শিক্ষা

জনদুর্ভোগ এড়িয়েই মহাসমাবেশ করলেন পলিটেকনিক শিক্ষার্থীরা

জনদুর্ভোগ এড়িয়েই মহাসমাবেশ করলেন পলিটেকনিক শিক্ষার্থীরা

ছয় দফা দাবি আদায়ে ‌‘জনদুর্ভোগ এড়িয়ে’ মহাসমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছিলেন পলিটেকনিক শিক্ষার্থীরা। সেই কথা রেখেছেন তারা। মহাসমাবেশ করার জন্য শিক্ষার্থীরা এমন একটি জায়গা বেছে নিয়েছেন, যে সড়ক দিয়ে গণপরিবহন চলাচল করে না বললেই চলে। ফলে জনদুর্ভোগ এড়িয়েই সফলভাবে তারা তাদের দাবি-দাওয়া আদায়ের মহাসমাবেশ করেছেন।

Advertisement

পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী রোববার (২০ এপ্রিল) বেলা ১১টা থেকে পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের মহাসমাবেশ শুরুর কথা ছিল। তবে কিছুটা দেরিতে দুপুর ১২টায় আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের সমাবেশ শুরু হয়। এর আগে ঢাকা পলিটেকনিকের সামনে থেকে যে বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়, সেটিও রাস্তার একপাশ দিয়ে সমাবেশস্থলে আসে। ফলে যানচলাচলে বিঘ্ন ঘটেছে কম।

এদিকে, জনদুর্ভোগ এড়িযে মহাসমাবেশ করতে শিক্ষার্থীরা বেছে নিয়েছেন ঢাকা মহিলা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের সামনের নতুন রাস্তা (আগারগাঁও নতুন সড়ক), রাজধানীর ফার্মগেট থেকে মিরপুর অভিমুখী ব্যস্ততম বেগম রোকেয়া অ্যাভিনিউ থেকে কিছুটা ভেতরে। ফলে এ সড়কে যান চলাচল খুবই কম। আশপাশে রয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর, কারিগরি শিক্ষা বোর্ড। কিছুটা দূরে নিউরো সায়েন্স ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল এবং আইসিটি টাওয়ার।

সরেজমিন দেখা যায়, এ সড়কে কিছু সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ব্যক্তিগত গাড়ি ও মোটরসাইকেল চলাচল করে। পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের সমাবেশ ঘিরে সকাল থেকে রাস্তার দুই প্রান্তে অবস্থান নিয়েছে পুলিশ। তবে তাতে কোনো যানজট বা ভোগান্তি নেই। কারণ খুব সহজেই এ রাস্তা এড়িয়ে পাশের রাস্তা দিয়ে আশপাশের সব অফিসে যাতায়াত করা যায়। তাতে বাড়তি সময়ও লাগছে না।

Advertisement

মূল সড়ক ছেড়ে ভেতরের ফাঁকা রাস্তায় মহাসমাবেশ করায় শিক্ষার্থীদের প্রশংসা করছেন অনেকে। ফার্মগেট থেকে মিরপুরের দিকে যাওয়া একটি বাসের যাত্রী আখতারুল হক। বাসে বসে তিনি বলেন, শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নামলে তো ধ্যান-জ্ঞান থাকে না। মানুষের ভোগান্তি হচ্ছে সেটা বোঝে না। এরা (পলিটেকনিক শিক্ষার্থী) প্রথম দিনে খুব জ্বালিয়েছে। আজকে দেখি বোধ-বুদ্ধি হয়েছে। ফাঁকা জায়গায় সমাবেশ করছে এটা ভালো। দাবি আদায়ে আন্দোলন করলে এমনটা করাই উচিত। তাতে ভোগান্তি হয় না।

আগারগাঁও নতুন রাস্তায় প্রবেশের পথে কয়েকটি খাবার হোটেল রয়েছে। একটি হোটেলের ম্যানেজার শফিকুল বলেন, এদিকে তেমন বড় গাড়ি চলে না। অফিসের লোকজন গাড়ি নিয়ে ঢোকে। আর কিছু সিএনজি, রিকশা, মোটরসাইকেল চলে। এ রাস্তা সারাদিন বন্ধ থাকলেও সমস্যা নেই। একটু সামনে গেলেই আরেক গলি। ওই গলি দিয়েও সহজে যাতায়াত করা যাবে।

