হাত-পা বিহীন অবস্থায় জন্ম। সন্তানের এমন শারীরিক প্রতিবন্ধকতায় চোখে অন্ধকার দেখতে থাকেন বাবা-মা। সন্তানের ভবিষ্যতের কথা ভেবে স্থির থাকতে পারতেন না তারা। এখন সেই সন্তানই দেখাতে শুরু করেছে একের পর এক চমক।
Advertisement
প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী ও জেএসসি পরীক্ষায় কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখে এবার এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে যশোরের মণিরামপুরের মেয়ে লিতুন জিরা। তার দুই হাত ও পা নেই।
মণিরামপুর উপজেলার গোপালপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে লিতুন জিরা। উপজেলার নেহালপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে পরীক্ষা দিচ্ছে সে।
বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) পরীক্ষার প্রথম দিনে ইউএনও নিশাত তামান্না কেন্দ্র পরিদর্শনে গিয়ে লিতুন জিরাকে দেখে অভিভূত হন। তিনি লিতুন জিরার এগিয়ে যাওয়ার পথে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দেন।
Advertisement
যশোরের মণিরামপুর উপজেলার সাতনল খানপুর গ্রামের হাবিবুর রহমান ও জাহানারা বেগম দম্পতির দুই ছেলেমেয়ের মধ্যে ছোট লিতুন জিরা। বড় ছেলে ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছেন।
লিতুন জিরা পিইসি (প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা) ও জেএসসি পরীক্ষায় কৃতিত্বের স্বাক্ষর, প্রাথমিকে বৃত্তি লাভ, শ্রেণির সেরা শিক্ষার্থীর পাশাপাশি সাংস্কৃতিক চর্চায়ও রেখেছে চমক জাগানো অবদান।
২০২৩ ও ২০২৪ সালে পরপর দুই বছর উপজেলা পর্যায় মেধা অন্বেষণ প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন, ২০২৩ সালে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের রচনা প্রতিযোগিতায় জেলা পর্যায়ে চ্যাম্পিয়ন, একই সালে জাতীয় শিশু-কিশোর প্রতিযোগিতায় গোল্ড মেডেল অর্জনসহ একই বছরের ৪ জানুয়ারি খুলনা বেতারে গান গাওয়ার সুযোগ পায় লিতুন জিরা।
লিতুন জিরার মা জাহানারা বেগম আবেগতাড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘জন্মের পর মেয়ে লিতুন জিরার ভবিষ্যত নিয়ে চিন্তায় অনেক রাত চোখের পানিতে ভাসিয়েছি। যার দুই হাত-পা নেই; সেই মেয়ে বড় হয়ে কিই-বা করতে পারবে এমন অজানা শঙ্কায় আতঁকে উঠতাম। বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মেয়ের পড়ালেখার প্রবল আগ্রহ এবং মেধার স্বাক্ষরতায় সেই আশঙ্কা কেটে গেছে।’
Advertisement
বাবা কলেজশিক্ষক হাবিবুর রহমান জানান, তিনি যে কলেজে চাকরি করেন, দীর্ঘ ১৯ বছরেও সেটি এমপিওভুক্ত হয়নি। তারপরও ছেলেমেয়েদের কখনো অভাব বুঝতে দেননি। হাঁটা-চলা করতে না পারা লিতুন জিরার সেই শিশু বয়স থেকে কর্দমাক্ত পথ মাড়িয়ে ঝড়-বর্ষা মাথায় করে বিদ্যালয়ে নিয়ে গেছেন। মেয়ের জন্য সবার কাছে তিনি দোয়াপ্রার্থী।
মণিরামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নিশাত তামান্না বলেন, সমাজে এমন শিশু বিরল। লিতুন জিরার অদম্য মেধা ও ইচ্ছাশক্তির কথা শুনে অভিভূত হয়েছি। তার এগিয়ে যাওয়ার পথে সবধরনের সহযোগিতা করা হবে।
মিলন রহমান/এসআর/জেআইএম