রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গেই দেশে অস্থিতিশীলভাবেই বেড়েছে কিশোর অপরাধের প্রবণতা। আইনশৃঙ্খলার অবস্থাও নড়বড়ে। সার্বিক বিষয় প্রভাবিত করছে জাতীয় জীবনকে। এই সামাজিক সংকট নিয়েই আলাপচারিতায় মতামত জানিয়েছেন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। পাঠকের জন্য তা তুলে ধরেছেন তাহমিদ হাসান।
Advertisement
কিশোর গ্যাং সামাজিক ব্যাধিশাহিনুর সিদ্দিকীডিপার্টমেন্ট অব মেডিক্যাল ফিজিক্স অ্যান্ড বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, গণ বিশ্ববিদ্যালয়
কিশোর গ্যাং বাংলাদেশের সাম্প্রতিক সময়ের একটি বড় সমস্যা। কিশোর গ্যাংয়ের অপরাধ প্রবণতা সাম্প্রতিক সময়ে একটি সংকটে পরিণত হয়েছে। চাঁদাবাজি, ছিনতাই, মারামারি, মাদক সেবন ও সাপ্লাই, রাজনৈতিক দল দ্বারা অপব্যবহার, সাইবার অপরাধের মত ছোটবড় বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে জড়িত হয়ে যাচ্ছে। এই সামাজিক ব্যাধির নানাবিধ কারণ আছে। যেমন পারিবারিক অবহেলা ও দারিদ্র, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অপব্যবহার, শিক্ষা থেকে দূরে থাকা, ধর্মীয় অনুশাসন সম্পর্কে জ্ঞান না থাকা ইত্যাদি। এই সংকট থেকে উত্তরণের উপায়ই হবে দেশের সাধারণ মানুষের জন্য মুক্তির পথ। কিশোর গ্যাং অপরাধ প্রবণতা থেকে বের হতে হলে সর্বপ্রথম প্রয়োজন পারিবারিক রক্ষনাবেক্ষণ ও পরিচর্যা, ইন্টারনেট ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সঠিক প্রয়োগ, নৈতিক শিক্ষার প্রসার, এছাড়া রাষ্ট্রীয়ভাবে আইনের কঠোর প্রয়োগ। কিশোর গ্যাং একটা সামাজিক ব্যাধি। এই ব্যাধি দেশের সব সমস্যার সূত্রপাত করে। কিশোররা দেশের সম্পদ। এই সম্পদ রক্ষার দায়িত্ব শুধু রাষ্ট্রের একার না, পরিবার, সমাজ এবং সবার।
অর্থের সরল জোগানের অভাবেই গ্যাং কালচারশেখ মোঃ সিফাত আল ফিদাআইন অনুষদ, নটরডেম বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ
Advertisement
৫৬,০০০ বর্গমাইলের সীমানায় মূলত দুই ধরনের অপরাধ এবং অপরাধী লক্ষনীয়, প্রথমত হোয়াইট কলার ক্রাইম ও ক্রিমিনাল এবং দ্বিতীয়ত সরাসরি অপরাধের সঙ্গে অংশ নেওয়া ব্যক্তিবর্গ। এই দুই ধরনের মধ্যেই রয়েছে আবার একটি গোপন কিন্তু সর্বসম্মুখে আঁতাত। এই আঁতাতের ফলে দ্বিপাক্ষিক লাভ বিরাজমান, কীভাবে? প্রথমে উল্লেখিত অপরাধীর দরকার অর্থ, প্রতিপত্তি, প্রভাব এবং দ্বিতীয় পর্যায়ে উল্লেখিত অপরাধীর প্রয়োজন যতসামান্য অর্থ, মাদকসেবনের জন্য। এই মাদকসেবীদের একটা বিরাট অংশ ১৩-২০ বছর বয়সী। এদের মূলত ৭০ শতাংশ জড়িত থাকে অপরাধ চক্রের সঙ্গে শুধু মাদকের অর্থ যোগান দিতে। তারাই আবার গ্যাং কালচারের ধারক। প্রথমত, সামাজিক অস্থিতিশীলতা, শিক্ষাখাতের শোচনীয় দশা এবং চাকরির বাজারে মন্দা একইসঙ্গে অস্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতি। কিশোরদের অপরাধ প্রবণতা ঠেকাতে হলে সুষ্ঠু কর্মমুখী শিক্ষা ব্যবস্থার প্রণয়ন, কর্মমুখী শিক্ষা ব্যবস্থার ওপর ভিত্তি করে কর্মক্ষেত্রের যোগান এবং সুষ্ঠু রাজনৈতিক পরিবেশের প্রচলন নিশ্চিত করণ।
