আইন-আদালত

সব সংগঠন বাতিল চেয়ে লিগ্যাল নোটিশ

সব সংগঠন বাতিল চেয়ে লিগ্যাল নোটিশ

সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালার প্রতি তোয়াক্কা না করে আন্দোলন করায় সচিবালয়ের সব সংগঠন বাতিলের দাবিতে সংশ্লিষ্টদের লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়েছে। রোববার (১ জুন) সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এসএম আরিফ মন্ডল এই নোটিশ পাঠান। এতে দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন যুক্ত করা হয়। বিষয়টি আইনজীবী নিজে জাগো নিউজকে নিশ্চিত করেছেন।

Advertisement

মন্ত্রিপরিষদ সচিব (মন্ত্রী পরিষদ বিভাগ), জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব (জনপ্রশাসন বিভাগ), শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব, রেজিস্টার অব ট্রেড ইউনিয়ন মহাপরিচালক (ডিজি), সমাজসেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) ও যৌথ মূলধন কোম্পানি এবং ফার্মসমূহের পরিদপ্তর রেজিস্ট্রারকে বিবাদী করা হয়েছে।

লিগ্যাল নোটিশে এ বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য সাত দিনের সময় বেঁধে দিয়েছেন আইনজীবী। তা না হলে রিট আবেদন করা হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

আইনজীবী জানান, সচিবালয়সহ দেশের সব সরকারি অফিসে সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালা-১৯৭৯ এবং বাংলাদেশ সংবিধানের অনুচ্ছেদ-৩৮ এর সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ সব অনিবন্ধিত সংগঠনের কার্যক্রম অবৈধ ঘোষণা/নিবন্ধিত সংগঠনের রেজিস্ট্রেশন বাতিল করার জন্য সরকারের সংশ্লিষ্টদের প্রতি লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়েছে।

Advertisement

নোটিশে বলা হয়, এই মর্মে লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়েছি যে, গত ২৫ মে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক অধ্যাদেশ নম্বর ২৬ এর মাধ্যমে সরকারি চাকরি আইন-২০১৮ এর অধিকতর সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ-২০২৫ নামে জারি করা হয়।

অধ্যাদেশে সরকারি চাকরি আইন ২০১৮ এ ৩৭ক সংযোজিত। ওই বিধান মোতাবেক সরকারি কর্মচারীদের আচরণ ও দণ্ড সংক্রান্ত বিশেষ বিধান প্রবর্তন করা হয়। সংশোধনী আইন জারি হলে বাংলাদেশ সচিবালয়সহ দেশের মন্ত্রণালয় এর কর্মস্থলে কর্মচারীদের প্রতিবাদ করতে দেখা যায়। সচিবালয়ের অভ্যন্তরে সব মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাধ্যমে গঠিত কথিত সংগঠনের নেতা, কর্মী ও সদস্যরা সবাই একসঙ্গে বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদ নামে একটি প্ল্যাটফর্ম গড়ে তোলে।

ওই ফোরামের প্ররোচণায় সচিবালয়ে বিক্ষোভ করতে দেখা যায়। জাতীয় দৈনিকে ২৬ মে শিরোনাম সচিবালয় বিক্ষোভ দিনভর অচল ছিল এনবিআর, নগর ভবনে তালা প্রতিবেদন অনুযায়ী শত শত কর্মচারী দপ্তর ছেড়ে মিছিলে যোগ দেন। মিছিল থেকে অবৈধ কালো আইন মানবো না, লেগেছে রে লেগেছে, রক্তে আগুন লেগেছে, আপস না সংগ্রাম, সংগ্রাম সংগ্রাম ইত্যাদি স্লোগান দেওয়া হয়।

প্রায় একই রকম খবর বাংলা ও ইংরেজীসহ জাতীয় দৈনিকসহ দেশের সব পত্রিকা, অনলাইন পোর্টাল, বিভিন্ন বেসরকারি টিভি চ্যানেলে খবরগুলো প্রকাশিত হয়।

Advertisement

সচিবালয়সহ সারাদেশে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের অধীন যেসব অফিস রয়েছে সেখানকার কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নিবন্ধিত-অনিবন্ধিত স্বনামে বা রাজনৈতিক দলের ব্যানারে সংগঠন/ফোরাম/পরিষদ/দল গঠন করে তাদের কার্যক্রম সরকারি কর্মচারীর (আচরণ) বিধিমালা -১৯৭৯ প্রতি তোয়াক্কা না করে পরিচালনা করে আসছে। সরকার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে কিছু সংগঠনের কার্যক্রম স্থগিত থাকে। আবার কিছু সংগঠন নতুন করে রাজনৈতিক দলের মতাদর্শ বিবেচনায় কার্যক্রম পরিচালনা করতে থাকে।

বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায় সচিবালয়সহ সারা দেশে সংগঠনগুলো পরিচালিত হয়ে আসছে। সংগঠনগুলো বাংলাদেশ শ্রম আইন-২০০৬ এর ধারা-১৮৯ অনুযায়ী মহাপরিচালক, রেজিস্টার অব ট্রেড ইউনিয়নস, সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে স্বেচ্ছাসেবী সমাজ কল্যাণ সংস্থাসমূহ (নিবন্ধন ও নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাদেশ- ১৯৬১ ও বিধি-১৯৬২ আওতায় স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ও প্রতিষ্ঠান হিসেবে নিবন্ধন নিয়েছে।

সচিবালয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কথিত মিটিং, মিছিল,গণমাধ্যমে জারিকৃত আইনের বিরুদ্ধে বক্তৃতা দেওয়ার ফলে জনশৃঙ্খলা নষ্ট হয়েছে। যা সারাদেশের সমস্ত সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ওপর অযাচিতভাবে প্রভাব বিস্তার করে ফেলেছে। উক্ত জারি করা অধ্যাদেশের বিরুদ্ধে মিটিং, মিছিল মানববন্ধন, বক্তৃতা, বিবৃতি ইত্যাদির মাধ্যমে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সরকারি চাকরি বিধিমালা আইন-১৯৭৯ ভঙ্গ করা নিয়মে পরিণত করছেন।

সারাদেশে সরকারি চাকরির আচরণবিধি ভঙ্গ করার জন্য প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। যার ফলে সিভিল সার্ভিস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনে অস্থিরতা বিরাজ করছে। কথিত সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সংগঠনগুলোর নিবন্ধন এবং তাদের চলমান আন্দোলন, মিটিং, মিছিল, সমাবেশ করা বাংলাদেশের সংবিধানের অনুচ্ছেদ-৩৮ এর সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

বাংলাদেশ সচিবালয়সহ দেশের সব সরকারি অফিসে সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালা-১৯৭৯ এবং বাংলাদেশ সংবিধানের অনুচ্ছেদ-৩৮এর সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ সব অনিবন্ধিত সংগঠনের কার্যক্রম অবৈধ ঘোষণা/নিবন্ধিত সংগঠনের রেজিস্ট্রেশন বাতিলের আদেশ দেওয়ার জন্য নোটিশগ্রহীতারা আগামী ৭ দিনের মধ্যে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

এফএইচ/এমআইএইচএস/জিকেএস