জাতীয়

৮ মাসে ৭৮২২ জনকে গ্রেফতার করেছে সেনাবাহিনী

৮ মাসে ৭৮২২ জনকে গ্রেফতার করেছে সেনাবাহিনী

বাংলাদেশ সেনাবাহিনী গত দুই মাসে অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সমন্বিত উদ্যোগে বিভিন্ন ধরনের অপরাধের সঙ্গে জড়িত ২ হাজার ৪৫৭ জনকে গ্রেফতার করেছে। গত ৮ মাসে এ পর্যন্ত ৭ হাজার ৮২২ জনকে বিভিন্ন স্থান থেকে গ্রেফতার করেছে সেনাবাহিনী। এ পর্যন্ত অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ৯ হাজার ৩৭০টি এবং ২ লাখ ৮৫ হাজার ৫২ রাউন্ড গোলাবারুদ উদ্ধার করেছে।

Advertisement

বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) ঢাকা সেনানিবাসে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সেনাসদর মিলিটারি অপারেশনস ডাইরেক্টরেটের কর্নেল স্টাফ কর্নেল মো. শফিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এতথ্য জানান।

তিনি বলেন, গত দুই মাসে দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী অন্যান্য সব আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সমন্বিত উদ্যোগে বিভিন্ন ধরনের অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ত মোট ২ হাজার ৪৫৭ জন এবং এ পর্যন্ত মোট ৭ হাজার ৮২২ জনকে বিভিন্ন স্থান থেকে গ্রেফতার করেছে। যাদের মধ্যে কিশোর গ্যাং, তালিকাভুক্ত অপরাধী, মাদক কারবারি, অপহরণকারী, চোরাচালানকারী, প্রতারক ও দালাল চক্র, চাঁদাবাজ, ডাকাত ও ছিনতাইকারী উল্লেখযোগ্য।

এরই ধারাবাহিকতায় গত দুই মাসে সেনাবাহিনী ৩২০টি অবৈধ অস্ত্র ও ৫৬৪ রাউন্ড গোলাবারুদ এবং এ পর্যন্ত ৯ হাজার ৩৭০টি অবৈধ অস্ত্র ও ২ লাখ ৮৫ হাজার ৫২ রাউন্ড গোলাবারুদ উদ্ধার করেছে।

Advertisement

শিল্পাঞ্চলে ১৩৭টি ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেছে সেনাবাহিনীশিল্পাঞ্চলের নিরাপত্তা নিশ্চিতের কথা উল্লেখ করে কর্নেল শফিকুল ইসলাম বলেন, শিল্পাঞ্চলে সেনাবাহিনী ১৩৭টি ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেছে এবং ৩১ বার বিভিন্ন মূল সড়ক অবরোধ থেকে অবমুক্ত করেছে। গত ৯ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জে অবস্থিত রবিনটেক্স গার্মেন্টসে অস্থিরতা প্রশমনকালে সেনাসদস্যরা কিছু গার্মেন্টস শ্রমিক কর্তৃক ইট-পাটকেল নিক্ষেপের ঘটনায় আক্রান্ত হোন এবং এতে ২৪ জন সেনাসদস্য আহত হোন। আহতদের মধ্যে ২০ জনকে সিএমএইচে ভর্তি হয়।

এছাড়া ঈদের আগে গার্মেন্টসে অস্থিরতা মোকাবিলায় সেনাবাহিনী মালিকপক্ষ, শ্রমিকপক্ষ, মন্ত্রণালয়, শিল্পাঞ্চল পুলিশ ও বিজিএমইএসহ সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে সমন্বয় সাধন করে শ্রমিকদের বেতন ও ভাতা পরিশোধে বিশেষ ব্যবস্থা করে যা শ্রমিকদের মাঝে ঈদ পূর্ববর্তী গতানুগতিক অস্থিরতা প্রশমনে অত্যন্ত কার্যকরী ভূমিকা রাখে।

