খুলনায় তাপমাত্রা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে এসি বিক্রির পরিমাণ বাড়ছে। গরমের হাত থেকে রেহাই পেতে বিকল্প পথ খুঁজছে নগরবাসী। এ কারণে এসির ব্র্যান্ড শোরুমে অনেকেই ভিড় জমাচ্ছেন। কেউ কিনছেন আবার কেউ দাম যাচাই করছেন।
Advertisement
তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, অন্যান্য বছর মার্চ মাসে এসি বিক্রি শুরু হলেও এবার বিক্রি তুলনামূলক কম। কিন্তু গরম বাড়লে এটির পরিমাণ বাড়বে।
খুলনার এসির বিভিন্ন ব্র্যান্ডশপগুলো ঘুরে জানা যায়, এসির বেচাকেনা ধীরে ধীরে বাড়ছে। ১ টন থেকে শুরু করে ২ টন পর্যন্ত এসির মধ্যে ১.৫ টন ক্যাপাসিটির এসির চাহিদা বেশি। বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী ইনভার্টার এসির দাম অন্য এসির চেয়ে বেশি হলেও বিদ্যুৎ বিল কম আসায় গ্রাহকের মধ্যে ইনভার্টার এসির চাহিদা বেশি। নন ইনভার্টার মডেলের দেড় টনের এসি ৪৫ হাজার থেকে ৬০ হাজার টাকার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে। আর ইনভার্টার এসির দাম ৬০ হাজার টাকা থেকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত রয়েছে।
আরও পড়ুন-
Advertisement
বর্তমানে গ্রি, জেনারেল, ভিশন, মিডিয়া এবং ওয়াল্টন ব্র্যান্ডের এসির চাহিদা বেশি। ক্রেতাদের জন্য কিস্তির সুবিধাও রয়েছে। নগদ মূল্যে কিনলে অফার কিংবা মূল্য ছাড়ও পাচ্ছেন ক্রেতারা।
খুলনার ফেরিঘাট ও শিববাড়ী মোড় এলাকার ব্যবসায়ীরা জানান, সাধারণত প্রতি বছর মার্চ থেকে এসি বিক্রি শুরু হয়। তবে এবার মার্চে এসি তেমন একটা বিক্রি হয়নি। অনেক ক্রেতা আসছেন। ঘুরে ঘুরে দেখছেন। যাচাই বাছাই করছেন। সাধ্যের মধ্যে হলে কেউ কিনছেন আবার কেউ ফিরে যাচ্ছেন। তবে গত সপ্তাহ থেকে এসি বিক্রি বেড়েছে। বর্তমানে ক্রেতারা বেশি খুঁজছেন ইনভার্টার এসি। ইনভার্টার এসিতে বিদ্যুৎ বিল সাশ্রয় হয়। অনেক সুবিধা থাকায় এ ধরনের প্রযুক্তিগত এসির চাহিদাও বেশি।
গল্লামারি সৌবেংকো শোরুমের ম্যানেজার অপু ঢালী জানান, আমদানি করা হুন্দাই, হাইসেন্স এবং হায়ার ব্র্যান্ডের এসি তারা বিক্রি করেন। তার মধ্যে হায়ার ব্র্যান্ডের এসির বিক্রি বেশি। হায়ার ইনভার্টার এসি ৫৬ হাজার থেকে শুরু করে প্রায় ৯১ হাজার টাকার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে।
ভিশন ইলেক্ট্রনিক্সের গল্লামারী শাখার ম্যানেজার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, এবার এসি বিক্রি হলেও গতবার এসময় অনেক বেশি বিক্রি হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত এসি বিক্রিতে তেমন সাড়া পাওয়া যায়নি।
Advertisement
তিনি আরও বলেন, একটন থেকে দুই টন এসির মধ্যে ইনভার্টার এবং নন ইনভার্টার প্রায় ৫০ হাজার টাকা থেকে ৮৪ হাজার টাকার মধ্যে এসি পাওয়া যাচ্ছে।
