প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ও ইস্তাম্বুলের মেয়র একরেম ইমামোলুকে ১৯ মার্চ গ্রেফতারের পর তুরস্কে ভিন্নমতাবলম্বীদের ওপর রাজনৈতিক চাপ ব্যাপকভাবে বেড়েছে। দমনপীড়নের এই ঢেউ পৌঁছেছে দেশটির শিল্প জগতেও।
Advertisement
বিরোধীদের বয়কটের আহ্বানকে সমর্থন করার কারণে বিশেষ করে অভিনেতারা নানা আক্রমণের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হচ্ছেন।
বিরোধীদের প্রচারণার লক্ষ্য ছিল সরকার ঘনিষ্ঠ কোম্পানি, রাষ্ট্র-অনুমোদিত মিডিয়া ও এমনকি প্রেসিডেন্ট রিসেফ তাইয়্যেপ এরদোয়ানের সঙ্গে সম্পর্কিত ক্যাফে চেইনগুলোকেও বয়কট করা।
কৌশলটি কার্যকর বলে প্রমাণিত হয়েছে। এরদোয়ান সরকারের বেশ কয়েকজন প্রতিনিধি এরইমধ্যে বিরোধীদের বিরুদ্ধে ‘জাতীয় এবং দেশীয় ব্র্যান্ড এবং তুরস্কের অর্থনীতির ক্ষতি করার অভিযোগ করেছেন।
Advertisement
তুরস্কের অনেক প্রতিবাদকারীই সেলিব্রিটিদের কাছ থেকে স্পষ্ট সংহতি আশা করেছিলেন, বিশেষ করে সোশ্যাল মিডিয়ায়। সুপরিচিত কিছু তারকা এই প্রত্যাশা পূরণ করলেও অন্যরা নীরবই ছিলেন। তুর্কি রাষ্ট্রবিজ্ঞানী বার্ক এসেন ডিডাব্লিউকে বলেন, অভিনেতাদের রাজনৈতিক বিষয়ে মন্তব্য করতে হবে, এমনটা না। কিন্তু যেহেতু তুরস্ক বর্তমানে একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়ে রয়েছে, আমি মনে করি (মানুষের) এই প্রত্যাশা বোধগম্য।
এদিকে বয়কটের আহ্বানের পক্ষে স্পষ্ট অবস্থান নেওয়া বেশ কয়েকজন অভিনেতা কোনো না কোনোভাবে শাস্তির শিকার হয়েছেন। আইবুকে পুসাত, ফুরকান আন্দিচ এবং বোরান কুজুম পাবলিক ব্রডকাস্টার টিআরটি প্রযোজিত ধারাবাহিকে অভিনয় করতেন। বয়কটের আহ্বানের পর তাদের বরখাস্ত করা হয়। অভিনেত্রী বাসাক গুমুলচিনেলিওলুও প্রকাশ্যে পুসাতকে সমর্থন করে চাকরি হারিয়েছেন।
আরও দুই অভিনেতা রোজদা ডেমিরার ও আলিকান ইউচেসয় এর এক্স অ্যাকাউন্ট ব্লকড হয়ে যাওয়ায় তারা আর কোনো পোস্ট করতে পারছেন না। অভিনেতা চেম ইগিত উজুমোলুকে বয়কটের পক্ষে প্রকাশ্যে সমর্থন জানানোয় আটকও করা হয়েছিল। কিছুক্ষণ পরে তাকে মুক্তি দেওয়া হলেও এমন ঘটনা ‘ভয় দেখানোর জন্যই ঘটানো হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এই অভিনেতারা সবাই দর্শকদের কাছে তুমুল জনপ্রিয় নানা ধারাবাহিকে নিয়মিত অভিনয় করে আসছেন।
তুর্কি অভিনেতাদের সংগঠন এই অভিনেতাদের সমর্থনে সক্রিয় ভূমিকা রাখছে। এক বিবৃতিতে অভিনেতাদের সংগঠন জানিয়েছে, তুরস্কসহ সারা বিশ্বে শিল্পের ওপর চাপের ধরন পরিবর্তন হচ্ছে।
Advertisement
রাষ্ট্রবিজ্ঞানী বার্ক এসেনের মতে, এই পরিস্থিতির একটি ইতিবাচক দিকও রয়েছে। তিনি বলেন, ২৩ বছরের একেপি (এরদোয়ানের দল) শাসনের পরও তরুণ শিল্পীরা সরকারের বিরুদ্ধে জনসমক্ষে অবস্থান নেওয়ার সাহস করেছে, এটি সম্মানজনক।
এসেন মনে করেন, সম্ভাব্য পরিণতি সত্ত্বেও এই শিল্পীরা যে কথা বলছেন তা লক্ষণীয়। এরা এমন লোক নয় যারা নিয়মিত রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে কথা বলেন বা প্রকাশ্যে পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ করেন। তারা তরুণ, নতুন প্রজন্মের অন্তর্ভুক্ত। আমি মনে করি এটি তুরস্কের জন্য সুসংবাদ।
সমাজ বিজ্ঞানী আসলি দালগাল এভরেন মনে করেন যেহেতু সমগ্র সমাজই রাজনৈতিক মেরুকরণ ও চাপের শিকার, তাই দমন-পীড়নের এই নতুন ঢেউ প্রত্যাশিতই ছিল।
রাজনীতিকরণের বাইরেও তুরস্কের অভিনয় শিল্পটিতে নানা ধরনের সংকট রয়েছে। এভরেন বলেন, অভিনেতাদের অত্যন্ত দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করতে হয় এবং প্রায়শই ন্যায্য বেতন দেওয়া হয় না। এটি বিশেষভাবে হতাশাজনক যে কিছু বড় চরিত্র প্রতিভার ভিত্তিতে নয়, বরং রাজনৈতিক নৈকট্যের ভিত্তিতে বরাদ্দ করা হয়।
সরকার সমর্থকদের দাবি, অভিনেতাদের রাজনীতিতে জড়িত হওয়া উচিত নয়।
অভিনেতাদের ইউনিয়ন অবশ্য মনে করে, পুলিশ, বিচার বিভাগ এবং সেনাবাহিনী ছাড়া অন্য কোনো পেশা রাজনীতির বাইরে থাকবে বলে আশা করা যায় না। প্রত্যেক নাগরিকের রাজনৈতিকভাবে নিজেদের মত প্রকাশ করার অধিকার থাকা উচিত।
সূত্র: ডয়েচে ভেলে
এমএসএম