আন্তর্জাতিক

প্রথম দফার ‘গঠনমূলক’ বৈঠক শেষ, ফের আলোচনায় বসবে ইরান-যুক্তরাষ্ট্র

প্রথম দফার ‘গঠনমূলক’ বৈঠক শেষ, ফের আলোচনায় বসবে ইরান-যুক্তরাষ্ট্র

ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে তেহরান ও যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদলের মধ্যে প্রথম দফার বৈঠক শেষ হয়েছে। ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় শনিবারের ওই বৈঠক ‌‘গঠনমূলক পরিবেশে এবং পারস্পরিক শ্রদ্ধার ভিত্তিতে’ পরিচালিত হয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেছে, প্রধান আলোচকরা আলোচনাস্থল ত্যাগ করার সময় ওমানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর উপস্থিতিতে কয়েক মিনিট কথা বলেছেন।

Advertisement

দু’দেশের মধ্যে আগামী সপ্তাহগুলোতে আরও আলোচনার বিষয়ে দুপক্ষই সম্মতি জানিয়েছে। স্থানীয় সময় শনিবার (১২ এপ্রিল) বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে এই বৈঠক শুরু হয় বলে ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের খবরে বলা হয়েছে।

এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ওমানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর উপস্থিতিতে হওয়া এই বৈঠক শেষে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক দূত স্টিভ উইটকফ ও ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি।

যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা অবশ্য তাৎক্ষণিকভাবে ইরান থেকে প্রকাশিত এসব খবরের সত্যতা নিশ্চিত করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। দুই পক্ষের মধ্যে সামনাসামনি কথা হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। আলোচনা যে ভালো হয়েছে, তার ইঙ্গিতও পাওয়া যাচ্ছে।

Advertisement

ওমানের যে স্থানে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়, সে সম্পর্কে সুস্পষ্ট করে কিছু জানানো না হলেও দুই ঘণ্টার বেশি সময় ধরে এই আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে। বিকাল সাড়ে ৩ টার দিকে শুরু হয়ে ৫টা ৫০ মিনিটে বৈঠকটি শেষ হয়।

বৈঠক শেষে উইটকফকে বহনকারী গাড়িবহরটি ওমানের রাজধানী মাসকাটে ফিরে আসে। পরে সেটাকে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসের দিকে রওনা হতে দেখা যায়। প্রায় অর্ধ-শতাব্দী ধরে বৈরী সম্পর্ক টেনে নিয়ে আসার পর দুই দেশের মধ্যে এমন আলোচনা সত্যিই আশাব্যঞ্জক। তবে এই আলোচনার ঝুঁকিও রয়েছে।

একদিকে ডোনাল্ড ট্রাম্প হুমকি দিয়ে রেখেছেন, ইরান যদি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তিতে পৌঁছাতে ব্যর্থ হয়, তাহলে তেহরানের পারমাণবিক কর্মসূচি লক্ষ্য করে বিমান হামলা চালানো হবে। অন্যদিকে ইরানি কর্মকর্তারাও বারবার পাল্টা সতর্ক করে আসছেন যে, তাদের কাছে প্রায় অস্ত্র-গ্রেড মানের ইউরেনিয়ামের মজুদ রয়েছে, যা দিয়ে তারা পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করতে পারে।

শনিবার ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইসমাইল বাঘায়ি সামাজিক মাধ্যমে এক পোস্টে লেখেন, পরোক্ষ আলোচনা শুরু হয়েছে। এই আলোচনাটি ওমানের মধ্যস্থতায় তাদের পরিকল্পিত স্থানে অনুষ্ঠিত হবে যেখানে ইসলামিক রিপাবলিক অব ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিরা বসে ওমানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মাধ্যমে একে অপরের সঙ্গে নিজেদের দৃষ্টিভঙ্গি ও অবস্থান বিনিময় করবেন।

Advertisement

এর ঘণ্টাখানেক পর বাঘায়ি ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে হাজির হন এবং আলোচনা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, ইরানের উদ্দেশ্য খুবই স্পষ্ট- ইরানের জাতীয় স্বার্থ রক্ষা করাই আমাদের একমাত্র লক্ষ্য। কূটনীতির ব্যাপারে আমরা সত্যিকারের ও অকৃত্রিম সুযোগ দিচ্ছি, যাতে সংলাপের মাধ্যমে আমরা একদিকে পরমাণু ইস্যুতে এগিয়ে যেতে পারি, অন্যদিকে আমাদের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিষয়টিতেও একটি সমাধানের দিকে যেতে পারি।

তিনি আরও বলেন, দেখুন, এটা কেবল শুরু। সুতরাং এই পর্যায়ে উভয় পক্ষই যে কেবল নিজেদের মৌলিক অবস্থানের বিষয়গুলো উপস্থাপন করবে, এটাই স্বাভাবিক। ফলে এই দফায় আলোচনা দীর্ঘ হবে বলে আমরা আশা করছি না।

এর আগে ইরানি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন আরাঘচি। সে সময় তিনি বলেন, যদি উভয় পক্ষের যথেষ্ট সদিচ্ছা থাকে, তাহলে আমরা একটি সময়সূচি নির্ধারণ করবো। তবে এ ব্যাপারে এখনই কথা বললে তা বাড়াবাড়ি হয়ে যাবে।

নিষেধাজ্ঞা শিথিল ও ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণই প্রধান বিষয়ইরানের সংকটে থাকা অর্থনীতিকে স্বস্তি দিতে নিষেধাজ্ঞা শিথিল করার প্রস্তাব দিতে পারে যুক্তরাষ্ট্র, তবে ইরান কতটা ছাড় দিতে রাজি হবে- তা এখনও স্পষ্ট নয়।

২০১৫ সালের পরমাণু চুক্তি অনুযায়ী, ইরান ৩ দশমিক ৬৭ শতাংশ পর্যন্ত ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ উপাদান মজুত রাখতে পারে। তবে বর্তমানে তেহরানের ইউরেনিয়ামের মজুদ এমন পর্যায়ে আছে যে তারা চাইলে একাধিক পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করতে পারে। এছাড়া তাদের কাছে ৬০ শতাংশ পর্যন্ত ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ উপাদানও রয়েছে, যা অস্ত্র-গ্রেড মান থেকে প্রযুক্তিগতভাবে মাত্র কয়েক ধাপ দূরে।

আরও পড়ুন: যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে উচ্চ পর্যায়ের পারমাণবিক আলোচনা আজ বাণিজ্যযুদ্ধে চীন কেন ট্রাম্পের নিশানায়? যুক্তরাষ্ট্রের ১২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপকে যেভাবে দেখছে চীন

বিশ্লেষকদের ধারণা, নতুন আলোচনায় ইরান অন্তত ২০ শতাংশ পর্যন্ত ইউরেনিয়াম মজুদ করতে চাইবে এবং একটি বিষয় তারা কখনোই করবে না; তা হলো, তাদের পারমাণবিক কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ করা।

টিটিএন