রাজনীতি

ইসির সংস্কার ছাড়া নিবন্ধনের আবেদন করবে না এনসিপি

ইসির সংস্কার ছাড়া নিবন্ধনের আবেদন করবে না এনসিপি

• নিবন্ধনের জন্য ইসির কাছে ৩ মাস সময় চাইলো এনসিপি• জুলাই প্রোক্লেমেশন ঘোষণার পরই নির্বাচন প্রক্রিয়ায় যাবে এনসিপি

Advertisement

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া শিক্ষার্থীদের নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। দল গঠনের পর থেকেই বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করে আসছে এনসিপি। নতুন রাজনৈতিক দল হিসেবে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) নিবন্ধন পেতে এখনো আবেদন করেনি দলটি।

এদিকে, নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনের জন্য প্রাথমিকভাবে ২০ এপ্রিল পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছিল ইসি। কিন্তু সংস্কার কমিশনের সুপারিশের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন সংস্কার না হওয়া পর্যন্ত নিবন্ধনের আবেদন করবে না বলে জানিয়েছে এনসিপি।

জাগো নিউজকে এমন কথা জানিয়েছেন দলটির বেশ কয়েকজন নেতা। তারা জানান, নির্বাচন কমিশন সংস্কার না হওয়া পর্যন্ত নিবন্ধনের আবেদন করবে না এনসিপি। যেহেতু সংস্কার প্রক্রিয়া চলমান এবং সব রাজনৈতিক দলের ঐকমত্যের ভিত্তিতে জুলাই প্রোক্লেমেশন ঘোষণা করা হবে, এরপরই নির্বাচন প্রক্রিয়ার দিকে যাবে এনসিপি।

Advertisement

এনসিপির একাধিক সূত্র জানিয়েছে, জুলাই প্রোক্লেমেশনের দিকে বেশি নজর দিচ্ছে এনসিপির শীর্ষ নেতারা। তাদের চাওয়া এর মাধ্যমে গণহত্যার অভিযোগে আওয়ামী লীগকে রাজনৈতিকভাবে নিষিদ্ধ করতে হবে। এজন্য সংস্কার ও জুলাই প্রোক্লেমেশন বাস্তবায়ন চাহিদার শীর্ষে রয়েছে।

এদিকে, বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধনের আবেদনের সময়সীমা ৯০ দিন বাড়ানোর অনুরোধ জানিয়েছে এনসিপি। ইসির সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদের দপ্তরে এ সংক্রান্ত একটি চিঠি দেওয়া হয়েছে।

চিঠিতে এনসিপি ইসি সচিবকে অবগত করে জানায়, নির্বাচন সংক্রান্ত বর্তমান প্রচলিত আইনের মধ্যে থেকেই বিগত শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার ও তার আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশন ভোটবিহীন সংসদ সদস্য নির্বাচিত করা, জাল ভোট, রাতের ভোটসহ নানান অনিয়মের মাধ্যমে গত তিনটি জাতীয় নির্বাচনের আয়োজন করে।

একইভাবে শেখ হাসিনা ও তার দলীয় নির্দেশনা মোতাবেক ওই কমিশন সারাদেশে দলীয় প্রতীকে বিতর্কিত স্থানীয় সরকার নির্বাচনেরও অয়োজন করেছিল। বিদ্যমান আইনি কাঠামোর মধ্যেই নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকার সারাদেশে নির্বাচনব্যবস্থা ধ্বংস এবং ফ্যাসিবাদ কায়েম করেছিল। এমন পরিস্থিতিতে দেশের ছাত্র-জনতা বৈষম্য ও ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলন গড়ে তোলে এবং শেষ পর্যন্ত শেখ হাসিনা পালিয়ে যেতে বাধ্য হন।

Advertisement

আরও পড়ুন নিবন্ধনের সময় বাড়াতে ইসিতে আবেদন এনসিপির দ্রুত বিচার ও সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবে দেখতে চাই: নাহিদ ইসলাম ব্রিটিশ হাইকমিশনারের সঙ্গে এনসিপির নেতাদের সাক্ষাৎ

চিঠিতে এনসিপি জানায়, গণঅভ্যুত্থানের ধারাবাহিকতায় গণমানুষের প্রত্যাশার আলোকে প্রতিষ্ঠিত হয় এনসিপি। গণঅভ্যুত্থানের পর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার বিভিন্ন সংস্কারমূলক কার্যক্রম শুরু করে। এর মধ্যে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারের জন্য একটি কমিশন গঠন করা হয়। কিন্তু নির্বাচন কমিশনের মৌলিক সংস্কার এবং বিদ্যমান আইন যুগোপযোগী না করেই বর্তমান কমিশন রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের জন্য গত ১০ মার্চ একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। সংস্কারের আগেই ত্বরিত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ দেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিমণ্ডলে সমালোচনার জন্ম দেয়।

এছাড়া ২০০৮ সালের রাজনৈতিক দল নিবন্ধন বিধিমালা ও প্রাসঙ্গিক আইনের অধীনে রাজনৈতিক দল নিবন্ধন শর্তাবলিসমূহ সম্পূর্ণ অযৌক্তিক ও অসাংবিধানিক উল্লেখ করে এনসিপি জানায়, বর্তমান নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সুপারিশের আলোকে প্রয়োজনীয় আইন ও বিধি প্রণয়ন বা সংশোধনপূর্বক নিবন্ধন কার্যক্রম শুরু হওয়া দরকার। এছাড়া মৌলিক সংস্কারের আলোকে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন, নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন, বিদ্যমান নিবন্ধিত দলের নিবন্ধন হালনাগাদ করাও আবশ্যক।