শিল্পাঞ্চল ছাড়াও সেনাবাহিনী গত দুই মাসে ২৩২টি বিভিন্ন ধরনের বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেছে, যার মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সংক্রান্ত ঘটনা ছিল ৩৭টি, সরকারি সংস্থা/অফিস সংক্রান্ত ২৪টি, রাজনৈতিক কোন্দল ৭৬টি এবং অন্যান্য বিভিন্ন ধরনের ঘটনা ছিল ১৫টি।

ঈদে যেসব কার্যক্রম ছিল সেনাবাহিনীরকর্নেল শফিকুল ইসলাম বলেন, ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ঘরমুখো মানুষের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ও সুশৃঙ্খল যানবাহন চলাচল নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ঈদের আগে ও পরে মিলে ২ সপ্তাহের বিশেষ কার্যক্রম গ্রহণ করে। এর অংশ হিসেবে জাতীয় মহাসড়কগুলোতে নির্বিঘ্নে যান চলাচল নিশ্চিত করতে ঢাকাসহ দেশের সব জেলার বাসস্ট্যান্ড, রেলস্টেশন, এবং লঞ্চ টার্মিনাল ও মহাসড়কে দিন-রাত টহল পরিচালনা, স্পর্শকাতর স্থানে চেকপোস্ট স্থাপন এবং জনগণের মধ্যে সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়, যা মানুষের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। ফলশ্রুতিতে, সড়ক দুর্ঘটনাসহ অন্যান্য অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড গত বছরের তুলনায় বহুলাংশে কমেছে। এতে নির্বিঘ্নে গন্তব্যে পৌঁছানোসহ পরিবার-পরিজনের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ ও আনন্দঘনভাবে ঈদ উদযাপনে সহায়ক ভূমিকা রাখে।

Advertisement

মিয়ানমারে ভূমিকম্পে সশস্ত্র বাহিনীর অবদানগত ২৮ মার্চ ৭.৭ মাত্রার ভূমিকম্প মিয়ানমার এবং থাইল্যান্ডে আঘাত হানে। যার ফলে জানমালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। এ ভূমিকম্পে মিয়ানমারে মানবিক বিপর্যয়ের সৃষ্টি হয়। প্রতিবেশী দেশের বিপদসংকুল এসময়ে বাংলাদেশ সরকার জরুরি উদ্ধার, ত্রাণ ও চিকিৎসা সহায়তা প্রদানের উদ্যোগ গ্রহণ করে। সেনাবাহিনীর কর্নেল শামীমের নেতৃত্বে ইঞ্জিনিয়ার কোরের ২১ জনের একটি উদ্ধারকারী দল এবং ১০ জনের একটি মেডিকেল দল পাঠানো হয়। সেনাবাহিনী ছাড়াও নৌবাহিনীর ৩ জন, বিমানবাহিনীর ৩ জন, ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের ১০ জন এবং ৮ সদস্যবিশিষ্ট একটি অসামরিক মেডিকেল দল পাঠানো হয়। এই উদ্ধার, ত্রাণ ও চিকিৎসা সহায়ক দল পাঠানোর ক্ষেত্রে সেনাবাহিনীর বিমান, বিমান বাহিনীর বিমান ও নৌ জাহাজ ব্যবহার করা হয়।

সিএমএইচে চিকিৎসা নিয়েছেন ৪৩৪০ আহততিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষার পাশাপাশি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিভিন্ন সময়ে যারা আহত হয়েছেন, তাদের সুচিকিৎসার জন্য সেনাবাহিনী এ পর্যন্ত ৪ হাজার ৩৪০ জনকে দেশের বিভিন্ন সিএমএইচে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছে, এর মধ্যে ৪৩ জন এখনও চিকিৎসাধীন।

