খেলাধুলা

শেষ বলে নাটকীয় জয়ে শিরোপার স্বপ্ন বাঁচিয়ে রাখলো মোহামেডান

শেষ বলে নাটকীয় জয়ে শিরোপার স্বপ্ন বাঁচিয়ে রাখলো মোহামেডান

বিকেএসপি ৪ নম্বর মাঠে লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জের বিপক্ষে আবাহনী লিমিটেড ৭৫ বল আগে জিতলেও দেখার বিষয় ছিল শেরে বাংলায় মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্সের বিপক্ষে জেতে কি না। কারণ, মোহামেডান হারলেই যে শিরোপা নিশ্চিত হয়ে যেত আবাহনীর!

Advertisement

ঠিক এমন সমীকরণের ম্যাচে গাজী গ্রুপের বিপক্ষে ২৩৭ রান করতে গিয়ে প্রায় হারতে বসেছিল মোহামেডান। শেষ ১২ বলে দরকার ছিল ২৩ রানের।

শেষ ওভারে গাজী গ্রুপের শেখ পারভেজ জীবন যখন বল হাতে নেন, তখন মোহামেডানের জয় পেতে প্রয়োজন ১১ রানের। ওভারের প্রথম বলে রান করতে পারলেন না মোহামেডান অলরাউন্ডার মোহাম্মদ সাইফউদ্দীন। দ্বিতীয় বলে সিঙ্গেল নিয়ে এ প্রান্তে চলে আসলেন তিনি। শেরে বাংলায় তখন টান টান উত্তেজনা।

তৃতীয় বলে স্ট্রাইক পেয়েই অনসাইডে জায়গা তৈরি করে নিয়ে স্কয়ার লেগ দিয়ে সীমানার ওপারে বল পাঠান নাসুম। চতুর্থ বলে কোনো রান নিতে পারলেন না। পঞ্চম বলে ডিপ মিডউইকেটের ওপর দিয়ে ছক্কা হাঁকিয়ে স্কোর সমান করে ফেলেন নাসুম।

Advertisement

শেষ ১ বলে দরকার ১ রান। এমন অবস্থায় মিডঅনে বল ঠেলেই প্রান্ত বদল করে ব্যাট ফেলে দুই হাত শূন্যে তুলে উল্লাসে মেতে উঠলেন নাসুম। তার সঙ্গে যোগ দিলেন সাইফুদ্দিনও। শেষ বল পর্যন্ত লড়াই করে ৪ উইকেটের এক রুদ্ধশ্বাস জয় পেল মোহামেডান।

এ জয়ে উদ্বেলিত সাদা-কালো শিবির। ড্রেসিংরুমে তখন বাঁধভাঙ্গা উচ্ছ্বাস। হারলেই যে শিরোপা স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে যেত!

আজ শনিবার মোহামেডানের এই জয় পরম স্বস্তির। শিরোপা জেতার স্বপ্ন বাঁচিয়ে রাখতে পেরেছে তারা। এখন আবাহনীর বিপক্ষে শেষ ম্যাচ মোহামেডানের জন্য অঘোষিত লিগ ফাইনাল হয়ে গেল। আগামী ২৯ এপ্রিল চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আবাহনীর বিপক্ষে জিতলেই লিগ ট্রফি উঠবে মোহামেডানের ঘরে।

কোনো কারণে বৃষ্টিতে ম্যাচ বাতিল হলেও আবাহনী হয়ে যাবে চ্যাম্পিয়ন। কারণ, সুপার লিগের চতুর্থ রাউন্ড শেষে আবাহনীর পয়েন্ট ১৫ ম্যাচে ২৬। সমান ম্যাচে মোহামেডানের সংগ্রহ ২৪ পয়েন্ট।

Advertisement

শেষ ম্যাচে আবাহনীর বিপক্ষে মোহামেডান জিতলে দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর পয়েন্ট সমান হবে। কিন্তু হেড টু হেড লড়াইয়ে মোহামেডান জিতবে শিরোপা। বলে রাখা ভালো, শিরোপা নির্ধারণের ক্ষেত্রে দুই দলের পয়েন্ট সমান হলে হেড টু হেড পরিসংখ্যানে অবস্থান নির্ধারিত হবে। যেহেতু মোহামেডান প্রথম লেগে আবাহনীর বিপক্ষে জিতেছে, তাই সুপার লিগে জিতলেই শেষ হাসি হাসবে সাদা-কালোরা।

গাজী গ্রুপের বিপক্ষে আজ মোহামেডানের লক্ষ্য মোটেও বড় ছিল না। জিততে মোহামেডানের দরকার ছিল ২৩৭ রান। এই মাঝারি মানের লক্ষ্য তাড়া করতেই নাভিশ্বাস উঠে গেছে মোহামেডানের।

গাজী গ্রুপের তিন স্পিনার বাঁহাতি শামিম মিয়া (৯ ওভারে ২/২৯), লেগস্পিনার ওয়াসি সিদ্দিকী (৮ ওভারে ২/৪৫) ও অফব্রেক বোলার পারভেজ জীবন (১০ ওভারে ০/৪৯) উইকেটের সুবিধা কাজে লাগিয়ে একদম ঠাণ্ডা মাথায় লাইন ও লেন্থ বজায় রেখে বল করে মোহামেডানের ব্যাটারদের হাত খুলে খেলা থেকে বিরত রাখেন।

যে কারণেই মোহামেডানের ব্যাটার রনি তালুকদার (৮৩ বলে ৫১), মাহমুদউল্লাহ (৬২ বলে ৪৯), তাওহিদ হৃদয় (৫৪ বলে ৩৭) ও সাইফউদ্দীন (৫৫ বলে ৩০*) রান পেলেও স্বাচ্ছন্দ্যে হাত খুলে খেলতে পারেননি। তাদের ধীর ব্যাটিংয়ের কারণেই হাতে ৪ উইকেট থাকার পরও শেষ দিকে মোহামেডানের ওভার পিছু লক্ষ্য বেড়ে গিয়ে দাঁড়ায় ১০ এর ওপরে।

বাঁহাতি স্পিনার নাসুম ১৩ বলে ২ ছক্কা ও ১ বাউন্ডারি হাঁকিয়ে ২১ রানের হার না মানা ইনিংস উপহার দিয়ে বেড়ে যাওয়া লক্ষ্য মাত্রা ছুঁয়ে ফেলেন।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

গাজী গ্রুপ: ৪৯.৪ ওভারে ২৩৬/১০ ( মুনিম শাহরিয়ার ৮০, সাদেকুর ২৬, ওয়াসি সিদ্দিকী ২২, গাজী মোহাম্মদ তাহজিবুল ৩২, শেখ পারভেজ জীবন ৩৩; সাইফউদ্দীন ৩/৪২, মোস্তাফিজ ৩/৪৬, নাবিল সামাদ ২/৫৩, মাহমুউল্লাহ ১/২১)।

মোহামেডান: ৫০ ওভারে ২৩৭/৬ (রনি তালুকদার ৫৫, তৌফিক খান তুষার ১৪, তাওহিদ হৃদয় ৩৭, মাহমুদউল্লাহ ৪৯, সাইফউদ্দীন ৩৫*, নাসুম ২১*; শামিম মিয়া ২/২৯, ওয়াসি সিদ্দিকী ২/৪৫)।

ফল: মোহামেডান ৪ উইকেটে জয়ী।

এআরবি/এমএইচ/জেআইএম