দেশজুড়ে

পুটখালি গ্রামে মরুর উট, এলাকায় চাঞ্চল্য

পুটখালি গ্রামে মরুর উট, এলাকায় চাঞ্চল্য

যশোরের সীমান্তবর্তী বেনাপোলের পুটখালি গ্রামে মরুভূমির জাহাজ উটের খামার গড়ে আলোচনায় আসেন স্থানীয়ভাবে ‘গোল্ড নাসির’ নামে পরিচিত নাসির উদ্দিন। খামারে রাখা হয় বিশাল আকৃতির সাতটি উট। পুটখালী এবং এর আশপাশের এলাকাগুলোর মানুষের মধ্যে এসব উট নিয়ে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। দূরদূরান্ত থেকে মানুষজন খামারে ছুটে আসেন উট দেখার জন্য। তারা উটগুলোর সঙ্গে ছবি তোলেন, ভিডিও করেন। সব মিলিয়ে একটা প্রাণবন্ত পরিবেশ সৃষ্টি হয় সেখানে।

Advertisement

তবে খামারে এখন আর একটি উটও নেই। ৭টি উটের মধ্যে একটি উট ২৪ লাখ টাকায় স্থানীয়ভাবে বিক্রি হয়েছে। বাকি ৬টি উট বিক্রির জন্য চট্টগ্রামে নেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার (২৭ মে) রাতে সেগুলো পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।

স্থানীয় ও পুলিশ জানা গেছে, সীমান্তবর্তী পুটখালী গ্রামের মৃত বুদো শিকদারের ছেলে নাসির উদ্দিন দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ অস্ত্র ও সোনা চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত। এ কারণে এলাকাবাসীর কাছে তিনি ‘গোল্ড নাসির’ নামে পরিচিত। এরই মধ্যে উটের খামার গড়ে আলোচনায় আসেন তিনি। গরু, ছাগল, ষাঁড়ের পাশাপাশি এবার উটের খামার করেন তিনি।

আরও পড়ুন-

Advertisement

জেলাভেদে গরুর জাতভিত্তিক খ্যাতি ও বৈচিত্র্য কৃত্রিম উপায়ে মোটাতাজা করা পশু চিনবেন যেভাবে কোরবানির গরু হাত বদল হলেই দাম বেড়ে যায় ১০-১৫ হাজার টাকা

খামারের ম্যানেজার আল আমিন জানান, নাসির উদ্দিন প্রায় এক বছর আগে সৌদি আরব থেকে সাতটি উট আমদানি করে পুটখালীতে নিজের খামারে লালনপালন শুরু করেন। যার মধ্যে একটি এখান থেকে বিক্রি হয়েছে। বাকি ৬টি চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা নিয়ে গেছেন বিক্রির জন্য। এখন আর খামারে কোনো উট নেই।

তিনি বলেন, একটি উটে ১৩ থেকে ১৪ মণ মাংস হয়ে থাকে। আগে থেকে নাসিরের বাণিজ্যিক গরুর খামারও রয়েছে। সেখানে এখন কোরবানির জন্য অনেকগুলো পশু প্রস্তুত রয়েছে।

ম্যানেজার আরও বলেন, উটগুলোকে বিশেষভাবে যত্ন নিয়ে সুস্থ রাখা হয়। প্রতিদিন উটগুলোকে গোসল করানো হতো। সয়াবিনের খৈল, ভুট্টা, ঘাস আর ছোলা খাওয়ানো হতো। বিশেষ তালিকা মেনেই উটগুলোকে প্রতিদিন খাবার খাওয়ানো হতো।

তবে খামারে থাকা উটগুলো সৌদি আরব থেকে আনা হয়েছে বলে দাবি করা হলেও এ বিষয়ে সংশয় রয়েছে স্থানীয় ও প্রাণিসম্পদ বিভাগের।

Advertisement

স্থানীয়দের অভিযোগ, সৌদি আরব থেকে এসব উট আনা হয়নি। ভারতের রাজস্থান থেকে উট চোরাইপথে এনে খামারে তোলা হয়েছে। কারণ সীমান্তের ইছামতি নদীর এ পাশে বেনাপোলের পুটখালি আর ওপাশে বনগাঁর আংরাইল সীমান্ত। আর গোল্ড নাসির এলাকায় বিগত দিনে দাপটের সঙ্গে পণ্য চোরাচালান করেছেন। সে কারণে অনেকেই বলছেন ভারত থেকে এই উট নিয়ে এসে সৌদি আরবের কথা প্রচার করা হচ্ছে।

শার্শা উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. তপু সাহা বলেন, উটগুলো আসলেই সৌদি আরব থেকে আনা হয়েছে কি না, তা যাচাইয়ের জন্য একাধিকবার খামারের মালিকের খোঁজ করেও পাওয়া যায়নি।

একই কথা বলেন জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা রাশেদুল হক। তিনি বলেন, উট আমদানির কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। সাধারণত এ ধরনের প্রাণী বিদেশ থেকে আনতে হলে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর থেকে অনুমোদন নিতে হয়।

খামারের মালিক নাসির হোসেনের বক্তব্য নেওয়ার জন্য একাধিকবার মোবাইলে যোগাযোগ করা হলেও তা বন্ধ পাওয়া যায়।

জেলা প্রশাসক আজাহারুল ইসলাম বলেন, উটের খামারের বিষয়ে কোনো অসংগতি থাকলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এদিকে পুলিশ ও বিভিন্ন গোয়েন্দা তথ্য অনুযায়ী, খামারের মালিক ‘গোল্ড নাসির’ এর আগে একাধিকবার সোনা, অস্ত্রসহ পুলিশের কাছে আটক হন। ২০২৩ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি রামনগর এলাকায় প্রাইভেটকার থেকে আট কেজি ৯৭৪ গ্রামের ৪২টি সোনার বার উদ্ধার করে বিজিবি। ওই সোনার বার ছিল নাসিরের। এরপর একই বছরের ২৩ সেপ্টেম্বর দুটি বিদেশি পিস্তল, একটি ওয়ান শ্যুটারগান, তিনটি রিভলভার, ১৯ রাউন্ড গুলিসহ র্যাবের কাছে আটক হন নাসির। ওই মামলায় প্রায় ১৯ মাস কারাগারে থাকার পর মাত্র কয়েক মাস আগে তিনি জামিনে বের হন।

যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) নূর-ই-আলম সিদ্দিকী বলেন, নাসির হোসেনের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা থাকলেও আমার জানামতে তিনি জামিনে আছেন। নতুন করে তার বিরুদ্ধে যদি কোনো অভিযোগ আসে, সেটি খতিয়ে দেখা হবে।

এফএ/এমএস