তিনি আরও বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহতদের সেনাবাহিনী কর্তৃক গত ২৩ মার্চ সেনামালঞ্চে ইফতার ও দোয়া মাহফিল এবং ২৫ মার্চ আর্মি মাল্টিপারপাস কমপ্লেক্সে আহত এবং শহীদ পরিবারের সম্মানে সংবর্ধনা আয়োজন করা হয়। যেখানে সেনাপ্রধান উপস্থিত থেকে সবার খোঁজ-খবর নেন, চিকিৎসাসহ সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহত ছাত্র-ছাত্রী পরিবারের সম্মানার্থে আয়োজিত ইফতার অনুষ্ঠানেও সেনাপ্রধান অংশ নেন।

পহেলা বৈশাখে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দিয়েছে সেনাবাহিনীকর্নেল শফিকুল ইসলাম বলেন, পহেলা বৈশাখ সুষ্ঠুভাবে উদ্‌যাপনের লক্ষ্যে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ঢাকাসহ সারাদেশে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়। যার ফলশ্রুতিতে ২-১টি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া দেশের সব স্তরের জনসাধারণ আনন্দঘন পরিবেশের মধ্য দিয়ে পহেলা বৈশাখ ১৪৩২ উদযাপন করতে সক্ষম হয়।

সাতক্ষীরায় নদীর বাঁধ ভাঙনে সেনাবাহিনীর কার্যক্রমগত ৩ এপ্রিল সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলাতে খোলাপেটুয়া নদীর প্রায় ৩০০ মিটার বাঁধ ভেঙে গেলে আশপাশের প্রায় ৯টি গ্রাম প্লাবিত হয়। এ ঘটনায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্যরা পানি উন্নয়ন বোর্ড ও স্থানীয় জনগণকে সম্পৃক্ত করে দ্রুততম সময়ে বাঁধটি মেরামত করতে সক্ষম হয়। সেনাবাহিনী প্রত্যন্ত অঞ্চলে পানিবন্দি মানুষের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে ত্রাণ পৌঁছে দেয়।

এছাড়া গত দুই মাসে চট্টগ্রাম, সাভার, উত্তর বাড্ডা, মিরপুর, বনানী, ভাসানটেক, গাজীপুর, পটুয়াখালী ও বাগেরহাটে সংঘটিত বিভিন্ন অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, ফায়ার সার্ভিস ও অন্যান্য সব আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সমন্বিতভাবে দ্রুততম সময়ে আগুন নিয়ন্ত্রণ ও ক্ষয়ক্ষতি হ্রাসে কার্যকরী ভূমিকা রেখেছে।

এসব কাজের পাশাপাশি সেনাবাহিনী দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখাসহ বিদেশি কূটনীতিক ব্যক্তি ও দূতাবাসগুলোর সামগ্রিক নিরাপত্তা নিশ্চিতের কাজে নিয়োজিত রয়েছে।

এছাড়াও পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখা, এবং কক্সবাজার জেলায় এফডিএমএন ক্যাম্প এলাকার নিরাপত্তা বিধান করার দায়িত্বও সুষ্ঠুভাবে পালন করে যাচ্ছে।

কর্নেল শফিকুল ইসলাম বলেন, দেশের বিরাজমান পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা, দেশের জনগণের জানমাল এবং রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ ও স্থাপনার নিরাপত্তা প্রদানসহ সার্বিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। সেনাপ্রধানের দিক-নির্দেশনাকে অনুসরণ করে দেশের চরাঞ্চলসহ ৬২টি জেলায় সেনাসদস্যরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, স্থানীয় প্রশাসন, বিভিন্ন সংস্থা, গণমাধ্যম এবং সাধারণ জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে সমন্বিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে সার্বক্ষণিক সক্রিয়ভাবে দায়িত্ব পালন করছে। এই সমন্বয় ও পারস্পরিক সহযোগিতা আরও বৃদ্ধি করে চলমান কর্মধারা অব্যাহত রাখতে সেনাবাহিনী অঙ্গীকারবদ্ধ।

টিটি/জেএইচ