অর্থনীতি

‘বেস্ট অব বাংলাদেশ ইন ইউরোপ’ এর প্রথম দিনের কার্যক্রম সম্পন্ন

‘বেস্ট অব বাংলাদেশ ইন ইউরোপ’ এর প্রথম দিনের কার্যক্রম সম্পন্ন

ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে আগত ক্রেতা, বিনিয়োগকারী এবং স্টেকহোল্ডারদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে নেদারল্যান্ডসের আমস্টারডামে শুরু হয়েছে দুদিনব্যাপী ‘বেস্ট অব বাংলাদেশ ইন ইউরোপ’। ইউরোপজুড়ে ১৫০০-এরও বেশি দর্শনার্থী এই সম্মেলন ও প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণ করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। বাংলাদেশের বিশাল বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্ভাবনার আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তুলে ধরাই এ আয়োজনের মূল লক্ষ্য।

Advertisement

বাংলাদেশ অ্যাপারেল এক্সচেঞ্জ (বিএই)-এর উদ্যোগে এবং পিডিএস লিমিটেডের সহায়তায় আয়োজিত এই প্রদর্শনী ও সম্মেলনে সহযোগী হিসেবে রয়েছে সিটি ব্যাংক পিএলসি, বাংলাদেশ এবং কেডিএস গ্রুপ। পাশাপাশি, বাংলাদেশ সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) এ আয়োজনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

প্রথম দিনে ৩২টি প্রদর্শনী স্টলের মাধ্যমে বাংলাদেশের আটটি প্রধান খাত-পোশাক, চামড়া, পাট ও হস্তশিল্প, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি-খাদ্য, পোল্ট্রি এবং বীজ-এর শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠানসমূহ তাদের পণ্য ও সেবা সমূহ প্রদর্শন করে। এই প্রদর্শনীটি বাংলাদেশি উদ্যোক্তাদের ইউরোপীয় ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে সরাসরি সংযোগ স্থাপনের এক অসাধারণ সুযোগ করে দিয়েছে।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) ও বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন। বিশেষ অতিথি ছিলেন ইউরোপীয় এক্সটার্নাল অ্যাকশন সার্ভিসের সাউথ এশিয়া বিভাগের প্রধান চার্লস হোয়াইটলি, নেদারল্যান্ডসের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বিষয়ক মহাপরিচালক পাসকালে গ্রোটেনহুইস, নেদারল্যান্ডসে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত তারেক মুহাম্মদ এবং পিডিএস লিমিটেডের নির্বাহী ভাইস চেয়ারম্যান পল্লাক সেথ।

Advertisement

বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) ও বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন বলেন, বাংলাদেশে সব কিছু নিখুঁত নয়, তবে অনেক ইতিবাচক দিকও রয়েছে। আমরা বাংলাদেশের জন্য একটি উচ্চাকাঙ্ক্ষা বা রূপকল্প নির্ধারণ করতে পারি এবং যে সব সমস্যা আছে সেগুলো সাধ্য অনুযায়ী সমাধান করার চেষ্টা করতে পারি। আমরা বাণিজ্য ও বিনিয়োগের প্রধান চ্যালেঞ্জগুলোকে মোকাবিলা করার বিষয়কে অগ্রাধিকার দিতে পারি। ইতোমধ্যে আমাদের উচ্চাকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নের জন্য বেশ কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। তেমনি একটি হলো ‌‌‘গ্রিন চ্যানেল’, যা ব্যবসার প্রক্রিয়াগুলোকে দ্রুততর করার জন্য একটি ব্যবস্থা। আরেকটি হলো ‘ওয়ান-স্টপ সার্ভিস’, যা বাণিজ্য ও বিনিয়োগের জন্য একটি যুগোপযোগী ব্যবসায়িক মডেল। আমাদের লক্ষ্য হলো বাংলাদেশকে একটি বৈশ্বিক উৎপাদন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা। আমাদের আছে দক্ষ ও তরুণ জনশক্তি এবং ব্যবসার জন্য উপযোগী ভৌগোলিক অবস্থান।

ইউরোপীয় এক্সটার্নাল অ্যাকশন সার্ভিসের সাউথ এশিয়া বিভাগের প্রধান চার্লস হোয়াইটলি বলেন, বাংলাদেশ গত কয়েক বছরে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে। বিশেষ করে তৈরি পোশাক শিল্প বাংলাদেশের অর্থনীতির একটি প্রধান চালিকাশক্তি হিসেবে গড়ে উঠেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় অংশীদার।