কারিগরি ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম প্রতিনিধি ও ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী জোবায়ের পাটোয়ারী বলেন, আমরা সরকারকে সহযোগিতা করতে চাই। মানুষের ভোগান্তি দিতে চাই না। আমাদের উদ্দেশ্য স্পষ্ট। আমরা কারো কথায় আন্দোলনে নামিনি। যৌক্তিক দাবি নিয়ে নেমেছি। আজকের কর্মসূচি দেখেও সরকারের বোঝা উচিত। আশা করি, সরকার আমাদের দাবিগুলো দ্রুত মেনে নেবে। লিখিতভাবে এসব দাবি-দাওয়া পূরণের রোডম্যাপ জানাবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদরাসা বিভাগের সচিব ড. খ ম কবিরুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, আমরা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দফায় দফায় কথা বলছি। আমি কুড়িগ্রাম ভিজিটে গিয়ে সেখানেও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একাত্মতা জানিয়ে কথা বলে এসেছি। আমরা তাদের সব সুবিধা নিশ্চিতে কাজ করতে বসেছি।

Advertisement

তিনি আরও বলেন, এখন কিছু বিষয় আছে, তারা না জেনে দাবি করছেন। যেটা সত্য নয়। যেমন- আদালতের রায়ে কোথাও ৩০ শতাংশ কোটা ক্রাফট ইনস্ট্রাক্টরদের জন্য রাখা হয়নি। আর কিছু বিষয় আছে যেটা এ মন্ত্রণালয়ের (শিক্ষা) কারিগরি বিভাগ একা পূরণ করতে পারবে না। এর সঙ্গে অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের যোগসূত্র রয়েছে। ফলে আমাদের দিক থেকে শিক্ষার্থীদের কোনো দাবির প্রতি দ্বিমত নেই।

৬ দফা দাবি আদায়ে কয়েক মাস ধরে আন্দোলন করছেন সারাদেশের ৪ লাখেরও বেশি পলিটেকনিক শিক্ষার্থী। প্রথম দিকে তারা স্মারকলিপি প্রদান ও মানববন্ধন কর্মসূচি করেছেন। পরে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করেও দাবি আদায় না হওয়ায় গত ১৬ এপ্রিল রাজধানীর তেজগাঁওয়ে সাতরাস্তা মোড় অবরোধ করেন। এতে রাজধানীতে ব্যাপক যানজট শুরু হয়। একই দিনে সারাদেশে অবরোধ কর্মসূচি করেন শিক্ষার্থীরা। কুমিল্লায় শিক্ষার্থীদের অবরোধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা লাঠিচার্জ করেন। এতে পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের আন্দোলন আলোচনায় আসে।

এদিকে, ১৭ এপ্রিল তারা সারাদেশে রেলপথ ব্লকেড কর্মসূচি ঘোষণা করেন। পরে সরকারের বিভিন্ন পর্যায় থেকে তাদের আশ্বাস দেওয়া হলে কর্মসূচি শিথিল করে আলোচনা বসেন শিক্ষার্থীরা। তবে সেই আলোচনা ফলপ্রসূ না হওয়ায় ধারাবাহিক কর্মসূচি পালন করে আসছেন তারা।

কারিগরি ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে চলমান এ আন্দোলন শান্তিপূর্ণ রাখার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন নেতারা। তৃতীয় কোনো পক্ষ যাতে এ আন্দোলনে ঢুকে সহিংসতার সৃষ্টি না করতে পারে সেজন্য সতর্ক রয়েছেন শিক্ষার্থীরা। তাদের এ আন্দোলনে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা নেই বলে দাবি করছেন তারা। যদিও ইসলামী ছাত্রশিবির এরই মধ্যে শিক্ষার্থীদের এ আন্দোলনে সমর্থন দিয়েছেন এবং সরকারকে দাবি মেনে নিতে আহ্বান জানিয়েছেন।

এএএইচ/এএমএ/এমএস