যশোরে ‘মানবদেহে বার্ড ফ্লু সংক্রমণ’ সন্দেহে অনুসন্ধানে আসছে আইইডিসিআরের প্রতিনিধি দল। বাংলাদেশ রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) উচ্চ পর্যায়ের এই তদন্ত টিম বৃহস্পতিবার (১ মে) যশোরে আসছে। এই জেলায় এক ব্যক্তির দেহে ‘বার্ড ফ্লু’ সংক্রমণ হয়েছে এমন সন্দেহে পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে এটি নিশ্চিত হওয়ার জন্য এই টিম আসছে।
Advertisement
এর আগে গত মার্চ মাসে যশোর সরকারি মুরগি প্রজনন ও উন্নয়ন খামারে অ্যাভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা বা বার্ড ফ্লু শনাক্ত হওয়ায় দুই সহস্রাধিক মুরগি মেরে পুঁতে ফেলা হয়। তবে প্রাণিসম্পদ ও স্বাস্থ্যবিভাগ এ ব্যাপারে আতঙ্কিত নয়, বরং সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিয়েছে।
বাংলাদেশ রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, সম্প্রতি যশোরে এক ব্যক্তির দেহে বার্ড ফ্লু সংক্রমণের সন্দেহজনক কিছু তথ্য-উপাত্ত পাওয়া গেছে। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে অনুসন্ধানের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এজন্য আইইডিসিআর উচ্চ পর্যায়ের এই তদন্ত দল গঠন করেছে। ছয় সদস্যের এই তদন্ত টিম বৃহস্পতিবার (১ মে) যশোরে আসছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র আরও জানায়, যশোরের রামনগর এলাকার এক ব্যক্তির শরীরে বার্ড ফ্লু সংক্রমণের কিছু লক্ষণ দেখা গেছে। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগের সন্দেহ হওয়ায় কিছু পরীক্ষা নিরীক্ষাও করা হয়। বিষয়টি সন্দেহজনক হওয়ায় আইইডিসিআর অবহিত হয়ে এটি নিশ্চিত হওয়ার জন্য মাঠে নামছে। প্রতিনিধি দল যশোরে কয়েকদিন অবস্থান করে রক্তসহ বিভিন্ন নমুনা সংগ্রহ করে সংক্রমণের বিষয়টি নিশ্চিত করতে পারবে।
Advertisement
প্রতিনিধি দল আসার বিষয়টি নিশ্চিত করে যশোরের সিভিল সার্জন ডা. মো. মাসুদ রানা বলেন, আইইডিসিআরের ছয় সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল যশোরে আসছে। প্রতিনিধি দলের সদস্যরা রক্ত ও নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে বার্ড ফ্লু সংক্রমণের বিষয়টি নিশ্চিত করতে পারবে।
এদিকে এর আগে ১২ মার্চ যশোর সরকারি মুরগি প্রজনন ও উন্নয়ন খামারে এভিয়েন ইনফ্লুয়েঞ্জা বা বার্ড ফ্লু শনাক্ত হয়। ঢাকার ল্যাবে নমুনা পরীক্ষায় রিপোর্ট পজিটিভ হলে ১৩ মার্চ খামারের ৬টি শেডের দুই সহস্রাধিক মুরগি মেরে পুঁতে ফেলা হয়।
খামার সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত ১৩ মার্চ ল্যাব টেস্টের রিপোর্ট পাওয়ার পর খামারের ৬টি শেডের দুই হাজার ৭৮টি মুরগি মেরে পুঁতে ফেলা হয়। বর্তমানে খামারে কোনো মুরগি নেই। শেডগুলো খালি করে জীবাণুনাশক দিয়ে পরিষ্কার করা হয়েছে।
