অর্থনীতি

মুক্ত বাণিজ্য এলাকা স্থাপনে জাতীয় কমিটি

মুক্ত বাণিজ্য এলাকা স্থাপনে জাতীয় কমিটি

ফ্রি ট্রেড জোন (এফটিজেড) বা মুক্ত বাণিজ্য এলাকা স্থাপনে জাতীয় কমিটি গঠন করেছে সরকার। আগামী এক বছরের মধ্যে সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন শেষে জোন ঘোষণার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে।

Advertisement

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও দক্ষতা উন্নয়ন, অর্থনীতি ও রপ্তানিতে বৈচিত্র্য আনয়ন, আঞ্চলিক উন্নয়নসহ নানাবিধ কারণে বর্তমান বিশ্বে মুক্ত বাণিজ্য এলাকা অত্যন্ত জনপ্রিয়তা পেয়েছে।

এ প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশে এ জোন স্থাপনের সম্ভাব্যতা যাচাই, বিশ্বের অন্যান্য দেশের আইন, প্রণোদনা, মডেল ইত্যাদি পর্যালোচনার লক্ষ্যে গত ২১ এপ্রিল বেজার উদ্যোগে একটি জাতীয় কমিটি গঠন করা হয়।

কমিটিতে বেজা, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ, শিল্প মন্ত্রণালয়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ ও বিডার প্রতিনিধিদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ওই কমিটি বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল আইন, কাস্টমস আইন, আমদানি ও রপ্তানি আইনসহ সংশ্লিষ্ট সকল আইন, বিধিবিধান পর্যালোচনা করবে এবং এফটিজেড স্থাপনের সহায়ক হয় অনুরূপ আইন, বিধি, গাইডলাইনস প্রণয়ন/ সংশোধন করবে।

Advertisement

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন এবং বেজা ও বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যানের যৌথ উদ্যোগে এই বাস্তবায়িত হবে। এফটিজেড স্থাপনে গঠিত এই জাতীয় কমিটির প্রথম সভা বেজা ও বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান (প্রতিমন্ত্রী মর্যাদা) চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুনের সভাপত্বিতে আগামী ৬ মে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।

কমিটির কার্যপরিধির মধ্যে রয়েছে– ক) এফটিজেডে সফল দেশগুলোর এফটিজেড পরিচালনার মডেল, আইন, নীতি, প্রণোদনা ইত্যাদি বিষয়ে পর্যালোচনা করা এবং সে পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশে এফটিজেড স্থাপনের ক্ষেত্রে অনুসরণীয় কাঠামোর খসড়া প্রস্তুত করা;খ) এফটিজেড স্থাপনের সম্ভাব্য উপযুক্ত স্থান নির্বাচন করা এবং স্থানসমূহের প্রাথমিক সম্ভাব্যতা যাচাই করা;গ) সম্ভাব্য স্থানসমূহের ভৌগোলিক, অবকাঠামোগত ও লজিস্টিকস সুবিধা যাচাই করা;ঘ) এফটিজেড স্থাপনের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট অংশীজন নির্ণয় করা এবং তাদের সাথে প্রয়োজনীয় আলোচনা করা এবংঙ) এফটিজেড লক্ষ্যে অন্যান্য প্রয়োজনীয় সুপারিশ, কার্যক্রম ও সহায়তা প্রদান করা।

মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চল হলো এমন নির্দিষ্ট এলাকা যেখানে শুল্ক কর্তৃপক্ষের সরাসরি হস্তক্ষেপ ছাড়াই পণ্য আমদানি, উৎপাদন এবং পুনঃরপ্তানি করা যেতে পারে। বাণিজ্য, বিনিয়োগ এবং শিল্পায়নের পরিবেশ উৎসাহিত করার কারণে এফটিজেড সফল অর্থনৈতিক অঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।

মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চলের বৈশিষ্ট্যের মধ্যে রয়েছে-বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ: প্রণোদনা এবং অবকাঠামোগত সহায়তা প্রদানের মাধ্যমে, এই অঞ্চল বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণের কেন্দ্র হয়ে ওঠে। এর ফলে কর্মসংস্থান সৃষ্টি, প্রযুক্তি স্থানান্তর এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত হয়।রপ্তানি এবং বাণিজ্যের পরিমাণ বৃদ্ধি:এফটিজেডের মধ্যে পরিচালিত শিল্পপ্রতিষ্ঠানসমূহ বিশ্ববাজারে কার্যকরভাবে প্রতিযোগিতার সক্ষম হয়, যার ফলে দেশের রপ্তানি বৃদ্ধি পায়। এছাড়া এর ফলে পণ্য সরবরাহ চেইন সমৃদ্ধ হয়।

Advertisement

বিশ্বব্যাপী বাণিজ্য কেন্দ্রস্থল হিসেবে সিঙ্গাপুরের সাফল্যের পেছনে রয়েছে সুপরিকল্পিত এফটিজেড স্থাপন, যেমন - জুরং দ্বীপের বন্দর এবং বিমানবন্দরের সাথে সংযুক্ত এফটিজেডের বিশ্বমানের অবকাঠামো এবং পরিষেবার ফলে সিঙ্গাপুর বিশ্বের অন্যতম প্রতিযোগিতামূলক অর্থনীতির একটিতে পরিণত হয়েছে। এছাড়া পৃথিবীর বৃহত্তম এবং সর্বাধিক সফল এফটিজেডগুলোর মধ্যে একটি হলো দুবাইয়ের জেবেল আলী মুক্ত অঞ্চল (জেএএফজেডএ)। ১৯৮৫ সালে প্রতিষ্ঠিত এই এফটিজেড, ডিসি ওয়ার্ল্ড কর্তৃক পরিচালিত। মূলত দুবাইয়ের এই বন্দর পরিচালনার জন্য ডিপি ওয়ার্ল্ড আন্তর্জাতিকভাবে সুনাম অর্জন করেছে।

এফটিজেড স্থাপনের বিষয়ে বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান (প্রতিমন্ত্রী মর্যাদা) আশিক চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশকে গ্লোবাল ম্যানুফ্যাকচারিং হাব হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার কাজ শুরু হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, এই গ্লোবাল ম্যানুফ্যাকচারিং হাবের জন্য এফটিজেড অন্যতম একটি অনুষঙ্গ। বেজা ও বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান আশা প্রকাশ করেন, গঠিত জাতীয় কমিটির কার্যকর সমন্বয় এবং সংশ্লিষ্ট সকল মন্ত্রণালয় উদ্যোগী হলে এই বছরের মধ্যে বাংলাদেশে এফটিজেড স্থাপনে জোন ঘোষণা করা সম্ভব হবে।

গত ৭ থেকে ১০ এপ্রিল অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ বিনিয়োগ সামিটের অংশ হিসেবে এফটিজেড স্থাপনকারী প্রতিষ্ঠান ডিপি ওয়ার্ল্ডের সাথে একটি সেন্সিটাইজেশন সেমিনারের আয়োজন করা হয়। সভায় ডিপি ওয়ার্ল্ডের সার্বিক কার্যক্রম তুলে ধরা হয়। পরবর্তীতে ডিপি ওয়ার্ল্ডের চেয়ারম্যান প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সাথে সাক্ষাৎ করেন এবং বাংলাদেশে বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করেন।

এমইউ/এমএইচআর/বিএ/এএসএম