ময়মনসিংহের ত্রিশালে ‘বিয়ের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায়’ আমেনা আক্তার পলি নামের এক শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মামলা করার অভিযোগ উঠেছে সাবেক এক ছাত্রদল নেতার বিরুদ্ধে। অপর একটি মামলায় তার বাবাকেও আসামি করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়েছে।
Advertisement
আমেনা আক্তার পলি জেলার ভালুকা উপজেলার মল্লিকবাড়ী ইউনিয়নের মামরিশপুর গ্রামের আবু সাঈদ ওরফে ছাইদুল ইসলামের মেয়ে। তিনি পার্শ্ববর্তী উপজেলা ত্রিশালে অবস্থিত জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাককানইবি) বাংলা ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী।
মামলার বাদীর নাম আশিকুর রহমান। তিনি ভালুকা উপজেলার ভরাডুবা গ্রামের চাঁন মিয়ার ছেলে।
আশিকুর রহমান একই বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক। তিনি ২০০৬-০৭ শিক্ষাবর্ষের বাংলা ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী।
Advertisement
গত ৭ মে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. জাহাঙ্গীর আলমের বরাবর এ-সংক্রান্ত লিখিত অভিযোগ করে হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানান পলি নামের ওই শিক্ষার্থী। রোববার (১১ মে) ঘটনাটি জানাজানি হয়।
আমেনা আক্তার পলি বলেন, ‘২০২১ সালের শেষদিকে আশিকুর রহমানের সঙ্গে আমার পরিচয় হয়। এরপর তিনি আমাকে পারিবারিকভাবে বিয়ের প্রস্তাব দেন। এতে আমার পরিবার সম্মত হলে হঠাৎ আশিকুর রহমান আমার সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন। এ ঘটনার কিছুদিন পর পারিবারিকভাবে অন্যত্র আমার বিয়ের দিনক্ষণ ঠিক হয়। বিষয়টি জানতে পেরে আশিকুর আবারও বিয়ের প্রস্তাব দেন। কিন্তু এবার আমার পরিবার রাজি না হওয়ায় তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে আমাকে এবং আমার পরিবারকে মামলায় ফাঁসানোর হুমকি দেন। মূলত ওই ঘটনার জের ধরেই ভালুকা থানার একটি রাজনৈতিক মামলায় আমার বাবাকে আসামি করা হয়েছে। একইসঙ্গে জুলাই আন্দোলনে হামলার ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ এনে অপর একটি মামলায় আমাকে আসামি করা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি বা আমার পরিবারের কেউ কখনো আওয়ামী লীগ বা ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত না। মূলত বিয়ের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় মিথ্যা অভিযোগ তুলে আমাকে ছাত্রলীগ বানিয়ে এবং আমার বাবাকে আওয়ামী লীগ নেতা বানিয়ে মামলায় আসামি করা হয়েছে।’
বক্তব্য জানতে চাইলে আশিকুর রহমান বলেন, বিয়ের প্রস্তাব দেওয়া অন্যায় কিছু নয়। জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে হামলায় জড়িত অনেকের বিরুদ্ধেই মামলা করেছি। কাউকে হয়রানি করা আমার উদ্দেশ্য নয়।
Advertisement
এ বিষয়ে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমেনা আক্তার পলির অভিযোগ পেয়েছি। তবে এ নিয়ে আমার কিছুই করার নেই।
এরআগে গত ৪ মে ময়মনসিংহের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (দ্রুত বিচার) আদালতে বাদী হয়ে মামলার আবেদন করেন আশিকুর রহমান। মামলায় জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগ, আওয়ামী লীগপন্থি শিক্ষক ও কর্মকর্তাসহ ১৩০ জনের নাম উল্লেখ করে আরও ৭০-৮০ জনকে অজ্ঞাতপরিচয় আসামি করা হয়।
মামলায় আমেনা আক্তার পলিকে ৬৯ নম্বর আসামি উল্লেখ করে বিগত জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে হামলার ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ তোলা হয়। ওইদিন বিচারক মোছা. নাসিমা খাতুন মামলাটি আমলে নিয়ে ময়মনসিংহের পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্তের নির্দেশ দেন।
মামলার উল্লেখযোগ্য আসামিরা হলেন বঙ্গবন্ধু কর্মকর্তা পরিষদের সভাপতি ও সহকারী রেজিস্ট্রার জাকিবুল হাসান রনি, বঙ্গবন্ধু কর্মকর্তা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও উপপরিচালক মাহমুদুল আহসান লিমন, প্রকৌশল শাখার প্রকল্প পরিচালক (পিডি) জোবায়ের হোসেন, অতিরিক্ত পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক আব্দুল হালিম, সহকারী রেজিস্ট্রার ইব্রাহিম কবির শান্ত, সহকারী রেজিস্ট্রার এনায়েত কবির আরিফ, উপ রেজিস্ট্রার রেবেকা সুলতানা, সংগীত বিভাগের অধ্যাপক ড. মোশাররত শবনম, সহকারী অধ্যাপক হীরক মুশফিক, সহকারী অধ্যাপক তারিকুল ইসলাম, অধ্যাপক ড. সেলিম আল মামুন, অধ্যাপক ড. উজ্জ্বল কুমার, অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. নজরুল ইসলাম, লোক প্রশাসন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সঞ্জয় কুমার মুখার্জী, সহযোগী অধ্যাপক ড. শফিকুল ইসলাম, সহকারী অধ্যাপক নাহিদুল ইসলাম, সহযোগী অধ্যাপক রেজুয়ান আহমেদ, মাসুদ রানা, অধ্যাপক ড. মোল্লা আমিনুল, ফিন্যান্স বিভাগের অধ্যাপক ড. তরিকুল ইসলাম, চারুকলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মাসুম হাওলাদার, নৃবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জুয়েল মোল্লা, বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল ইসলাম রাকিব, সাবেক সাধারণ সম্পাদক তারিকুল ইসলাম রানা, সাবেক সভাপতি সাব্বির আহমেদ, সাবেক সভাপতি নজরুল ইসলাম বাবু, সাবেক সভাপতি আল মাহমুদ কায়েস, সহ-সভাপতি জয় চক্রবর্তী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সজিব চন্দ্র দাস, আরাফাত রহমান সানি, সহ-সাধারণ সম্পাদক রিয়েল সরকার, বঙ্গবন্ধু পরিষদের উপদেষ্টা হুমায়ুন কবির প্রমুখ।
মামলার নথি সূত্রে জানা যায়, কোটাবিরোধী আন্দোলন দমনে গত বছরের ৩ আগস্ট ‘হাসিনায় আস্থা’ ব্যানারে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ-সমাবেশ করেন ছাত্রলীগ ও আওয়ামীপন্থি শিক্ষক ও কর্মকর্তারা। ওই সমাবেশে তারা শিক্ষার্থীদের আন্দোলন প্রতিহতের ঘোষণা দিয়ে ক্যাম্পাসে সশস্ত্র মহড়া দেন। এর পরদিন ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচিতে যাওয়ার প্রস্তুতিকালে আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি ও ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায় ছাত্রলীগ। এতে কমপক্ষে ১২ জন শিক্ষার্থী আহত হয়।
এসময় আসামিরা বেশ কিছু মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি বাস ভাঙচুর করেন। এ ঘটনার জড়িতদের বিচারের আওতায় আনতে দেশের পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে মামলা করা হয়েছে উল্লেখ করা হয়েছে।
কামরুজ্জামান মিন্টু/এসআর/জিকেএস