উঠতি বয়সী তরুণরাই ঝরে পড়ছেতাজরীন তাহতিয়াল মীমব্যাচেলর অফ ফটোগ্রাফি, পাঠশালা সাউথ এশিয়ান মিডিয়া ইনস্টিটিউট
কিশোর গ্যাং খুবই প্রচলিত শব্দ। ক্রমবর্ধমান এই অপরাধ চক্রকে নিয়ন্ত্রণ করতে আমরা বারবার ব্যর্থ হচ্ছি। মূলত রাজনৈতিক জনবলের জোগানের খাতিরেই কিশোর গ্যাংয়ের আবির্ভাব। দুঃখজনকভাবে এই প্রাদুর্ভাব ভয়ংকর আকার নিচ্ছে। বিভিন্ন পাড়া মহল্লায় ছিনতাই চুরি ইভটিজিংসহ বিভিন্ন অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে এই কিশোর গ্যাং দ্বারাই। এক্ষেত্রে পারিবারিক শিক্ষা গুরুত্ব বহন করে। উঠতি বয়সী তরুণ যাদের বেশিরভাগ অংশ ৯ম/১০ম শ্রেণীর শিক্ষার্থীরাই এই গ্যাং কালচারের দিকে হুমড়ি খেয়ে পড়ছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠন বা এলাকাভিত্তিক কথিত ‘বড় ভাই’ যাদের প্রভাবক এবং এর নিমিত্তে আছে ক্ষমতার লালসা। নতুন রাজনৈতিক-সামাজিক বন্দোবস্তের মধ্য দিয়েই এর লাগাম টানা উচিত। নতুবা হাজার হাজার তরুণদেরকে কিশোর গ্যাং নামক ভয়ংকর অপরাধে তলিয়ে যেতে দেখতে হবে দেশের মানুষকে।
পরিবারকেই প্রথম এগিয়ে আসতে হবেনাবিল আহমেদ রাফিযন্ত্র প্রকৌশল অনুষদ, আহসানউল্লা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
Advertisement
কিশোর গ্যাং একটা সংঘবদ্ধ চক্র। জীবননাশি বিভিন্ন সুলভ অস্ত্র এবং মাদকের কারবারিই যাদের নৈমিত্তিক কার্যপন্থা। পরিবারের থেকে কিশোরদের দূরত্ব তৈরিই এই সমস্যার মূল কারণ। রাজধানীসহ বড় বড় ব্যস্ত শহরগুলোতে ছেলে-মেয়েরা পরিবারের সহচার্য না পায়েই বিষণ্নতা ছাড়তে বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে মিশতে শুরু করেন। সিদ্ধান্ত হীনতায় ভুলচক্রের কাছে এক সময় আবদ্ধ হয়েই পরবর্তীতে চিহ্নিত অপরাধে মিশে যায় এই তরুণরা। সবচেয়ে বড় সমস্যা রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা এবং ক্ষমতার প্রতি লোভ। একইসঙ্গে শিক্ষাব্যবস্থার ভয়াবহ ধ্বস এই ঘটনা সমূহের অন্যতম নিয়ামক। প্রশাসনিক দূর্বলতা সব অপরাধ চক্রকে সক্রিয় কার্যক্রমের সহায়ক হিসেবে উপনীত হয়। দীর্ঘ সময়ের রাজনৈতিক ক্ষমতা এককেন্দ্রিকরণ এবং মাদকের সহজলভ্যতা কিশোর অপরাধের অলঙ্কার হিসেবে কাজ করেছে। পালাবদলের এই সময়ে সর্বস্তরের সুচিন্তিকদের এগিয়ে আসতে হবে। পারিবারিক ভাবেই এই ভয়াবহতা দমনের উদ্যোগ নিতে হবে। একইসঙ্গে রাষ্ট্রযন্ত্রের সরাসরি হস্তক্ষেপে শিক্ষা এবং প্রশাসনিক কাঠামোর গঠনগত পরিবর্তন সাধন করা সময়ের দাবী।
আরও পড়ুন সভ্য জাতিতে পরিণত হতে বইপড়ার বিকল্প নেই: জাকিয়া রায়হানা বিশ্বজুড়ে মাহে রমজানের ঐতিহ্যকেএসকে/জিকেএস