রক্ষণাবেক্ষণ ও সংস্কারের অভাবে অকার্যকর হয়ে পড়েছে খুলনার তেরখাদার স্লুইস গেটগুলো। খালগুলোরও মৃতপ্রায় অবস্থা। এতে পানির প্রবাহ না থাকায় ও বিভিন্ন স্থানে জলাবদ্ধতা তৈরি হওয়ায় ধানসহ বিভিন্ন ফসল চাষ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কৃষক।
Advertisement
জানা যায়, তেরখাদা উপজেলার মোট আয়তন ১৮ হাজার ৭৬৯ হেক্টর। উপজেলায় ৬টি ইউনিয়নে প্রায় দেড় লাখ মানুষ বসবাস করেন। অঞ্চলটির প্রায় ৮০ শতাংশ মানুষ কৃষি কাজ করেন। অঞ্চলটি মৌসুমি জলবায়ুর অন্তর্গত গঙ্গা পললভূমি, গঙ্গা কটাল পললভূমি ও গোপালগঞ্জ-খুলনা জৈব মাটির বিলাঞ্চল নিয়ে গঠিত। চাষাবাদ প্রধানত বৃষ্টি নির্ভর হলেও বর্তমানে সেচের মাধ্যমে আধুনিক জাতের বোরো ধানের আবাদ করছেন এ অঞ্চলের কৃষকরা।
উপজেলার পানির প্রধান উৎস নদী ও খাল। বছরের তিন-চার মাস লবণাক্ত থাকে এসব নদী-খালের পানি। এসময় লবনাক্ত পানির প্রবাহ আটকাতে স্লুইস গেটগুলো মুখ্য ভূমিকা পালন করে। খালগুলো নদীর সঙ্গে যুক্ত স্লুইস গেটর মাধ্যমে। কিন্তু খাল ও স্লুইস গেটের সংস্কার না হওয়ায় হুমকির মুখে পড়েছে এ অঞ্চলের চাষাবাদ।
কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, তেরখাদায় বোরোর আবাদ বেশি হয়। গত বছর ৮ হাজার ৪৬৫ হেক্টর ধান উৎপাদন হয়েছে। এ বছর ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৮ হাজার ৯৪৯ হেক্টর। উপজেলায় ৩৭টি খাল ও ২১টি স্লুইস গেইট রয়েছে। এসব খাল ও স্লুইস গেটের ওপর নির্ভর করে কৃষকরা চাষাবাদ করেন। এর মধ্যে ১৪টি খাল প্রায় মৃত ও ৯টি স্লুইস গেট সংস্কারের অভাবে অকেজো হয়ে আছে। এতে চাষাবাদের জন্য কৃষকরা সঠিকভাবে পানি পাচ্ছেন না।
Advertisement
স্থানীয় কৃষকরা জানান, খাল ও স্লুইস গেটের মাধ্যমে ক্ষেতে পানি সরবরাহের কাজ চলে। জোয়ার-ভাটার সময় ও লবনাক্ত পানির সময় এসব স্লুইস গেট ব্যবহার করে কৃষিকাজ করা হয়। কিন্তু অধিকাংশ খাল ও স্লুইস গেট দীর্ঘদিন ধরে সংস্কারের অভাবে অকোজো হয়ে আছে। এ জন্য ভবিষ্যতে কৃষিকাজে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হতে পারে।
কৃষক হেমন্ত দাস বলেন, তেরখাদায় অনেক খাল দিয়ে নদীর পানি আসে। লবনাক্ত পানি প্রবাহের সময় স্লুইস গেট বন্ধ করে আমরা বৃষ্টির পানি দিয়ে চাষাবাদ করি। কিন্তু স্লুইস গেটগুলোর অবস্থা খারাপ হওয়ায় আমাদের নানা জটিলতায় পড়তে হচ্ছে।
কৃষক দিপজয় মণ্ডল বলেন, কৃষিকাজে খালের পানির প্রয়োজন হয়। আবার লবনাক্ত মৌসুমে খালের পানি আটকে আমরা সংগ্রহ করা বৃষ্টির পানি ব্যবহার করি। স্লুইস গেট অনেকগুলোই নষ্ট। অনেক খালও মরে যাচ্ছে। এসব খাল শুকিয়ে গেলে নদীর পানি এ অঞ্চলে আসবে না। তখন মারাত্বক ভোগান্তি হবে। আরও পড়ুন:
অপরিকল্পিত খাল খননে ভাঙছে সড়ক নন্দীপাড়া খালে দুই শতাধিক অবৈধ স্থাপনা ধান চাষে বেড়েছে প্রযুক্তির ব্যবহারকৃষক ছলেমান হাওলাদার বলেন, ইছামতি, ছাগলাদহ ও তেরখাদা খালের গোলারগাতি ও মিরের কোদলা স্লুইস গেটের কোনো অস্তিত্ব নেই। ধীরে ধীরে পানির প্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে। যার কারণে এখন কৃষিকাজে অনেক সমস্যা হচ্ছে।
Advertisement
এ বিষয়ে তেরখাদা উপজেলা কৃষি অফিসার শিউলি মজুমদার বলেন, এ অঞ্চলে কৃষিকাজে খাল ও স্লুইস গেটগুলো গুরুপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সংস্কারের প্রয়োজন এমন খাল ও স্লুইস গেটের একটি তালিকা প্রস্তুত করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে। শিগগিরই সংস্কার কাজ শুরু হবে।
এমএন/এমএস