প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে প্রক্সি, অনলাইন ও পোস্টাল ভোটিং পদ্ধতির খুঁটিনাটি রাজনৈতিক দলগুলোর সামনে উপস্থাপন করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। প্রবাসীদের প্রক্সি ভোট নিয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেছে গণঅধিকারসহ বেশ কয়েকটি দল। একইভাবে এ নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছে জামায়াতে ইসলামীসহ আরও কয়েকটি দল।
Advertisement
মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) দুপুরে আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন ভবনে ‘প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোট ব্যবস্থার উন্নয়ন’ শীর্ষক সেমিনারে এসব কথা উঠে এসেছে।
সেমিনারে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেন, আপনাদের মতামতে আমরা গুরুত্ব দিতে চাই। প্রবাসীদের ভোটিং সিস্টেম শুরু করতে চাই।
সেমিনারে প্রবাসীদের ভোটিংয়ের জন্য তিনটি প্রস্তাব (অনলাইন, প্রক্সি ও পোস্টাল ব্যালট পদ্ধতির ভোটিং সিস্টেম) উপস্থাপন করা হযেছে। রাজনৈতিক দলের নেতারা বলেন, আমরা আমাদের দলে আলোচনা করে মতামত দেবো। কোনটা সবচেয়ে ভালো হয় সে মতামত দেবো।
Advertisement
এর আগে সকালে প্রবাসীদের ভোট পদ্ধতি নিয়ে মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপন করেন নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ। তিনি বলেন, বাংলাদেশের নির্বাচনের ইতিহাসে প্রবাসী ভোটাররা কোনোদিনই ভোট দিতে পারেননি। প্রবাসী ভোটাররা আমাদের মোট ভোটারদের ১০ শতাংশ। আমাদের লক্ষ্য প্রবাসী ভোটারদের ভোটিং সিস্টেমে আনা।
ইসির আলোচনা শেষে মতামত প্রদান করেন রাজনৈতিক দলের নেতারা।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, বাংলাদেশ থেকে কত মানুষ প্রবাসে স্থায়ী হতে যায়, এই তালিকা কোথাও নেই। প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় বা বিএমইটি, কোথাও নেই। কত প্রবাসী ফিরে এসেছে সেই তালিকাও নেই। কাজেই এসব বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নিলে ভালো হয়।
এই রাজনীতিবিদ বলেন, আমেরিকার নাগরিক বাংলাদেশে এলে তাদের দূতাবাসে রিপোর্ট করতে হয়। আমাদের দেশের নাগরিকদের জন্য এমন সিস্টেম নেই। আমি নিজে দেখেছি অনেক প্রবাসীর পাসপোর্ট নেই। অনেকেই আবার মৃত ব্যক্তির পাসপোর্টে প্রবাসে যায়। তাই শুধু এনআইডি বিবেচনায় নিয়ে প্রবাসীদের ভোটাধিকার প্রয়োগের বিষয়টি বিবেচনা করলে হবে না। কেননা, সবার এনআইডি নেই। তাই পাসপোর্টও বিবেচনায় নিতে হবে। আবার অনেকের কোনোটাই নেই। এই বিষয়গুলোর কী হবে?
Advertisement
আরও পড়ুন:
সীমিত আকারে হলেও ভোটিং সিস্টেমে প্রবাসীদের আনতে চাই: সিইসি
প্রবাসীদের ভোটার করার ব্যাপারে তিনি বলেন, এটা ঠিক যে বহু জেলা আছে যেখানে প্রবাসী খুব কম। আবার কিছু জেলা আছে সেখাতে এত প্রবাসী যে তারা নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে পারে। প্রভাবিত করলে অসুবিধা নেই। তারা যদি দেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারে তাহলে নির্বাচন ব্যবস্থাকেও যদি পাল্টে দিতে পারে, দিক না।
জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য এবং কেন্দ্রীয় প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ বলেন, আমাদের দলীয় ফোরামে বিষয়গুলোর বিস্তারিত আলোচনা করতে হবে। এখানে প্রক্সি ভোটের বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। ধরে নিলাম এক্স ওয়াইকে প্রতি ভোটের জন্য মনোনীত করলো। তাতে ওয়াই এক্সের মনোভাবকে এক্সিকিউট নাও করতে পারেন। যেখানে ১৫ মিলিয়ন ভোটার আছে। এখানে টেন পার্সেন্টও যদি মিস ইউজ করে এক্সের প্রতিফলন না ঘটায়, তাহলে ভোটের ফল পরিবর্তন হয়ে যেতে পারে।
গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান বলেন, তিনটা পদ্ধতির মধ্যেই বেশ দোষ-ত্রুটি রয়েছে। অনলাইন এখনও দেশে সহজলভ্য নয়। যেটা সবার কাছে সহজলভ্য সেটা গ্রহণ করলে ভালো হবে। প্রক্সি ভোটিং ব্যবহার করা যেতে পারে। কিন্তু আরও কীভাবে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। আমরা দেখেছি গ্রাম-গঞ্জে, নিজের পরিবারেও দেখেছি, বাবা একটা দলকে ভোট দেন, মা আরেকটা দলকে ভোট দেন। ভোটের ব্যাপারে ব্যাপক ভিন্নতা রয়েছে। ভোটের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা গেলে প্রক্সি ভোটিং পদ্ধতি গ্রহণ করা যায়।
বাংলাদেশ লেবার পার্টি চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান বলেন, প্রক্সি ভোটিং নিয়ে আমরা সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পারি। এটাকে যদি অ্যালাউ করা যায়, কিছু তো সমস্যা থাকবেই। এর মাধ্যমে আমরা ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবো।
খেলাফত মজলিসের যুগ্ম মহাসচিব মোস্তাফিজুর রহমান ফয়সাল বলেন, আমাদের কাজটি করতে হবে। সব প্রবাসী ভোটারকে আমরা হয়তো আনতে পারবো না।
মুসলিম লীগ সভাপতি কাজী আবুল খায়ের বলেন, ২০০৮ সালের পর কেউ ভোট দিতে পারেনি। এই জায়গা থেকে উত্তরণ করতে হবে। প্রবাসীরা ভোট দান করুক, এই উদ্যোগ শুরু হোক।
নাগরিক ঐক্যের সাংগঠনিক সম্পাদক সাকিব আনোয়ার বলেন, এ বিষয়ে তাড়াহুড়ো করা উচিত নয়। এখন আমাদের নির্বাচন প্রসেস শুরু করা জরুরি।
এনসিপি সদস্য খালেদ বলেন, অনেকেই প্রক্সি ভোটিং নিয়ে কথা বলছেন। কিছু কিছু অঞ্চল আছে যেখানে প্রবাসী ভোটার অনেক বেশি। সেখানে প্রক্সি ভোট ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।
এসএম/এসএনআর/এমএস