মতামত

উৎসবের নির্বাচন কেন প্রাণঘাতী?

এটা খুবই দুঃখজনক যে নির্বাচনী সহিংসতা কমছে না। এতে প্রাণহানি ঘটেই চলেছে। সর্বশেষ গতকাল শনিবার অনুষ্ঠিত পঞ্চম ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে একজন চেয়ারম্যানপ্রার্থীসহ (যিনি বর্তমানেও চেয়ারম্যান ছিলেন) বিভিন্ন স্থানে কমপক্ষে ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। আরো দুঃখজনক যে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা থেকে এ পর্যন্ত নির্বাচনী সহিংসতায় প্রাণ গেছে ৯৩ জনের। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে নির্বাচন কমিশন কিছুতেই পরিস্থতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারছে না। বরং দিন যতো যাচ্ছে তারা ততোই খেই হারিয়ে ফেলছে। কিন্তু এভাবে তো চলতে পারে না। দেশে প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে স্থানীয় সরকারের তৃণমূল পর্যায়ের এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। আশা করা গিয়েছিল উৎসবমুখর পরিবেশে নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে সম্পন্ন করতে কমিশন সব ধরনের ব্যবস্থা করবে। কমিশন সে ধরনের আশ্বাসও দিয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে এর প্রতিফলন খুব একটা দেখা যাচ্ছে না। বিশেষ করে নির্বাচনী সহিংসতায় প্রাণহানির বিষয়টি মেনে নেওয়া যায় না।  নির্বাচন আমাদের দেশে উৎসব। সেখানে প্রাণহানি কেন ঘটবে? বাস্তবতা হচ্ছে, নির্বাচন কমিশন, স্থানীয় প্রশাসন, রাজনৈতিক দল,  প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী, সমর্থক, ভোটার সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা ছাড়া এ অবস্থার উত্তরণ অসম্ভব। বাংলাদেশে রাজনৈতিক সংকটের মূলে আছে নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে আস্থাহীনতা। সেটা জাতীয় নির্বাচনই হোক, আর স্থানীয় নির্বাচনই হোক। নির্বাচন কোন পদ্ধতিতে হবে, কিংবা কার অধীনে হবে- এ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারছে না। এরশাদের পতনের পর তিন জোটের রূপরেখা অনুযায়ী তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয় নির্বাচনকালীন সরকার পরিচালনার জন্য। এরই মধ্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে বেশ কয়েকটি জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়ে গেছে। কিন্তু কোনো নির্বাচনই সকল পক্ষের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। এই পরিপ্রেক্ষিতে পঞ্চদশ সংশোধনীর পর তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থায়ও বাতিল হয়েছে। এই অবস্থায়ই দেশে দলীয়ভাবে স্থানীয় সরকার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। পৌরসভা নির্বাচন দলীয়ভাবে হওয়ার পর এখন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনও দলীয়ভাবে হচ্ছে। এ অবস্থায় মনে রাখতে হবে যখন সংকটের মূলে নির্বাচন ব্যবস্থা তখন নির্বাচন সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ করার জন্য সর্বশক্তি নিয়োগ করতে হবে। মানুষের ভোটাধিকার রক্ষা করতে হবে যে কোনো মূল্যে। কারণ এটা সরকারের সাংবিধানিক দায়িত্ব। দেশের মানুষ নির্বাচনী সহিংসতা বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ দেখতে চায়। এইচআর/এমএস

Advertisement