বাংলাদেশের রপ্তানি বৈচিত্র্যকরণের জন্য প্রয়োজনীয় সব উপাদানই রয়েছে-যেমন দক্ষ জনশক্তি, তরুণ জনগোষ্ঠী, প্রতিযোগিতামূলক মজুরি, উদ্ভাবন, উন্নত অবকাঠামো, ডিজিটালাইজেশন এবং বঙ্গোপসাগর পাশে গুরুত্বপূর্ণ ভৌগোলিক অবস্থান। ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশের পাশে থাকবে। বিশেষ করে শ্রম অধিকার নিয়ে আমরা বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের অংশীদার। জাতীয় শ্রম কর্মপরিকল্পনার মাধ্যমে শ্রমখাতে সংস্কারে আমাদের অবদান রয়েছে।

নেদারল্যান্ডসের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বিষয়ক মহাপরিচালক পাসকালে গ্রোটেনহুইস বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য, বিনিয়োগ এবং উন্নয়নের ক্ষেত্রে দীর্ঘস্থায়ী অংশীদার হিসেবে একসঙ্গে কাজ করতে পেরে নেদারল্যান্ডস গর্বিত। বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাত কঠোর পরিশ্রম, উদ্যোক্তাদের দায়িত্বশীলতা ও ন্যায্য মজুরির নিশ্চিতের মাধ্যমে ভবিষ্যতের একটি আদর্শ ব্যবসায়িক মডেল তৈরি করেছে। ডাচ কোম্পানিগুলোর বাংলাদেশে কাজ করার ব্যাপারে বিপুল আগ্রহ ও সম্ভাবনা রয়েছে। আমরা একসঙ্গে ভবিষ্যতের জন্য কাজ করতে পারি।

Advertisement

সম্মেলনের প্রথম দিনে ‘বাংলাদেশ: অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং বিনিয়োগের সুযোগ’, এবং ‘বাংলাদেশ: ভবিষ্যৎ বৈশ্বিক সোর্সিং হাব’ শীর্ষক দুইটি প্যানেল আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

এই প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণকারী উল্লেখযোগ্য প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে- আউস বাংলা জুটেক্স লিমিটেড, অ্যাগ্রোনোচেইন, ব্রেইন স্টেশন ২৩, বিআইজেআইটি গ্রুপ, বন্ডস্টেইন টেকনোলজিস লিমিটেড, কান্ট্রি অ্যাগ্রো, সেন্ট্রোটেক্স লিমিটেড, ক্ল্যাসিকাল হ্যান্ডমেড প্রোডাক্টস বিডি লিমিটেড, ডেলমাস অ্যাপারেলস প্রাইভেট লিমিটেড, নিট এশিয়া লিমিটেড, কেডিএস গ্রুপ, লাল তীর সিড লিমিটেড, লেদারিনা প্রাইভেট লিমিটেড, ম্যাপড ইন বাংলাদেশ (এমআইবি), মেরিডিয়ান ফুডস লিমিটেড, নয়েজ জিন্স, নারিশ ফিডস লিমিটেড, পিডিএস লিমিটেড, পিডিএস ভেঞ্চার, গুড আর্থ, স্মারটেক্স, প্যাসিফিক নিট ডিভিশন, প্যাডকস জিন্স, পলকা ফ্লেক্স, প্রাণ ফুডস লিমিটেড, প্যারাগন গ্রুপ, রাইজিং গ্রুপ, রিভার্স রিসোর্সেস, রুহরোস আরবিটি, সিমকো স্পিনিং অ্যান্ড টেক্সটাইলস লিমিটেড (সাইক্লো), শিন শিন অ্যাপারেলস লিমিটেড, তারাঙ্গো, তুর্জো টেক্স লিমিটেড, টিম গ্রুপ এবং ঝেজিয়াং ওয়েইশিং ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি লিমিটেড।

এই আয়োজনে সহযোগিতা করেছে অ্যাপারেল ইমপ্যাক্ট ইনস্টিটিউট, ক্যাসকেল, সার্কুলার ইকোনোমি, ক্লিন অ্যান্ড ইউনিক, ডাচ গ্রিনহাউস ডেল্টা, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, এক্সপোর্ট পার্টনার, এথিক্যাল ট্রেডিং ইনিশিয়েটিভ, ফেয়ার ওয়্যার ফাউন্ডেশন, ফ্যাশন ফর গুড, নেদারল্যান্ডস ফুড পার্টনারশিপ, নেদারল্যান্ডস এন্টারপ্রাইজ এজেন্সি (আরভিও), ওয়ানট্রুভ্যালু, সিডএনএল, সোশ্যাল অ্যান্ড লেবার কনভারজেন্স প্রোগ্রাম (এসএলসিপি), এবং ওয়াইওয়াই ভেঞ্চারস।

জেএইচ