একজন শিক্ষার্থীর জীবনে ছুটির দিনের গুরুত্ব অনেক। টানা ক্লাস, অ্যাসাইনমেন্ট, প্রেজেন্টেশন আর পরীক্ষার চাপে যখন মাথা ঘুরতে থাকে, তখন ছুটির দিনটা যেন এক টুকরো মুক্তির নাম। কেউ হয়তো ছুটির সকালেই ঘুম থেকে দেরি করে ওঠেন; কেউ আবার রাতে সিনেমা দেখে সকালে উঠে আর ঘুমের ধার ধারে না। কিন্তু এই ছুটির দিনটা যদি একটু পরিকল্পনা করে কাজে লাগানো যায়, তাহলে তা শুধু বিশ্রাম নয়, আত্মউন্নয়নেরও একটি দারুণ সুযোগ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
Advertisement
পুরো সপ্তাহ টেনশন আর ব্যস্ততার মাঝে কাটে, তাই ছুটির দিনটা হোক একটু ধীর লয়ে। ঘুম থেকে উঠে ব্যালকনিতে বসে রোদ মেখে এক কাপ চা বা কফি খাওয়ার সময়টাও হয়ে উঠতে পারে খুব ব্যক্তিগত আর প্রশান্তির। চাইলে বইয়ের কয়েকটি পৃষ্ঠা পড়া, গাছের যত্ন নেওয়া কিংবা নিজের ঘরটাকে গুছিয়ে ফেলার কাজ দিয়েও শুরু হতে পারে এই দিন।
শিক্ষাজীবনে শুধু সিলেবাস পড়ে কি মনের খোরাক মেলে? ছুটির দিনেই আপনি খুঁজে নিতে পারেন নিজের ভেতরের আগ্রহ। কেউ হয়তো গিটার বাজাতে ভালোবাসেন, কেউ আঁকেন, কেউ গল্প লেখেন। পুরো সপ্তাহ সময় না পেলেও এই একদিনেই আপনি নিজের জন্য একটু সময় বের করতে পারেন। সময় দিন নিজেকে, নাহলে আপনি নিজেই হারিয়ে যাবেন স্রোতের টানে।
বন্ধু মানে তো শুধু ক্লাসের নোট শেয়ার বা গ্রুপ স্টাডি না। বন্ধুর সঙ্গে এক কাপ চা, কোনো একটা সিনেমা দেখা, অথবা ছুটির বিকালে মিরপুরের কোনো বইমেলায় ঘোরাঘুরি এই মুহূর্তগুলোই তো জীবনের আসল রং। এমনকি ফোনে একটু খোঁজ নেওয়াটাও অনেক কিছু বদলে দিতে পারে। সম্পর্কগুলো রক্ষা করতে হলে সময় দিতে হয়, আর ছুটির দিনটাই তো তার উপযুক্ত সময়।
Advertisement
শুধু ক্লাসরুম আর লাইব্রেরির বাইরে দুনিয়া বিশাল। ঢাকার শিক্ষার্থীদের জন্য ছুটির দিন মানে ঘুরতে যাওয়ার সুযোগও হতে পারে। কেউ যেতে পারেন হাতিরঝিল, কারো গন্তব্য হতে পারে ন্যাশনাল মিউজিয়াম বা রমনার বটমূল। আর যারা ঢাকার বাইরে থাকেন, তারা হয়তো সাইকেল চালিয়ে গ্রামের প্রান্তে গিয়ে নদীর পাশে কিছু সময় কাটাতে পারেন। এই অভিজ্ঞতাগুলোই জীবনের বর্ণময় অধ্যায় হয়ে থাকে।
শিক্ষার্থীদের অনেকেই নিজেদের স্বাস্থ্য, ত্বক বা মানসিক চাপের দিকে নজর দেন না। ছুটির দিনটা হতে পারে একটু স্কিন কেয়ার, হালকা এক্সারসাইজ বা যোগব্যায়াম, কিংবা মেডিটেশন করার সুযোগ। চাইলে ত্বক, চুলের যত্ন নিতে পারেন। এমনকি দুপুরে নিজের জন্য পছন্দের কোনো রান্নাও করে ফেলা যেতে পারে। এতে করে নিজেকে ভালোবাসার একটা চর্চা তৈরি হয়।
ছুটির দিনটি একেবারে শেষ হবার আগেই আপনি চাইলে সামনের সপ্তাহের কাজগুলো একটা নোটবুকে টুকে রাখতে পারেন। কোন টিচারের কাছে কোন অ্যাসাইনমেন্ট জমা দিতে হবে, কোন পরীক্ষার প্রস্তুতি কেমন এসব পরিকল্পনা থাকলে সপ্তাহের শুরুটাও গুছিয়ে নেওয়া যায়। মানসিক চাপও অনেক কমে যায়।
ছুটির দিন মানেই শুধু বিছানায় লম্বা ঘুম নয়। এই দিনটি হতে পারে নিজের সাথে সময় কাটানোর, প্রিয় বন্ধুদের খুঁজে পাওয়ার, হারিয়ে যাওয়া আগ্রহগুলোকে আবার ফিরে পাওয়ার সময়। শিক্ষার্থীজীবন শুধু বইয়ের পাতা ঘেঁটে নয়, স্মৃতি আর অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়েও গড়ে ওঠে। তাই ছুটির দিনটাকে গড়ুন নিজের মতো করে গঠনমূলক, আনন্দময় এবং প্রাণবন্ত।
Advertisement
কেএসকে/জিকেএস