এর আগে গত ১০ মার্চ নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন দিতে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে ইসি। দল হিসেবে নিবন্ধন পেতে আগামী ২০ এপ্রিল পর্যন্ত সময়সীমা বেঁধে দেয় কমিশন।

ওইদিন ঢাকার আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে ইসির জ্যেষ্ঠ সচিব আখতার আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, নতুন রাজনৈতিক দল হিসেবে যারা নিবন্ধিত হতে চান, তারা আগামী ২০ এপ্রিল পর্যন্ত নির্ধারিত শর্ত পূরণ করে ইসির কাছে আবেদন করতে পারবেন। ইসি সে আবেদন পর্যালোচনা করবে এবং নিবন্ধনের জন্য পরবর্তী যে প্রক্রিয়া আছে, তা সম্পন্ন করবে।

রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন সংক্রান্ত বিধিতে কোনো পরিবর্তন আনা হচ্ছে না বলেও জানান ইসি সচিব।

দলের নিবন্ধনের বিষয়ে জানতে চাইলে এনসিপির যুগ্ম-আহ্বায়ক ড. আতিক মুজাহিদ জাগো নিউজকে বলেন, ইসি নতুন রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের জন্য একটি ডেডলাইন দিয়েছে। আজ আমাদের একটা টিম ইসিতে গেছে। নতুন রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের জন্য আবেদনের সময়সীমা কমপক্ষে ৯০ দিন (তিন মাস) বাড়ানোর জন্য ইসিকে অনুরোধ করেছে এনসিপি। কারণ নির্বাচন কমিশন সংস্কার হওয়ার দরকার। এ জন্য সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়েছে। কমিশনের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন সংস্কার হতে হবে।

তিনি বলেন, বিদ্যমান আইনে আমরা চাইলেই নিবন্ধনের শর্ত-পূরণ করতে পারবো। কিন্তু আমরা আবেদন করবো না। নির্বাচন কমিশন সংস্কার হলেই নিবন্ধনের জন্য আবেদন করবো।

আরও পড়ুন বিএনপি বড় দল, তাদের কাছে মানুষের প্রত্যাশা অনেক বেশি ইসরায়েলের গণহত্যার প্রতিবাদে এনসিপির বিক্ষোভ বিনিয়োগ সম্মেলনে নিজেদের ‘বিনিয়োগ পরিকল্পনা’ জানাবে ৩ দল

এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক মুজাহিদুল ইসলাম শাহিন জাগো নিউজকে বলেন, নির্বাচন কমিশন সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়েছে। কমিশনের সুপারিশের ভিত্তিতে এটির সংস্কার করতে হবে। আমরা মনে করছি নির্বাচন কমিশন সংস্কারের আগেই নতুন রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের কার্যক্রম সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়ন না করার দুরভিসন্ধি হতে পারে।

বিদ্যমান আইনে এনসিপি দল হিসেবে নিবন্ধনের শর্তপূরণ করতে পারবে কিনা— এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনের বর্তমান যে আইন আছে সেই আইনের সবগুলো শর্ত আমরা পূরণ করতে পারবো।

এনসিপির এ নেতা বলেন, আওয়ামী লীগ মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে যুক্ত। এ অপরাধে আওয়ামী লীগের বিচার হতে হবে। এরপর দেশের জনগণ সিদ্ধান্ত দেবে আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে কি-পারবে না।

এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন জাগো নিউজকে বলেন, জুলাই প্রোক্লেমেশন এখনো ঘোষণা করা হয়নি। নির্বাচন কমিশন সংস্কারসহ যেসব সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়েছে তারা সংস্কার প্রস্তাব সরকারের কাছে জমা দিয়েছে। এখন ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় সংস্কার করতে হবে। তারপর নির্বাচন কমিশন একটা রোডম্যাপ ঘোষণা করবে। এরপরই নিবন্ধন কার্যক্রম শুরু হবে। এমনটি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু নির্বাচন কমিশন নিজেদের মতো করে নিবন্ধনের তারিখ ঘোষণা করেছে।

নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে থাকা তথ্য বলছে, দেশে বর্তমানে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সংখ্যা ৫৪টি। সর্বশেষ ২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে প্রথমবারের মতো রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন পদ্ধতি চালু করা হয়। আইন অনুযায়ী, নিবন্ধন পাওয়ার শর্তগুলোর মধ্যে দলের কেন্দ্রীয় কমিটিসহ একটি সক্রিয় কেন্দ্রীয় কার্যালয়, অন্তত এক-তৃতীয়াংশ প্রশাসনিক জেলায় কার্যকর কার্যালয় এবং অন্তত ১০০টি উপজেলা বা মেট্রোপলিটন (মহানগর) থানায় কার্যালয় থাকতে হবে এবং প্রতিটি কার্যালয়ে ন্যূনতম ২০০ ভোটার তালিকাভুক্ত থাকার শর্ত রয়েছে।

এনএস/এমএএইচ/জিকেএস