দেশজুড়ে

ডিবির সাবেক ওসির বিরুদ্ধে ক্রসফায়ারের অভিযোগ: তদন্তভার পিবিআইয়ে

ডিবির সাবেক ওসির বিরুদ্ধে ক্রসফায়ারের অভিযোগ: তদন্তভার পিবিআইয়ে

ময়মনসিংহে ক্রসফায়ারে রাজন হত্যার ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলা তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

Advertisement

রোববার (২০ এপ্রিল) সন্ধ্যার দিকে ময়মনসিংহের অতিরিক্ত চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ১ নম্বর আমলি আদালতের বিচারক শরিফুল হক এ আদেশ দেন।

বিষয়টি জাগো নিউজকে নিশ্চিত করেছেন ময়মনসিংহের আদালত পরিদর্শক পীরজাদা মোস্তাছিনুর রহমান।

তিনি বলেন, ১০ লাখ টাকা দিতে না পারায় ওসি আশিকুর রহমানসহ অন্যান্য পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে রাজনকে ক্রসফায়ারে হত্যার অভিযোগ তুলে আদালতে মামলা করেন নিহতের বাবা হারুন অর রশিদ। মামলাটি তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দিতে পিবিআইকে নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক।

Advertisement

নিহত রাজন ময়মনসিংহ নগরীর পুরোহিতপাড়া এলাকার হারুন অর রশিদের ছেলে।

মামলার নথি সূত্রে জানা যায়, ২০১৮ সালের ২২ মে রাত ১টার দিকে জেলা ডিবির সাবেক ওসি আশিকুর রহমানের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল পুরোহিতপাড়ায় অভিযান চালিয়ে হারুন অর রশিদের ছেলে রাজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে যায়। পরবর্তীতে হারুন অর রশিদ তার ছেলেকে দেখার জন্য ডিবি কার্যালয়ে যান। কিন্তু দুই দিনেও তাকে ছাড়া হয়নি। এরপর ওই বছরের ২৪ মে সকালে হারুন অর রশিদ আবারও ছেলেকে ছাড়াতে ডিবি কার্যালয়ে গেলে ওসি আশিকুর রহমান ১০ লাখ টাকা দাবি করেন। টাকাগুলো রাতের মধ্যে দিতে বলা হয়। হারুন অর রশিদ টাকা সংগ্রহের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। পরে রাত পৌনে ২টার দিকে পুরোহিতপাড়া রেলওয়ে ভাঙ্গা ওয়াল সংলগ্ন পুকুরপাড় এলাকায় রাজনকে নিয়ে গিয়ে ওসি আশিকুর রহমানের নির্দেশে সঙ্গে থাকা পুলিশ সদস্যরা হত্যার উদ্দেশ্যে বুকে ও পেটের নিচে কয়েক রাউন্ড গুলি করেন। এরপর রাজন মাটিতে লুটিয়ে পড়ে মারা গেলে তাকে উদ্ধার করে পুলিশ হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের হাতে মরদেহ তুলে দেয়।

পরবর্তীতে হারুন অর রশিদ কোতোয়ালি মডেল থানায় ছেলে রাজন হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য গেলে খবর পেয়ে ডিবির ওসি আশিকের নির্দেশে অন্যান্য ডিবি পুলিশের সদস্যরা হারুন অর রশিদকে ধরে নিয়ে যান এবং ক্রসফায়ারে হত্যার হুমকি দেন। নিজের জীবন বাঁচাতেই রাজনের বাবা হারুন অর রশিদ মামলা দায়ের করা থেকে বিরত থাকেন। এরপর ২০২৪ সালে জুলাই-আগস্টে গণঅভ্যুত্থানে সরকার পতনের পর দেশের পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে ছেলে হত্যার বিচার চেয়ে গত বছরের ২০ অক্টোবর হারুন অর রশিদ বাদী হয়ে ময়মনসিংহ সদর ১ নম্বর আমলি আদালতে মামলার আবেদন করেন।

মামলায় আশিকুর রহমান ছাড়াও আরও আসামি করা হয়েছে পুলিশ পরিদর্শক মোখলেছুর রহমান, কনস্টেবল কাউসার হাবিব, কনস্টেবল গোলজার, কনস্টেবল ছোহরাব আলী, এসআই ফারুক আহমেদ, এসআই পরিমল চন্দ্র দাস, এসআই আক্রাম হোসেন, এএসআই আব্দুল মজিদ, এএসআই জিন্নাত হাসান মানিক, এএসআই জাকির হোসেন, এএসআই জিল্লুর রহমান, কনস্টেবল সাইফুল, কনস্টেবল সেলিম, কনস্টেবল রাশেদুল, কনস্টেবল সানোয়ার এবং কনস্টেবল জহিরুল ইসলামকে।

Advertisement

মামলার বাদী হারুন অর রশিদ বলেন, ওসি আশিককে টাকা দিতে পারলে আমার ছেলে আজকে জীবিত থাকত। টাকা না পেয়ে আশিকুরের নেতৃত্বে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। পিবিআই সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে সত্য ঘটনা উদঘাটন করে আদালতে তদন্ত রিপোর্ট প্রদান করবে, এমনটাই প্রত্যাশা করি।

মামলার বাদীর আইনজীবী সালাহ উদ্দিন পাঠান বলেন, দীর্ঘদিন পর আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে তদন্ত করার জন্য জেলা পিবিআইকে নির্দেশ দিয়েছেন। তদন্ত রিপোর্ট পাওয়ার পর আদালত নিশ্চয় মামলার বাদীর পক্ষে আদেশ দেবেন। বাদী আদালতের কাছে নিশ্চয় ন্যায়বিচার পাবেন।

মামলার বিষয়ে জানতে ডিবির সাবেক ওসি আশিকুর রহমানের ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

এ বিষয়ে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ময়মনসিংহের পুলিশ সুপার মো. রকিবুল আক্তার বলেন, আদালতের কপি এখনো হাতে পাইনি। তবে মামলাটি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করা হবে। তদন্ত শেষে প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।

 কামরুজ্জামান মিন্টু/এফএ/জিকেএস