছে শিশুশ্রম নিয়ে। এর মধ্যে মাত্র তিনটি মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে শিশুশ্রম নিয়ে মামলা হয় ২৫টি এবং নিষ্পত্তি হয় সাতটি। অর্থাৎ, ২০২২-২৩ অর্থবছরে শিশুশ্রম নিয়ে করা মামলার ২৮ শতাংশ নিষ্পত্তি হয়। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে হওয়া মামলার মাত্র ৮ শতাংশ নিষ্পত্তি হয়েছে।

Advertisement

২০২৩-২৪ অর্থবছরে শিশুশ্রম নিয়ে সর্বাধিক ১৯টি মামলা হয় গাজীপুরে। এর একটিও নিষ্পত্তি হয়নি। এছাড়া শিশুশ্রম নিয়ে ঢাকায় তিনটি, নারায়গঞ্জে একটি, চট্টগ্রামে তিনটি, টাঙ্গাইলে একটি, কুমিল্লায় একটি, ময়মনসিংহে একটি, রাজশাহীতে একটি, যশোরে একটি, মানিকগঞ্জে একটি এবং ফেনীতে চারটি মামলা হয়। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে নিষ্পত্তি হওয়া তিনটি মামলার মধ্যে চট্টগ্রাম, ফরিদপুর ও রাজশাহীতে একটি করে মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে।

সারাদেশে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের ৩১টি উপ-মহাপরিদর্শকের কার্যালয় রয়েছে। এসব কার্যালয়ের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করে শ্রম আইন লঙ্ঘনের মামলা করা হয়। বিভিন্ন অপরাধে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে যেসব মামলা করা হয়েছে এর মধ্যে ঢাকায় ১৭৩টি, নারায়ণগঞ্জে ২৬টি, গাজীপুরে ৪৪৯টি, চট্টগ্রামে ১৫০টি, নরসিংদীতে দুটি, টাঙ্গাইলে ১২টি, মৌলভীবাজারে সাতটি, কিশোরগঞ্জে চারটি, ফরিদপুরে ৬৫টি, কুমিল্লায় ১৩টি, সিলেটে ২০টি, ময়মনসিংহে ৪৩টি, রাজশাহীতে ১১টি, পাবনায় ২৪টি, বরগুনায় পাঁচটি, সিরাজগঞ্জে ছয়টি, রংপুরে ২৪টি, কুষ্টিয়ায় ছয়টি, যশোরে ছয়টি, খুলনায় ৩০টি, বরিশালে ১২৯টি, মানিকগঞ্জে ৩৫টি, গোপালগঞ্জে ১২টি, ফেনীতে ৫৮টি, কক্সবাজারে ৮৫টি, নওগাঁয় চারটি এবং জামালপুরে তিনটি মামলা করা হয়।

শিশুশ্রম নিয়ে মামলা করা হলেও অধিকাংশ নিষ্পত্তি না হওয়ার কারণ জানতে চাইলে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের যুগ্ম মহাপরিদর্শক মোছা. জুলিয়া জেসমিন জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমাদের দায়িত্ব মামলা করা, নিষ্পত্তির বিষয়টি আদালতের ওপর নির্ভরশীল। আমরা যথেষ্ট তথ্য-প্রমাণসহ মামলা করি। মামলা নিষ্পত্তির বিষয়টি আমাদের হাতে নেই।’

মামলা করার সংখ্যা বাড়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মামলার পরিমাণ বাড়া বিভিন্ন কারণে হতে পারে। হয়তো আগের বছর কথা বলেই সমাধান করা গেছে, নোটিশ পিরিয়ডে হয়তো মালিক শিশুশ্রম বন্ধ করে দেয়। বিভিন্ন কারণে মামলা কম-বেশি হয়। মামলা দেওয়ার আগে আমরা নোটিশ দেই, বিভিন্নভাবে সচেতন করি। এরপরও অনিয়ম অব্যাহত থাকলে মামলা দেওয়া হয়।’

এমএএস/এএসএ/জিকেএস