গত ২৪ মার্চ অন্তর্বর্তী সরকারের সাত উপদেষ্টা এবং প্রধান উপদেষ্টার দুজন বিশেষ সহকারীর উপস্থিতিতে ঢাকঢোল পিটিয়ে উদ্বোধন করা হয় সীতাকুণ্ড-সন্দ্বীপ রুটের ফেরি সার্ভিস। তবে উদ্বোধনের মাস না ঘুরতেই এই রুটে ফেরি বন্ধ হওয়ার পথে। নদীপথে চলাচলের উপযোগী ফেরি সমুদ্রে চালু করলেও দুর্ঘটনার শঙ্কায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহণ করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি)।
Advertisement
বিআইডব্লিউটিসির চট্টগ্রাম জোনের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার গোপাল চন্দ্র মজুমদার বলেন, ১৫ মার্চ থেকে ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত সাগর উত্তাল থাকে। এসময় সাগর পাড়ি দিয়ে এই ফেরি চলাচল সম্ভব নয়। সীতাকুণ্ড-সন্দ্বীপ রুটে যে ফেরি চলাচল করছে, তা নদীপথের জন্য তৈরি করা। সাগর পাড়ি দেওয়ার সক্ষমতা নেই। এখন এই ফেরি চালালে যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তাই এসময় ফেরি চলাচল বন্ধ রাখতে সরকারকে জানানো হয়েছে। সরকারের নির্দেশনা এলে যেকোনো সময় ফেরি চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হবে।
বিআইডব্লিউটিসির কর্মকর্তারা জানান, সীতাকুণ্ড-সন্দ্বীপ রুটের ১৩ কিলোমিটার সাগরে চলাচলের মতো উপযোগী ফেরি বিআইডব্লিউটিসির নেই। সরকারের আগ্রহে চাঁদপুর থেকে কপোতাক্ষ নামের একটি ফেরি এনে সীতাকুণ্ড-সন্দ্বীপ রুটে ফেরি সার্ভিস চালু করা হয়েছে। তবে মার্চের মাঝামাঝি থেকে এ রুটে এই মানের ফেরি চলাচল বিপজ্জনক।
এদিকে বড় ধরনের দুর্ঘটনার শঙ্কার কথা জানিয়েছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহণ কর্তৃপক্ষও (বিআইডব্লিউটিএ)। সংস্থাটির চট্টগ্রাম অঞ্চলের উপপরিচালক মোহাম্মদ কামরুজ্জামান বলেন, সমুদ্রে চলাচলের উপযোগী ফেরি না থাকায় উদ্বোধনের মাত্র এক মাসের মধ্যে যেকোনো সময় বন্ধ হয়ে যাবে এই ফেরি চলাচল। কারণ বর্তমানে যে ফেরিটি চলছে, তা নদীতে চলাচল উপযোগী। এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহ থেকে অক্টোবর পর্যন্ত সন্দ্বীপ চ্যানেলের মতো উত্তাল সমুদ্রে এই ফেরি চলাচল খুবই ঝুঁকিপূর্ণ।
Advertisement
বিআইডব্লিউটিসি কর্মকর্তা গোপাল চন্দ্র বলেন, সমুদ্রে চলাচল উপযোগী ফেরি নির্মাণের চিন্তা করছে সরকার। বিদেশ থেকে নকশা এনে তা বাংলাদেশেই নির্মাণ করা হবে। এই কোস্টাল ফেরি নির্মাণ-সংগ্রহের জন্য এরইমধ্যে প্রকৌশলীদের নিয়ে কমিটি গঠন করা হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সন্দ্বীপের প্রায় চার লাখ অধিবাসী যাতায়াতের জন্য স্পিডবোট বা ছোট্ট নৌকার ওপর নির্ভরশীল। তাও জোয়ার-ভাটার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হয়। যা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ এবং প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে। তাই দীর্ঘদিন ধরে তাদের যাতায়াতের কষ্ট লাঘবের দাবি জানিয়ে আসছিলেন বাসিন্দারা। সন্দ্বীপের বাসিন্দা ফাওজুল কবির খান অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা নিয়োগ পাওয়ার পর চট্টগ্রাম-সন্দ্বীপ রুটে ফেরি চলাচলের উদ্যোগ নেন। উপদেষ্টা নিজেই তদারকি করেন এ প্রকল্পের কাজ। এই ফেরি সার্ভিসটি ঘিরে দ্বীপ উপজেলা সন্দ্বীপের সঙ্গে চট্টগ্রামের মূল ভূখণ্ডের যোগাযোগের চরম দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পাবেন বলে আশায় বুক বেঁধেছিলেন সন্দ্বীপবাসী।
তবে বিশেষজ্ঞরা বলেছিলেন, কোনো ধরনের সমীক্ষা ছাড়াই তড়িঘড়ি করে নেওয়া ২০০ কোটি টাকার এ প্রকল্প থেকে আশানুরূপ সুফল পাবেন না দ্বীপবাসী, বরং টাকার অপচয়ই হবে।
জানা গেছে, সড়ক বিভাগ, বিআইডব্লিউটিএ ও বিআইডব্লিউটিসি আলাদাভাবে নিজস্ব মেরামত ও রাজস্ব তহবিল থেকে টাকা খরচ করে বাস্তবায়ন করছে প্রকল্পটি।
Advertisement
বিআইডব্লিউটিএ জানায়, চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার বাঁশবাড়িয়া উপকূলে বেড়িবাঁধ থেকে সমুদ্রের প্রায় ৭০০ মিটার গভীর পর্যন্ত দুই লেনের প্রশস্ত একটি সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে। একইভাবে সন্দ্বীপ উপজেলার গুপ্তছড়া উপকূলে নির্মাণ করা হয়েছে ৬০০ মিটারের আরেকটি সড়ক।
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা বলছেন, কোনো রকম পূর্বপরিকল্পনা ও সম্ভাব্যতা যাচাই ছাড়া সমুদ্রের টাইডাল জোনে নির্মিত সড়কটি গ্রীষ্ম ও বর্ষা মৌসুমে জোয়ারের পানিতে তলিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
এফএ/জিকেএস