ওই সময় প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মো. আবু সুফিয়ান সাংবাদিকদের বলেছিলেন, গত ১২ মার্চ যশোরের সরকারি খামারে বার্ড ফ্লু শনাক্ত হয়েছে। আমরা যে নমুনা পেয়েছি তা পরীক্ষার জন্য দেশের বাইরে পাঠাবো। তবে মৃদু আকারের লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। আমরা সঙ্গে সঙ্গে সব সরকারি পোলট্রি খামারকে নির্দেশনা দিয়েছি। একইসঙ্গে পোলট্রি খামারিদের সংগঠনকেও আমরা সতর্ক থাকতে বলেছি। যাতে তারা পর্যাপ্ত নিরাপত্তা, ভ্যাকসিন ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা নিশ্চিত করেন।
Advertisement
তিনি আরও বলেন, স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তায় সীমান্ত এলাকায় আমাদের কার্যালয়গুলোকে সতর্ক করতে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। বিশেষায়িত ভ্যাকসিন পর্যাপ্ত আছে। বাংলাদেশে খামারে ২০০৭ সালে প্রথম এবং ২০১৮ সালে সর্বশেষ বার্ড ফ্লু শনাক্ত হয়। এবার আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। কারণ এবারের পরিস্থিতি অন্যবারের মতো না। বার্ড ফ্লু নিয়ে যেন অনাকাঙ্ক্ষিত ভুল বোঝাবুঝি বা প্রচারণা না ছড়ায়, সেদিকে যেন আমরা সতর্ক থাকি। খামারি বা ক্রেতার আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। ক্রেতাসাধারণকে অনুরোধ করবো, আতঙ্কিত হয়ে আপনারা হাঁস-মুরগি বা ডিম খাওয়া বন্ধ করবেন না।
ওই ঘটনার দেড় মাস পর যশোরে মানবদেহে সংক্রমণের সন্দেহজনক তথ্য পাওয়া গেছে। তবে এ নিয়ে স্বাস্থ্য বিভাগ ও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর আতঙ্কিত না হয়ে সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিয়েছে।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাক্তার রাশেদুল হক জানিয়েছেন, বার্ড ফ্লু পরীক্ষা নিরীক্ষার জন্য একটি টিম যশোরে আসছে।
তবে এ নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, গত মার্চে যশোর সরকারি মুরগির খামারে এভিয়েন ইনফ্লুয়েঞ্জার অস্তিত্ব পাওয়া গেলেও সেটি লো প্যাথোজেনিক। তবে ওই ঘটনার পর খামারিদের সতর্কতার সঙ্গে মুরগি পালন করার নির্দেশনা দেওয়া হয়। এরপর আর কোনো খামারে সন্দেহজনক কিছু পাওয়া যায়নি।
২০০৭ সালের মার্চে বাংলাদেশে প্রথম বার্ড ফ্লু দেখা দেয়। সে বছর ১০ লাখেরও বেশি মুরগি এই ফ্লুয়ের কারণে মেরে ফেলা হয়। ২০০৮ সালের মে মাসে বাংলাদেশে মানুষের শরীরে বার্ড ফ্লু সংক্রমণ ধরা পড়ে।
দেশে মাংসের মোট চাহিদার অর্ধেকের বেশি জোগান দেয় পোলট্রি খাত। পোলট্রি খাতের উদ্যোক্তারা বলেন, দেশে ৯৫ হাজার ৫২৩টি খামার আছে। ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ ও ডলার সংকটে বেড়ে গেছে প্রাণিজ খাদ্যের দাম। করোনার পর থেকে খরচ সামলাতে না পেরে বন্ধ হয়ে গেছে ৬২ হাজার ৬৫৬টি খামার। এবার বার্ড ফ্লু যেন দেশের খামারিদের আরেকটি মহামারিতে না ফেলে, এ জন্য ফ্লু বিস্তার রোধে সরকারকে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। তা না হলে পোল্ট্রিখাত বিপর্যয়ের মুখে পড়বে।
মিলন রহমান/এফএ/এএসএম