এম এ বারি সড়কের ওয়াল্টন প্লাজার ম্যানেজার শফিকুল ইসলাম বলেন, অনেক গরম পড়লে এসির প্রতি ক্রেতাদের ঝোঁক বাড়ে। কিন্তু এখন পর্যন্ত সেরকম গরম নেই বলে এবার এসি বিক্রি তুলনামূলক কম।
তিনি আরও বলেন, ওয়াল্টনের ৫৭ হাজার টাকা থেকে শুরু করে প্রায় এক লাখ টাকার মধ্যে ইনভার্টার ও নন ইনভার্টার এসি পাওয়া যাচ্ছে।
কেডিএ রোডের এলজি শোরুমের বিক্রয়কর্মী জোবায়ের আহমেদ জানান, এ মাসের শুরুতে সপ্তাহে ৩-৪টি এসি বিক্রি হয়েছে। তবে এ সপ্তাহ থেকে ক্রেতাদের আনাগোনা বাড়ছে। শোরুম থেকেও অনেক অফার দিচ্ছে। এছাড়া গরম বাড়লে এসি বিক্রি আরও বাড়বে বলে তিনি আশা করেন।
মুন ইলেক্ট্রনিক্সের পরিচালনাকারী ফোরকান আহমেদ জানান, বিভিন্ন ধরনের চায়না ব্র্যান্ডের এসি রয়েছে তার শোরুমে। ৩৫ হাজার টাকা থেকে প্রায় ৭০ হাজার টাকার মধ্যে এসি রয়েছে। বাসাবাড়ির জন্য ১.৫ টনের এসি এবং অফিস কিংবা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে দুই টনের এসির চাহিদা বেশি বলে তিনি জানান।
রায়পাড়া রোডের এসির টেকনিশিয়ান হায়দার আলী মিঠু বলেন, গরমের তীব্রতা বাড়লে এসির সার্ভিসিং এবং নতুন এসি ফিটিংয়ের কাজ বাড়ে। এখন প্রতিদিন গড়ে ২-৩টা এসি ফিটিং করতে হচ্ছে। গতবার এপ্রিল মাসে রাত ১২টা পর্যন্ত কাজ করতে হয়েছে। এবার কাজের চাপ এখনো শুরু হয়নি। তবে গরম বাড়লে এসি ফিটিংয়ের কাজ আরও বাড়বে বলে তিনি জানান।
চাকরিজীবী শহীদুল ইসলাম মোড়ল জানান, কিস্তিতে একটি দেড় টন ক্ষমতার এসি কিনেছেন তিনি। বেশি গরম পড়ার আগে এসির দাম কম থাকে। এর পাশাপাশি এখন নানান অফার দেখছি। তাই অপেক্ষা না করে কিস্তিতে একটা এসি নিয়েছি।
ট্রান্সপোর্ট ব্যবসায়ী শফিকুল ইসলাম বলেন, বেশি গরম পড়ার আগে এসির দাম কম থাকে। তাই অফিসের জন্য এবার দুইটি এসি কিনেছি। একটা নগদ মূল্যে আরেকটি কিস্তিতে কিনেছি। আর পুরাতন এসি বিক্রি করে দিয়েছি। ইনভার্টার এসি বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী, বিধায় পুরাতন এসি বিক্রি করে দিয়ে নতুন এসি কিনেছি।
খুলনা চেম্বার অব কমার্সের সাবেক পরিচালক মো. আসাদুর রহমান বলেন, প্রতিনিয়ত খুলনার এসির বাজার বড় হচ্ছে। মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বাড়ছে বলেই গরমে এসি বাছাই করছে মানুষ। বিদ্যুৎ বিল সাশ্রয়ী অত্যাধুনিক প্রযুক্তি সম্বলিত এসি বাজারে আসছে। যার কারণে এসির গুরুত্ব বৃদ্ধি পাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, বর্তমানে দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এসি উৎপাদন ও বাজারজাত করছে। শুধু খুলনা শহর না, উপজেলা গুলোতেও ব্র্যান্ড শোরুম পৌঁছে গেছে। দিন দিন এসি বিক্রির হারও বাড়ছে। দেশে উৎপাদিত এসির দাম তুলনামূলক কম হওয়ায় এসি কেনার প্রতি মানুষের আগ্রহ বাড়ছে।
এফএ/জেআইএম