চলতি বছর ডিসেম্বরের আগেই ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনে সরকারকে চাপে রাখতে চাইছে সিপিবি, বাসদ ও গণঅধিকার পরিষদ। এর আগে প্রয়োজনীয় কিছু সংস্কার শেষ করতে সরকারকে সহযোগিতা করার কথাও বলেছে দলগুলো।
Advertisement
রোববার (২০ এপ্রিল) রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে বিএনপির সঙ্গে বৈঠক শেষে দলগুলোর নেতারা এই তথ্য জানিয়েছেন।
বৈঠকে বিএনপির পক্ষ থেকে ছিলেন দলটির লিয়াজোঁ কমিটির প্রধান আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, বিএনপির ভাইস-চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু। সিপিবির পক্ষে ছিলেন দলের সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, বর্তমান সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলম, সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স। বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ, সহকারী সাধারণ সম্পাদক রাজেকুজ্জামান রতন এসময় উপস্থিত ছিলেন।
গণঅধিকার পরিষদের পক্ষে বৈঠকে যোগ দেন দলটির সভাপতি নুরুল ইসলাম নুর, সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান, জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি ফারুক হাসান ও উচ্চতর পরিষদ সদস্য আবু হানিফ।
Advertisement
বৈঠক শেষে আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী মাহমুদ বলেন, ডিসেম্বরের আগেই নির্বাচন সম্ভব। আওয়ামী লীগের বিচার করবে বিচার বিভাগ, উদ্যোগ নিতে হবে সরকারকে।
এ সময় তিনি আরও বলেন, সংস্কারের বিষয়ে কোনো সংকট নেই। ঐকমত্য কোথায় কোথায় হয়েছে তা জানতে এক সপ্তাহের বেশি সময় লাগার কথা না।
ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের ব্যাপারে রাজনৈতিক ঐক্যের বিষয়ে মূলত প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে। আগামী ডিসেম্বরে জাতীয় নির্বাচনের বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব রয়েছে।
সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, সিপিবি, বাম জোট অনেক দিন ধরে বলে আসছে, বাংলাদেশে জরুরিভাবে নির্বাচিত সরকার দরকার। অনির্বাচিত সরকারের ক্ষমতা দীর্ঘায়িত হলে সংকট আরও ঘনীভূত হবে। আমরা বলছি, ডিসেম্বরের অনেক আগেই নির্বাচন করা সম্ভব। এর আগে প্রয়োজনীয় কিছু সংস্কার এই সরকার করতে পারে। বিএনপির নেতারাও সেই কথা বলেছেন।
Advertisement
প্রিন্স জানান, আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পরে নতুন যে ২২টি রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ ঘটেছে। সেসব দলের নেতাদের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক বৈঠক করছে বাম জোট।
এসব বৈঠকে নেতারা নির্বাচনের পরিবেশ, দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে পারস্পরিক মতবিনিময় করছেন বলে জানান প্রিন্স। তবে সব আলোচনা যে দ্রুত নির্বাচন আয়োজন করার লক্ষ্যেই এগোচ্ছে, সেই আভাসও দেন সিপিবির এই নেতা।
তিনি বলেন, এখনকার এজেন্ডা হল দ্রুততম সময়ে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা। ডিসেম্বরের আগে নির্বাচন করার দিকে জরুরিভাবে আগানো দরকার। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উচিত হচ্ছে, তারা নির্বাচন কমিশনকে বলবে অক্টোবর, নভেম্বর বা ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে নির্বাচনের শিডিউল ঘোষণা করতে। স্বাধীন, নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন যত দ্রুত এই ঘোষণা দেবে তত দ্রুত সংকট দূর হবে। দেশ গণতন্ত্রের পথে যাত্রা শুরু করবে।
বাসদ নেতা বজলুর রশীদ ফিরোজ বলেন, ডিসেম্বরের আগে নির্বাচনের ইস্যুতে আমাদের দাবি শুনে বিএনপি নেতারা বলেছেন, সবাই মিলে একত্রে এ দাবি তোলা যায়। তবে আমরা তাদের বলেছি, জামায়াতে ইসলামী বা অন্যান্য ধর্মভিত্তিক দলগুলোকে নিয়ে বিএনপি এই দাবি তুলতে গেলে আমরা সঙ্গে যাব না। সেক্ষেত্রে আমরা আলাদা আলাদাভাবেই নির্বাচন কমিশনে নিজেদের দাবি বলব।
বৈঠকে গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান বলেন, সংস্কারের জাতীয় সনদ, জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে গণহত্যার বিচারে সরকারের ভূমিকা স্পষ্ট করা, ডিসেম্বরের আগে জুলাই সনদ প্রকাশ- এই তিন ইস্যু নিয়ে আমরা সরকারকে অনুরোধ করছি। এতে বিএনপি নেতাদের কী মতামত সেটি জানতে আমরা আজ বৈঠক করেছি। তারা এসব ইস্যুতে প্রায় একমত হয়েছেন।
রাশেদ জানান, গণঅধিকার পরিষদও ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন চাইছে। তবে তার আগে দেশের প্রয়োজনীয় সংস্কার কার্যক্রমে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করতে প্রস্তুত তাদের দল। তিনি বলেন, গণঅভ্যুত্থানের পরে পারস্পরিক সমঝোতার ভিত্তিতে এই সরকার ক্ষমতায় এসেছে। ড. মুহাম্মদ ইউনূস ভালো মানুষ, আমাদের উচিত তাকে সহযোগিতা করা।
গণঅভ্যুত্থানে পতিত আওয়ামী লীগ বিভিন্ন স্থানে ঝটিকা মিছিল করায় উদ্বেগ প্রকাশ করা হয় বৈঠকে। রাশেদ বলেন, এই ফ্যাসিবাদী শক্তি নানাভাবে ফিরে আসার চেষ্টা করছে। সরকার ও প্রশাসনে এখনো ফ্যাসিবাদী শক্তি বিরাজমান। আমরা তাদের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে বৈঠকে রাজনৈতিক ঐকমত্যের কথা বলেছি।
বিএনপির লিয়াজোঁ কমিটির সঙ্গে বৈঠকের পরে দুই ছাত্র উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি করেছেন গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর। অন্তর্বর্তী সরকারে ছাত্র প্রতিনিধি হিসেবে আসিফ মাহমুদ ও মাহফুজ আলম আছেন। আসিফ শ্রম ও কর্মসংস্থান এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হিসেবে আছেন। এ ছাড়া মাহফুজ আলম আছেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার দায়িত্বে। নুরুল হক বলেন, এই সরকারে দুই ছাত্র উপদেষ্টা আছেন, তারা স্বেচ্ছায় পদত্যাগ না করলে গণঅধিকার পরিষদের পক্ষ থেকে কর্মসূচি নেওয়া হবে।
কেএইচ/এএমএ/জেআইএম